মিলল মধ্যযুগীয় কফিনবন্দি মহিলা-কঙ্কাল, পরিচয় নিয়ে ধন্দ

এক সময় ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছিল গ্রে ফ্রায়ার্স ফ্রায়ারি গির্জা। সে কথা হয়তো ভুলতেই বসেছিলেন ইংল্যান্ডের মানুষ। তবে ওই এলাকাই ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছিল। কারণ কয়েক শতক আগে সেখানেই সমাহিত করা হয়েছিল ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় রিচার্ডকে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লন্ডন শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৫ ০১:১৫
Share:

সেই রহস্যময় কফিন।

এক সময় ইংল্যান্ডের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছিল গ্রে ফ্রায়ার্স ফ্রায়ারি গির্জা। সে কথা হয়তো ভুলতেই বসেছিলেন ইংল্যান্ডের মানুষ। তবে ওই এলাকাই ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছিল। কারণ কয়েক শতক আগে সেখানেই সমাহিত করা হয়েছিল ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় রিচার্ডকে।

Advertisement

তবে ২০১২ সালে ফের তাজা হয়ে ওঠে স্মৃতি। ওই এলাকা থেকেই উদ্ধার হয়েছিল তৃতীয় রিচার্ডের সমাধিটি। আর ঠিক তার এক বছর পর দ্বিতীয় বার খননকার্যের সময় তার কিছু দূরেই পাওয়া গিয়েছিল কারুকার্যমণ্ডিত একটি কফিন। প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং গবেষক মহল ভেবেছিল, হয়তো কোনও মধ্যযুগীয় রাজা কিংবা খ্রিস্টান ভিক্ষুর দেহাংশ শায়িত রয়েছে কফিনে। তবে সেটি খোলার পর তাজ্জব গোটা গবেষক মহল। কারণ কারুকার্যমণ্ডিত ওই কফিনের ভিতরে রয়েছে আর একটি কফিন। ভিতরের কফিনটিতে আবার একটি ক্রুশবিদ্ধ যিশুমূর্তি খোদাই করা ছিল। তার নীচেই শায়িত ছিল একটি কঙ্কাল।

অবশ্য গবেষণার পর জানা যায়, ওই দুই স্তর বিশিষ্ট কফিনের মধ্যে যে কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছিল, সেটি এক বয়স্ক উচ্চ বংশমর্যাদাসম্পন্ন মহিলার কঙ্কাল। গত রবিবার ওই গবেষণার রিপোর্ট প্রকাশ করে এমনটাই দাবি করেছেন গবেষক দল।

Advertisement

তবে কফিনে থাকা মহিলা কঙ্কালটির পরিচয় নিয়ে যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে। কিছু কিছু শিক্ষাবিদ মনে করছেন, ওই মহিলা উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য ছিলেন। তিনি সম্ভবত গির্জার পৃষ্ঠপোষকও ছিলেন। কফিনটি খুলে মহিলার হাড়গোড় পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা গিয়েছে, সারা জীবন ভাল খাওয়া দাওয়া করেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে গবেষকরা জানান, ওই পরীক্ষায় তাঁর সামুদ্রিক মাছ-সহ বিভিন্ন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাসের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। ফলে এর থেকেই তাঁদের ধারণা, তিনি যথেষ্ট বিত্তশালী পরিবারের মহিলা। না হলে মাছ-মাংসের মতো দামী খাবার খাওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না।

২০১৩ সালের অগস্টে খননকার্যের সময় বিশাল কারুকার্যসম্বলিত চুনাপাথরের একটি শবাধারের মধ্যে থেকে কফিনটি পাওয়া গিয়েছিল। পরে অনেক গবেষণার পর প্রকাশিত হয়, ওই কফিনের ভিতর যে কঙ্কালটি রয়েছে, সেটি বয়স্ক মহিলার। প্রত্নতত্ত্ববিদরা মনে করছেন, সম্ভবত ১২৫০ খ্রিষ্টাব্দে ওই গির্জা তৈরির কাজ শেষ হওয়ার কিছু পরেই ওই মহিলাকে সমাহিত করা হয়েছিল।

ওই খননকার্যের সময়ই মধ্যযুগীয় নিদর্শনসম্বলিত ওই এলাকা থেকে সব মিলিয়ে ১০টি শবাধার উদ্ধার করা হয়েছিল। তবে ৪টি কফিন খোলা হয়েছে। বাকিগুলি এখনও ধরা হয়নি। ওই দশটি কফিনের মধ্যে তৃতীয় রিচার্ডের কফিনটি ছাড়া বাকিগুলিতে মহিলাদের কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছিল।

যাঁর নেতৃত্বে মধ্যযুগীয় ওই গির্জার এলাকায় খননকার্য হয়েছিল, সেই ম্যাথিউ মরিস জানালেন, অন্যান্য মঠ ও গির্জার খননকার্যে আবিষ্কৃত বেশির ভাগ কফিনেই মহিলাদের কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছে। তিনি আরও জানান, মধ্যযুগীয় বহু নিদর্শন এখনও মাটির তলায় শায়িত। খুব শীঘ্রই ওই এলাকায় আরও খনন কাজ হবে। যার ফলে পাওয়া যাবে ওই সময়ের বহু পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন