আমার পুজোর একটা হৃদয়বিদারক ঘটনা হল, আমার বর ঋষি আর আমার কোনও দিন পুজোয় প্রেম করা হল না। আমরা এখন ফার্ন রোডের বাসিন্দা। আমি তার আগে ডোভার লেনে থাকতাম। কয়েক মাসের জন্য ফার্ন রোডে থাকতে এসে ঋষির সঙ্গে প্রেমটা ঘটে গিয়েছিল আর কী! সে ’৯৬-’৯৭ হবে। পুজোর সময় ঋষির সঙ্গে ঘোরাঘুরির প্রেমটা আর হল না। তার আগেই বিয়েটা হয়ে গেল।
হৃদয়বিদারক ঘটনাটা কী, বলি। তখন আমাদের প্রেম-পর্বের প্রথম বছর। খুব ইচ্ছে, পুজোয় এক সঙ্গে প্রেম করতে বেরব। এ দিকে মুম্বইয়ে থিয়েটারের শো। সায়ক-এর সঙ্গে শো করতে গেলাম। সেবার মাত্র তিন দিনের পুজো ছিল। তো আমাদের কলকাতা ফেরার ট্রেন এত বেশি ঘন্টা লেট্ করেছিল যে, এখানে পৌঁছতে-পৌঁছতেই পুজো শেষ! ফলে হৃদয় ভেঙে খান খান।
তবে ঋষি ছাড়াও আমার অনেক প্রেম আছে। ওরও আছে তেমন। আমি তো মান্না দে-র সঙ্গেও মনে মনে প্রেম করেছি। আমার মনে হয়, ওই সময় যদি জন্মাতাম, মান্না দে আমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারতেন না। আসলে আমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে দিতামই না।
মান্না দে আমার পেন-ফ্রেন্ড ছিলেন। ওঁর প্রচুর চিঠি আছে আমার কাছে। অনেক ছবি আছে। একবার পুজোয় উনি একটা গান করলেন, 'চিঠি লিখে ভুলে গেলে জুড়ে দিতে খাম..'! আমি মনে মনে নিজেকে বললাম, এই গান মান্না দে নিশ্চয়ই আমাকে ভেবে গেয়েছেন। না-ই হতে পারে। কিন্তু আমার ভাবতে কী আছে! এটাও তো এক ধরনের প্রেম। তবে আমি দেখেছি, আমি খুব গায়কদের প্রেমে পড়ি। যেমন, শোনু নিগমের প্রেমেও পড়েছি আমি। গত কাল দেশপ্রিয় পার্কের কাছে একটা বার-কাম রেস্তরাঁয় খেতে গিয়ে দেখলাম একটা ছেলে গান করছে। আরেক জন গিটার বাজাচ্ছে। এত্তো ভাল লাগল, কী বলি! ভাল গান গাইতে জানলে দেখেছি আমার চট করে কাউকে ভাল লেগে যায়।
এই যেমন গায়ক অভিজিৎ বসু। উনি অবশ্য আমার গুরুস্থানীয়। ওঁর গানের জন্য জন্য ওঁকে আমি শ্রদ্ধা করি। এবার পুজোয় উনি খুব বলছেন একদিন ওঁর বাড়ি যেতে। গেলেই প্রচুর গান শোনান উনি। নিজের হাতে রান্না করেন। জমাটি আড্ডা হয়। দেখি এবার কী হয়!
একটা অন্য কথা বলি। ইদানীং পুজোয় একটা জিনিস খুব হয়। কাছের মানুষদের নিয়ে আশঙ্কা। পুজোয় আজকাল তাই আমার খুব মন খারাপ লাগে! এ রকমটা হয়েছে গত দুর্গা পুজোর আগে আমার মা মারা যাওয়ার পর থেকে। আসলে মায়ের চলে যাওয়ার পর এটা আমার দ্বিতীয় বছর পুজো।
পুজোয় থিয়েটার করি না। গানের ফাংশন করি। তবে এবার একটার বেশি করব না। সিরিয়ালের কাজও করব না। আসলে পুজোয় বাড়িতে কাটাতেই আমার ভাল লাগে। আমার বাবার বয়স নব্বইয়ের ওপর। আমার বর ঋষির মা-বাবা আছেন। ওঁরাও বয়স্ক। আমার এখন কী হয়, অনেক সময় মনে হয়, এঁদের যদি পরের বছর পুজোয় আর না পাই!
পুজোর পাঁচ দিনের মধ্যে অন্তত এক বেলা আমার বাবা আর আমার শ্বশুরমশাই আর শাশুড়ি মা’কে নিয়ে রেস্তরাঁয় খেতে যাব। চেনা একটা রেস্তরাঁয়। ওখানকার ম্যানেজারের নাম কল্লোল বন্দ্যোপাধ্যায়। ও আমাদের চেনা। ওকে টেবিল বুক রাখতে বলি। এক-আধ দিন যাব বলেও যেতেও পারেন না ওঁরা। পর দিন হয়তো মিনিট চল্লিশ আগে ফোন করে আবার বলি কল্লোলকে। গিয়ে পৌঁছলে কল্লোল মজা করে বলে, ‘এতক্ষণ টেবিল ধরে রেখেছিলাম। তোমরা আসোনি কেন?’
তাই নিয়ে খুব হাসাহাসি হয়। মজা হয়। আমরা হই হই করে খাওয়াদাওয়া করি। আজকাল দেখছি, এই ধরনের পারিবারিক আড্ডাই বেশি ভাল লাগে।
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy