‘তেনাদের’ অস্তিত্ব নিয়ে আমি কোনও দিনই তর্কে যাইনি। তবে বরাবর বিশ্বাস করে এসেছি, ভূত বলে কিছু আদপে না থাকলেও ইতিবাচক এবং নেতিবাচক শক্তিকে কিন্তু অস্বীকার করা যায় না। সামনেই তো ভূতচতুর্দশী। ছোটবেলা থেকেই শুনেছি যে এই দিন নাকি ১৪ শাক খেতে হয়, বাড়িতে ১৪টি প্রদীপ জ্বালাতে হয়। লোকে বলে, এই নেতিবাচক শক্তিকে দূর করতেই এই সব কিছু। মিথ্যে বলব না, আমিও খুবই বিশ্বাস করি এই রীতিগুলিকে এবং ভালবাসিও।
আমি ‘এনার্জি’তে বিশ্বাস করি। আর যদি প্রমাণ চাওয়া হয়, তা হলে এর পক্ষে আমি একাধিক যুক্তি খাড়া করতে পারি। ধরা যাক, কোনও জায়গায় এমনই কিছু অশুভ শক্তি বিরাজ করছে, আমি হলফ করে বলতে পারি, সেখানে কিছু ক্ষণ থাকলেই অস্বস্তি বোধ করব আমি। হয় শরীর খারাপ হবে না হলে হঠাৎ করে মন-মেজাজ খারাপ হয়ে যাবে। তখনই বোঝা যায়, জায়গাটিতে কিছু তো সমস্যা আছে।
এই প্রসঙ্গেই একটি ঘটনার কথা মাথায় আসে। বহু বছর আগের কথা লিখছি। তখন আমি ধারাবাহিকে অভিনয় করি। যে স্টুডিয়োতে আমাদের শ্যুটিং হত, সেটিকে ঘিরে নানা মুনির নানা মত কানে এসেছিল। এও শুনেছিলাম, অনেকের সঙ্গেই নাকি বড় অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে সেখানে। কিছু দিনের মধ্যে আমরাও যে এর প্রত্যক্ষ সাক্ষী হতে চলেছি, তা কি আর আঁচ করতে পেরেছিলাম আগে থেকে!
আগেই জানিয়েছি, তখন ধারাবাহিকের শ্যুটিং করছি। আর ধারাবাহিক মানেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেশ কিছু দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করার তাড়া থাকে। সেই দিনও ছিল। কিন্তু মনে হচ্ছিল, বার বার কোনও না কোনও কারণে যেন শ্যুটিংটা বাঁধা পাচ্ছে। ক্যামেরা চললেই কিছু না কিছু সমস্যা যেন পিছুই ছাড়ছে না। শেষে যা ঘটল, তা মনে পড়লে এখনও গায়ে কাঁটা দেয়।
পরিস্থিতিটা খুব স্পষ্ট মনে নেই। কেবল এটা মনে পড়ে, আমাদের একটা দৃশ্যের শট হওয়ার কথা ছিল উপর থেকে। অর্থাৎ মাথার উপরে থাকবে ক্যামেরা। সেই মতো বসানো সেটি। হঠাৎ করে ওই বড় ক্যামেরাটি মাথায় এসে পড়ে আমাদের ডিওপির। গোটা ফ্লোর জুড়ে তখন হুলুস্থুল কাণ্ড। আমার আজও মনে আছে, অদ্ভুত ভাবে ক্যামেরাটির কোনও ক্ষতি হয়নি। কিন্তু আমাদের ডিওপি গুরুতর ভাবে জখম হয়েছিলেন এবং তাঁকে ভর্তিও করতে হয়েছিল হাসপাতালে।
এত দিন কানে শুনে এসেছি। চোখের সামনে এমন ঘটনা দেখে ঠিক কী প্রতিক্রিয়া আমাদের হয়েছিল তা মনে না থাকলেও এটা ভালই মনে আছে, সেই রাতে আমাদের আর কারও ঠিক মতো ঘুম হয়নি…
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।