শিউলি ঝরা সকালে গিরিশ মুখার্জি রোডের ‘গিরীশ ভবন’-এর ঠাকুরদালানে হাজির একঝাঁক চঞ্চল মন।
দিগ্বিদিক ঝলমল। শরত বৃষ্টির ভেজা বাঁশের গন্ধ। ঠান্ডা ঘর থেকে গড়িয়াহাটের ফুটপাত চমকাচ্ছে রকমারি পোশাক।
দুর্গাপুজো স্টেপ ইন করেছে।
শিউলি ঝরা সকালে গিরিশ মুখার্জি রোডের ‘গিরীশ ভবন’-এর ঠাকুরদালানে হাজির একঝাঁক চঞ্চল মন। নাটমন্দিরে একেবারে থেবড়ে বসে শুরু হল পুজোর আড্ডা।
সাদা সরু পারের ধুতি-পাঞ্জাবিতে খাঁটি বাঙালিবাবু হয়ে হাজির গৌরব, বাঙালি মেগার স্বয়ং মহাদেব। অন্য দিকে নরম জর্জেট শাড়িতে হরিণ চোখের সায়ন্তনী। কেবল ধারাবাহিক নয়। ‘উমা’ আর ‘এক যে ছিল রাজা’য় কাজ করার পর ইন্ডাস্ট্রির নজরে এখন তিনি। তাঁর পাশেই ঠাকুরদালানে গা এলিয়ে বসলেন সুদীপ্তা। ধারাবাহিক ‘সাত ভাই চম্পা’র নিয়মিত মুখ। তাঁর লম্বা চুলের দাবি সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন হেয়ার ড্রেসার সন্দীপ নাগ। আর সুদীপ্তা? গিরীশ ভবনের জগদ্ধাত্রীর রূপ দেখে মুগ্ধ। বাড়িতে তখন চলছে ‘মায়ের সেবা’।
আড্ডায় হাজির অভিনেতা মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়। জাস্ট চুল আঁচড়ে স্টাইলিস্ট প্রলয় দাশগুপ্তর দেওয়া জমকালো শেরওয়ানি চাপিয়ে বসে পড়লেন তিনি। ঘড়ি দেখে আড়চোখে (মেয়েদের ছোট্ট মেকআপ রুম দেখে) মজা করে বললেন, ‘‘শুটিংটা আজই হবে তো?’’ তাঁর ‘বরবাদ’ ছবির ইমরান চরিত্রের সংলাপের মতোই যেন কথাটা কানে বাজল।
সময়মতো পৌঁছে পদ্মরঙা নেটের শাড়ি জড়িয়ে নিয়ে তত ক্ষণে চুল বাঁধতে বসেছেন রাজনন্দিনী। হ্যাঁ, ইন্দ্রাণী দত্তের মেয়ে, কিন্তু ‘‘আমি শুধুই রাজনন্দিনী লিখি।’’ সাফ বুঝিয়ে দিলেন এই অষ্টাদশী।
বাড়িতেই তৈরি হচ্ছে দুর্গাপ্রতিমা। সেই মেঠো গন্ধের মাঝে প্রায় দু’শো বছরের পুরনো বাড়ির ইতিহাস শুনছিলেন সকলে। মৈনাক যেমন বলে উঠলেন, ‘‘উত্তমকুমার এই বাড়িতেই যাত্রা, নাটক করতেন! ভাবলেই শিউরে উঠছি।’’
ঐতিহ্যের সঙ্গে আমরা আড্ডায় প্রবেশ করলাম।
এক সময়ে দুর্গাপুজো ছিল নিয়ম ভাঙার দিন। বাইরে খাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে অন্তহীন আড্ডা। রাত করে বাড়ি ফেরা। কিন্তু আজকের ছেলেমেয়েদের কাছে তো এমন দিন রোজ আসে। তা হলে এ প্রজন্মের পুজো কেমন?
‘‘খুব প্রিয় কারওর কোলে মাথা রেখে সারা রাত ঘুমোনো,’’ ব্যারিটোন ভয়েসে খোলাখুলি বললেন গৌরব। পাশ থেকে মৈনাক তখন রীতিমতো লাফিয়ে উঠেছেন, ‘‘ওরে! পুজোর রাত তুই শুধু ঘুমোবি! আরে রাতই তো আসল!’’ একদম পাড়ার প্যান্ডেলের বন্ধুদের মাঝে টিটকিরি। আর এই কথার পিঠে কথার মাঝে উঠে এল প্রেম।
পুজোর জমজমাট আড্ডায় মশগুল টলি পাড়ার তারকার।
আরও পড়ুন: পুজোর প্রেম নিয়ে আমার কোনও নস্ট্যালজিয়া নেই: অর্ণ
আরও পড়ুন: ঐতিহ্যের ঠাকুরদালানে আড্ডায় ‘মহাদেব’! সঙ্গে এক ঝাঁক সেলেব!
পুজো মানে কি প্রেম তা হলে?
‘‘আমার তো রোজ প্রেম। তাই পুজোয় নতুন কিছু নয়। তবে হ্যাঁ, বিশেষ জনের জন্য পুজোর উপহার দেওয়ার প্ল্যান আছে! হুমম...হয়তো পাঞ্জাবি।’’ নীলাম্বরী শাড়ি আর গয়নায় দীপ্তি ছড়িয়ে বললেন সুদীপ্তা।
‘‘আমি অবশ্যই শাড়ি কিনব লাল বা হলদে। আমার বাড়ি পুরুলিয়ায়। সেই লাল মাটির আমেজ ধরা থাকবে শাড়িতে। তবে...যার জন্য কিনব সে না-ও নিতে পারে। তাও কিনব!’’ পুজো কি কেবল উল্লাসের? এই প্রজন্মের কাছ থেকেও বেজে ওঠে আগমনীর বিষণ্ণতা!
সায়ন্তনী বলে ওঠে, ‘‘ওরে না নিলে প্লিজ শাড়িটা আমায় দিস।’’
চুল সামলাতে সামলাতে কথা বলে ওঠে সায়ন্তনী। উচ্ছ্বসিত তাঁর গলার স্বর: ‘‘পুজো মানে এখন ছুটি। দেদার খাওয়া। আড্ডা। আর যদি কেউ স্পেশাল থাকে সঙ্গে।’’
‘‘নাহ্, পুজো মানে প্রেম-টেম নেই। এখন যা ইগো সকলের! কেউ আই লাভ ইউ বলবেই না।’’ মুখ খুললেন রাজনন্দিনী। সঙ্গে সঙ্গে সকলে কথা বলে উঠলেন।
‘‘ইগো তো আছেই, তার ওপর এখন এত চয়েজ। আচ্ছা একে দেখি, নয়তো ও এই টাইপ...।’’ বললেন সুদীপ্তা।
‘‘এখন চয়েজের ওপর কিছু দিন সঙ্গে থাকার খেলা। আই লাভ ইউ-এর যুগ শেষ।’’ সায়ন্তনী বললেন।
গৌরব সজোরে বললেন, ‘‘আমি মানছি না। পুজোর চার দিনে এক জনের সঙ্গেই চার রকম ভাবে থাকা যায়।’’
ঠাকুরদালান চুপ।
এই প্রজন্ম প্রেমের মধ্যে ইগো দেখে!
নিজস্বী তুলতে ব্যস্ত সায়ন্তনী এবং সুদীপ্তা।
আরও পড়ুন: পুজোর ছুটিতে বন্ধুদের সঙ্গে নিরালায় দেদার মজা করব: মিমি
প্রেম থেকে চলে আসে গান। গিটারে ঝড় তোলেন গৌরব। একে একে সকলেই সুর ধরেন, ‘গভীরে যাও...’।
কোন গভীরে যাওয়ার কথা বলছেন এই প্রজন্ম?
গান শেষ হতেই রাজনন্দিনীর দিকে চেয়ে সুদীপ্তা বলেন, ‘‘এই গানটা তোমার জন্য গাইলাম।’’
কীসের ইশারা করলেন সুদীপ্তা?
‘‘সৃজিতের ছবিতে কাজ করার চেয়ে ওর সঙ্গে এখন আমার সম্পর্ক নিয়ে অনেক বেশি কথা বলতে হয়। তবে একটা কথা বলি, সৃজিত যে পরামর্শ দেয় সেগুলো খুব সাহায্যের হয়।’’ হাসলেন রাজনন্দিনী। অনেকেই তাঁকে বলছেন, তিনি জয়া আহসানের মতো দেখতে...কথা বলতে বলতেই বললেন, ‘‘প্লিজ কিছু মনে করবেন না! আমি প্রোমোশনটা সেরে নিই। প্লিজ সবাই ‘এক যে ছিল রাজা’ দেখবেন।’’
পাশ থেকে তখন মৈনাক বলে উঠলেন, ‘‘সকলকে শারদীয়ার শুভেচ্ছা। প্লিজ হলে গিয়ে সকলে বাংলা ছবি দেখুন।’’
এই প্রজন্ম বুদ্ধি দিয়ে আবেগকে চেনে...
দুর্গার গায়ে কাঁচা সোনার রং লাগে...
কৃতজ্ঞতা
গিরীশ ভবন
সৈমন্তিক দাস
মেক আপ: সুমন গঙ্গোপাধ্যায়
হেয়ার: সন্দীপ নাগ
স্টাইলিস্ট: প্রলয় দাশগুপ্ত
ক্যামেরা: অজয় রায়
ছবি: মৃণালকান্তি হালদার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy