খুব ছোটবেলাতেই মা'কে হারিয়েছি। তখন সবে ক্লাস টু-থ্রি। ক্লাস টেনে পড়ার সময়ে আইসিএসসি পরীক্ষার আগের দিন বাবা মারা যান। আমার পুজো তাই বরাবরই কেটেছে পিসির বাড়িতে, হাওড়ায়। পিসিদের বড় পরিবার, বাড়িতে দুর্গা পুজো হতো। ওই ক'টা দিন সবাই আসত ভিড় করে। বাড়ি জুড়ে হইহই। নীচে প্যান্ডেল বাঁধা হচ্ছে, মাইকে গান। আমরা সবাই আনন্দে আত্মহারা।
আমাদের পুজো শুরু হয়ে যেত মহালয়া থেকেই। সেদিন ভোর চারটের সময়ে ঘুম জড়ানো চোখে রেডিয়োতে মহিষাসুরমর্দিনী শোনার পরেই কাকাদের সঙ্গে তর্পণের জন্য সোজা গঙ্গার ঘাট। ফেরার সময়ে কচুরি আর মিহিদানা নিয়ে হইহই করে বাড়ি ফেরা। এবং বাড়ি ফিরেই সবাই মিলে একসঙ্গে সেই মিহিদানা ভক্ষণ। আয়োজন অল্প থাকলেও তার আনন্দ ছিল ঢের বেশি। ওই মহালয়ার দিন থেকেই আমাদের বাড়িতে আমিষ ঢুকত না আর। এমনি করেই পুজো চলে আসত। যেহেতু বাড়িতেই পুজো তাই বাইরে বেরিয়ে ঠাকুর দেখার চলও ছিল না খুব একটা। দেখতে দেখতে ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী পার করে দশমী এলেই মন খারাপ। তবে মা বিদায় নেওয়ার পরেই আমিষ ঢুকত বাড়িতে। সেটার একটা আলাদা আনন্দ ছিল বটে।
আরও পড়ুন: ভয় উড়িয়ে বাড়ির পুজোতেই ডবল মজা!
বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে বাড়িতেই একটু আড্ডা হতে পারে।
পুজোর সময় শুনেছি অনেকের প্রেম হয়। ওই আড় চোখাচোখি, অনুরাগের ছোঁয়া। আমার সে সব আর কোনও কালেই হল না! বড় পরিবারে হইচই করেই পুজোটা কেটে যেত। বাইরে বেরতাম না তো তেমন একটা। তাই এ সবের সুযোগ, ইচ্ছে কোনওটাই ছিল না।
আরও পড়ুন: বিয়ে করে সিঁদুর খেলার প্ল্যান আছে....
এখন বড় হয়েছি। পরিচিতি হয়েছে। সঙ্গে ব্যস্ততাও। পিসির বাড়িতেও এখন আর ওরকম বড় আয়োজন করে উদযাপন হয় না। পুজো হলেও তা ছোট করে। আগের মতো ওই ঠাকুর এনে, প্যান্ডেল করে, খাওয়াদাওয়া করে পুজো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একান্নবর্তী পরিবারও এখন নেই আর। তাই পুজো বলতে এখন বাড়িতেই বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে একটু আড্ডা-গল্প। ব্যস ওইটুকুই।
এ বারে তো আমার পুজোর কোনও প্ল্যানও নেই। কিছু কেনাকাটাও হয়নি এখনও। ঠিক করেছি বাড়িতেই থাকব। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে বাড়িতেই অল্পস্বল্প আড্ডা হতে পারে বড়জোর। বাইরে বেরিয়ে ঠাকুর দেখার অভ্যেস কোনও দিনই তেমন ছিল না। আর এ বার তো করোনার জন্য তাতে একেবারেই কাটছাঁট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy