Advertisement
৩০ মার্চ ২০২৩
Durga Puja 2020

চার সুন্দরী, পুজো সংখ্যা, তিনটে গান...

মা দুর্গার আশীর্বাদে প্রতি বছরই পুজোর গান সাফল্য এনে দেয়। তবে মিথ হয়ে গিয়েছে ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’ ছবির ‘ঢাকের তালে কোমর দোলে’ গান।

জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২০ ১৩:১৭
Share: Save:

করোনা পুরো গ্রাস করে ফেলল শারদীয়াকে। ভাবতে পারেন, কত মাস ঘরবন্দি! আমার ফ্লোরে এক জন সদ্য করোনামুক্ত। আর এক জন লড়ছেন। দরজা খুলতেই ভয় পাচ্ছি। বেরোনোরও কোনও ইচ্ছে নেই। যদিও অনেকেই ঝুঁকি নিচ্ছেন। মুম্বইয়ে হুড়মুড়িয়ে আবার বাড়ছে সংক্রমণের সংখ্যা। ভয় হচ্ছে বাংলাকে নিয়ে। কেরলের ওনাম থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত সবার।

Advertisement

এ বছর মুম্বইয়ে কোনও বাঙালি পুজোয় রমরমা নেই। গত বছরে আমি এই সময়ে ছিলাম নিউজিল্যান্ডে। তার আগের বছর আমেরিকায়। শো-এর টানে। এই প্রথম দেশে থেকেও কলকাতার পুজোয় নেই আমি!

আমি তোগেছো বাবা

গানের টানে, শ্রোতাদের ভালবাসায় প্রায় প্রতি বছর সারা দুনিয়া চষে বেড়াই এই সময়। বাড়ির লোক তাই আমার নাম দিয়ে গেছো বাবা! আমার নাকি ‘সাকিন’ নেই। মুম্বই থাকলে অভিজিৎ ভট্টাচার্যের বাড়ির পুজোয় আমাকে দেখতে পাবেন। ঢাক বাজাই। এ বছর তাতেও বাধা।

Advertisement

কলকাতায় না এলে আমার পুজোই অসম্পূর্ণ। রাস্তার ঘুঘনি, এগ রোল, ফুচকা, মোগলাই... লিখতে লিখতে হাত নিশপিশ করছে। জিভে জল! আর মায়ের হাতের রান্না। আরও একটা টানে কলকাতায় আসি। স্কুলবেলার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারতে। বাঙালি খেয়ে আর আড্ডায় বাঁচে। আমি ২০০ শতাংশ বাঙালি। ফলে, এই দুটো তো আমার চাই-ই। মুম্বইয়ে এই দুটো পাই কই?

আরও পড়ুন: চতুর্থীর দিনে মাছ ধরছি আমি…

আড্ডা দিতে আমাদের বন্ধুদের দলটা এক জায়গায় জড়ো হয়। সঙ্গে থাকে নিজেদের হাতে বানানো ঝালমুড়ি আর চা। গুলতানি জমে ক্ষীর। মা রেঁধে খাওয়ান লুচি, আলুর দম, ভাতের সঙ্গে শুক্তো, চিংড়ি মাছ ভাপা, আরও অনেক কিছু। লকডাউনের কল্যাণে আমিও রাঁধতে শিখেছি। কিন্তু মায়ের হাতের স্বাদ কি আর আসে!

ঘরে ফেরার ডাক...

পঞ্চমদা আর আশাজির ডুয়েট ছোটবেলা থেকে পাগল করে দিয়েছে। তখন স্কুলবেলা। বন্ধুদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছি। একটা প্যান্ডেল থেকে ভেসে এল ‘কোথা কোথা খুঁজেছি তোমায়।’ ব্যাস, ওই যে দাঁড়িয়ে গেলাম, নট নড়নচড়ন। সবাই রেগে গজগজ করছে। আমি নির্বিকার ভাবে গান শুনছি। কত সময় রাগের চোটে ওরা প্যান্ডেল ছেড়ে, আমায় ফেলে হাঁটা দিত। আমি পুরো গান শুনে একবুক তৃপ্তি নিয়ে ওদের পিছু নিতাম।

গত বছরে আমি এই সময়ে ছিলাম নিউজিল্যান্ডে।

পুজোর গান তাই বরাবরই আমার কাছে ঘরে ফেরার ডাক। এ বছরের পুজোর আগে যেমন ডাক পাঠালেন মহেন্দ্র সোনি, ‘চল একসঙ্গে পুজোর গান করি’। মনে হল বহু বছর পরে আবার যেন ঘরের ছেলে ঘরে ফিরছে। ওদের সঙ্গে গাঁটছড়া সেই ২০০৪ থেকে। এখনও মনে হয়, এই তো সে দিন! এ বছর তিনটে পুজোর গান আমার। রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে ‘এলো মা দুগ্গা ঠাকুর’, দেখতে দেখতে যা ৪০০ কোটি ভিউয়ার্স ছুঁয়েছে! এসভিএফের সঙ্গে ‘বলো দুগ্গা মাঈ কি’ ৮৯ কোটি। বাংলা গান প্রতি বছরেই এক-দুটো ঝুলিতে থাকে। এ বার পুজো স্পেশ্যাল হিন্দি মিউজিক ভিডিয়ো ‘অ্যায় মেরে দিল’। মনোজ মুনতাসিরের কথায়, অভয় যোধপুরকরের গলায়, আমার সুর পুজো প্রেমের আমেজ ছড়িয়েছে। ভিউয়ার্স সংখ্যা ৪ মিলিয়ন।

মা দুর্গার আশীর্বাদে প্রতি বছরই পুজোর গান সাফল্য এনে দেয়। তবে মিথ হয়ে গিয়েছে ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’ ছবির ‘ঢাকের তালে কোমর দোলে’ গান। এখনও পুজো ফাংশানে চার-পাঁচ বার গাইতে হয় আমায়।

চার সুন্দরী প্রেমিকা, একগুচ্ছ শারদীয়া...

পুজোর প্রেম বলতেই মনে পড়ল, এ বছর আমার সঙ্গে চার সুন্দরী সময় কাটাবেন। আমার বৌ তাদের দু’চক্ষে দেখতে পারে না। চন্দ্রাণীর অভিযোগ, ওরা নাকি আমার সঙ্গে সারাক্ষণ লেপটে থাকে। ওরা কারা? আমার চার রকমের গিটার। সব ছাড়তে পারি। গান ছাড়তে পারব না। ফলে, গিটারগুলোকেও নয়। তারে যখন আঙুল ছোঁয়াই, মনে হয় এই তো প্রেয়সী আমার!

বৌ তাই মাঝেমধ্যেই বলে, ওর নাকি চিমটি কেটে দেখতে ইচ্ছে করে আমি মানুষ না ভিন গ্রহের জীব! যার জীবনে গান ছাড়া প্রেম নেই! হ্যাঁ, কলেজ ক্যান্টিনে বহু মেয়ের সঙ্গে আড্ডা মেরেছি। কিন্তু প্রেম হয়নি। কারণ, জীবন আমায় চোখে আঙুল দিয়ে ঘোর বাস্তব দেখিয়েছে। মাত্র ক্লাস সিক্স থেকে মায়ের সঙ্গে সংসার সামলাতে গিয়ে। সে কথা পরে হবে। সেই সময় থেকেই গান আঁকড়ে বড় হয়েছি। আর মনে জমে থাকা সমস্ত প্রেম ঢেলে দিয়েছি সুরে। গানের শরীরে, আত্মায়। তাই বোধহয় আমার গানে শ্রোতা পাগল প্রেমিককে খুঁজে পান।

আরও পড়ুন: পুজোর সব শপিং একা হাতে সামলে দিল নন্দিনীই

পুজো জমাতে আর একটা জিনিস লাগে। সেটা পুজো সংখ্যা। এ বছরও চন্দ্রাণী অনলাইনে একগোছা পুজো সংখ্যা কিনে উপহার দিয়েছে। পুজোয় এ বছর কোত্থাও না গেলেও ধুতি-পাঞ্জাবি অবশ্যই এক দিন পরব। মায়ের বদলে মুম্বইয়ের বাড়িতেই রান্না হবে চিংড়ি ভাপা। সঙ্গে চার রঙের গিটার।

জমে যাবে ২০২০-র পুজো! কী বলেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.