Advertisement
durga puja

Anindya Chatterjee: দুই কলকাতার পুজোর আমেজের মাঝে হারিয়ে গিয়েছে ক্যাপ-বন্দুকের স্মৃতি

যে যাই বলুন না কেন, দুই কলকাতার পুজোর সংস্কৃতির একটা পার্থক্য আছে। যাঁরা দুটোকেই খুব কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁরা সেটা অনুভব করতে পারেন।

অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়

অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় ছবি: ইনস্টাগ্রাম

অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়
অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২১ ১৯:৩০
Share: Save:

আমার ছোটবেলাটা কেটেছে উত্তর কলকাতায়। মাণিকতলার বাড়িতে বড় হয়ে ওঠা। তাই পুজো বললেই আমার কাছে ফিরে আসে উত্তর কলকাতার স্মৃতি।

সরু অলিগলিতে নতুন জামা পরে বন্ধুদের সঙ্গে হুল্লোড়, সবাই মিলে আড্ডা, পরিবারের সকলের সঙ্গে সময় কাটানো— সবটা মিলিয়েই ছিল ছোটবেলার পুজো। এখন বয়স বেড়েছে। সে সব থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি। বাবা-মা’ও আর নেই। এখন উত্তর কলকাতার পাট চুকিয়ে দক্ষিণ কলকাতায় থাকি।

যে যাই বলুন না কেন, দুই কলকাতার পুজোর সংস্কৃতির একটা পার্থক্য আছে। যাঁরা দুটোকেই খুব কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁরা সেটা অনুভব করতে পারেন। বলে বোঝানো মুশকিল।

কেন পুজো বললেই আমার মাথার মধ্যে উত্তর কলকাতা নাড়া দিয়ে ওঠে? কারণ কলকাতার ওই প্রান্তে জীবনের এমন একটা সময় কাটিয়েছি, যখন পুজোটা উপভোগ করার ষোলো আনা সুযোগ ছিল। বাবা-মায়ের সঙ্গে দোকানে গিয়ে নতুন জামা কেনার সুযোগ ছিল, সেই জামা পরে সকলের সামনে বুক ফুলিয়ে তা দেখানোর সুযোগ ছিল। এখন আর তা কোথায়!

পেশা হিসাবে অভিনয়কে যখন বেছে নিয়েছি, সারা বছরই তো নতুন নতুন পোশাক কিনতে হয়, পরতে হয়। শুধু পুজোর সময়ে নতুন জামা পরে তাই আর আগের মতো মন ফুরফুর করে না। সেই সব আনন্দ এখন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। আর যা অভ্যাস, তা থেকে আনন্দ খুঁজে পাওয়া কঠিন।

পুজোর কথা মনে করতে বসলেই, আরও একটা স্মৃতি এসে হাজির হয়। বইয়ের স্টল। আমাদের ছোটবেলায় পুজোমণ্ডপ লাগোয়া প্রচুর বইয়ের স্টল দেওয়া হত। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাঁদের স্টল দিত। সেই সব দলের মতাদর্শের সঙ্গে কারও মত মিলত কি মিলত না— সেটা বড় কথা নয়। কিন্তু ওই স্টলগুলি, ওই বইগুলি যেন পুজোর সংস্কৃতির সঙ্গে মিলেমিশে গিয়েছিল। ধূপ-ধুনোর গন্ধের মধ্যেও থেকে গিয়েছিল বইয়ের নতুন পাতার গন্ধ। এখন সে সব হাওয়ার সঙ্গে উড়ে অতীতে মিশে গিয়েছে।

ঠিক যে ভাবে হারিয়ে গিয়েছে ক্যাপ-বন্দুক। বারুদের গন্ধ মানেই যে হিংসা নয়, বারুদের গন্ধ মানেই যে ক্ষমতাদখলের ইচ্ছা নয়, বারুদের গন্ধও যে সারল্যের প্রতীক হতে পারে— ক্যাপ-বন্দুকের কাছে নাক না নিয়ে গেলে, কে জানত!

এমন অষ্টমী পর্যন্ত কাজ থাকে। পুজোর ছুটি বলতে নবমী আর দশমী। এই দুটো দিন বান্ধবীকে সময় দিয়ে আর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে কেটে যায়। ছুটি আসে। হুড়মুড়িয়ে ছুটি শেষও হয়ে যায়। তবু এখনও পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ার শব্দ শুনে চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাই— উত্তর কলকাতার অলিগলি, নতুন জামা পরে হুল্লোড়, আচমকা হাওয়ায় স্টল থেকে উড়ে যাওয়া বই আর একটা ছোট্ট ক্যাপ-বন্দুকের নল— ফেলে আসা সারল্যের উৎস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE