Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Pradipta Bhattacharyya

Pradipta Bhattacharyya: বন্যার পথ পেরিয়ে পুজোয় বাড়ি ফিরেছিলাম, মনে আছে আজও: প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য

নিখাদ ছুটির টানে ঘরে ফেরা, এই আমার পুজো

পুজো মানে আমার কাছে ঘরে ফেরা: প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য

পুজো মানে আমার কাছে ঘরে ফেরা: প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য

প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য
প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২১ ১৪:০৯
Share: Save:

পুজো মানে আমার কাছে নিখাদ ছুটি, আনন্দ, আড্ডা। বহরমপুরে থাকাকালীন ছিল এক রকম। কলকাতার পুজোর স্বাদ আলাদা। তবে এখনও উৎসবের প্রথম দুটো দিন কাটে বহরমপুরে, আমার বড় হওয়ার ঠিকানায়। আর নবমী-দশমী থাকি তেহট্টে। আমাদের আদি বাড়ি। পাড়ার বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের সঙ্গেই মূলত হইহই করি। পুজো মানে আমার কাছে ঘরে ফেরা।

ছোটবেলায় বন্ধুবান্ধব মিলে ঠাকুর দেখতে বেরোতাম হইহই করে। প্রতিমা দর্শনের রোমাঞ্চ আর অনন্ত হাঁটাহাঁটির পর বাড়ি ফেরা। নতুন জামা, খাওয়াদাওয়া— সব মিলিয়ে সে সব দিন বড্ড মজার ছিল। পুজোয় প্রেম নিয়েও ছিল উত্তেজনা। বিশেষত তা নিজেদের বন্ধুবৃত্তে ঘটলে। আমার কাছে যদিও পুজোর প্রেমের বিশেষ গুরুত্ব বা ব্যক্তিগত অনুষঙ্গ নেই। সব দিনই তো প্রেমের, তার জন্য পুজো চাই নাকি?

বহরমপুরে পুজো হয় বেশ জাঁকজমক করেই। এখন সমস্ত পুরনো বন্ধুবান্ধব আসেন। বহু দিন বাদে বাদে দেখা হয়। আমার পুজো তাই এক অর্থে পুনর্মিলন। উৎসবের দিনগুলোয় জমিয়ে বসে আড্ডা, সঙ্গে খাওয়াদাওয়া।

আমার কাছে পুজোর প্রেমের বিশেষ গুরুত্ব বা ব্যক্তিগত অনুষঙ্গ নেই। সব দিনই তো প্রেমের, তার জন্য পুজো চাই নাকি?

আমার কাছে পুজোর প্রেমের বিশেষ গুরুত্ব বা ব্যক্তিগত অনুষঙ্গ নেই। সব দিনই তো প্রেমের, তার জন্য পুজো চাই নাকি?

তেহট্টে পুজো খানিক ছিমছাম, এতটা জমকালো ব্যাপার নেই। একচালার সাবেক প্রতিমা। তবে হ্যাঁ, দশমীর একটা আলাদা আভিজাত্য আছে। প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় নৌকো করে। আমাদের বাড়ি থেকেও বড় নৌকো নেওয়া হয়। একসঙ্গে অনেক নৌকো নামে জলঙ্গী নদীতে। এ ছবি তেহট্টের বিশেষত্বই বলা চলে। সে এক দেখার মতো দৃশ্য...

তরী থেকে জলে নেমে যান দুর্গা। গোধূলির সূর্যের মতো ক্রমে মায়ের মুখ জলে ডুবতে ডুবতে এক সময় মিলিয়ে যায় দিনের শেষ আলোর মতো। জলঙ্গী নদী তখন বিদায়ের বিষাদে কিছুটা ম্লান, তবু যেন আগলে রাখছে সদ্য পতিগৃহের দিকে রওনা হওয়া বিষণ্ণ উমাকেও।

তেহট্টের আর একটি জিনিস আমায় খুব টানে, তা হল বিজয়ার উদযাপন। মা ফিরে যাওয়ার দুঃখ তো আছেই, তেমনই বিজয়া শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময়েরও। এখনও তেহট্টে সকলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিজয়া করেন। ছোটরা বড়দের প্রণাম জানান। নাড়ু-সহযোগে মিষ্টিমুখ তো রয়েছেই। আধুনিকতার এই ছুটন্ত জীবনে এখনও অমলিন বিজয়ার এই স্নেহ-ভালবাসা-আন্তরিকতা।

ফেলে আসা এক বছরের কথা বিশেষ ভাবে মনে আছে। ২০০০ সাল। বন্যায় ভেসে গিয়েছিল গোটা রাজ্য। বহু মাস ঘরে ফেরা হয়নি, আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে সংযোগহীন দীর্ঘ দিন। ফোনও ছিল না তখন। কিন্তু পুজোয় যে বাড়ি ফিরতেই হবে। লম্বা সময় শিকড় থেকে দূরে থাকায় অপেক্ষা আরও তীব্র ছিল সে বছর। মনে আছে চেনা পথের বাইরে গিয়ে সে বার অন্য রাস্তা ধরে অনেক ঘুরে পৌঁছতে হয়েছিল বহরমপুর। প্রায় ১২-১৩ ঘণ্টা লেগে গিয়েছিল যেতে।

দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তা, অপেক্ষা পেরিয়ে অবশেষে যখন পৌঁছতে পেরেছিলাম বহরমপুর- সেই মুহূর্তে ভীষণ আনন্দ হয়েছিল। মনে হয়েছিল যেন জল পেল চাতক পাখি। সেই দিনটার কথা আজও মনে আছে স্পষ্ট।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE