করোনা অতিমারির মধ্যে উৎসবের চারটে দিন একটু অন্য ভাবে কাটানোর চেষ্টা। মনে হয় যেন মা এলে রোগ, ব্যাধি সবই দূর হয়ে যাবে।
দেখতে দেখতে বছর ঘুরল। পুজোও এসে গেল। আগের বছর ইউভান আমাদের জীবনে এল দুর্গাপুজোর আগেই। এখন সে হাঁটতে পারে, সমুদ্র দেখলে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে সে দিকে ছোটে। সত্যিই সময়ের সঙ্গে কত কিছুই যে বদলে যায়! আমিও তো বদলেছি। এখন আমি আর শুধুই পরিচালক-প্রযোজক রাজ চক্রবর্তী নই। ব্যারাকপুরের বিধায়কও বটে। তাই এখন প্রত্যেক উৎসবেই সেখানে ছুটে যাই। ওই কেন্দ্রের মানুষও এখন আমার পরিবার। এ বার পুজোতেও বেশ কয়েক দিন সেখানে যাব। কিছু মণ্ডপ উদ্বোধন করব। ব্যারাকপুরবাসীর সঙ্গে সময়ও কাটাব কিছুটা।
করোনা অতিমারিকে সঙ্গী করে এ বার দ্বিতীয় পুজো। অনেকেই কাছের মানুষকে হারিয়েছেন। কেউ কেউ নিজেই এই অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করেছেন। এমন আবহে আমাদের সবারই মন ভার। তবুও উৎসবের চারটে দিন একটু অন্য ভাবে কাটানোর চেষ্টা। মনে হয় যেন মা এলে রোগ, ব্যাধি সবই দূর হয়ে যাবে। সেই বিশ্বাসে ভর করে মন খারাপের মাঝেও ছিমছাম আয়োজনে পুজো।
পুজোতে আমি কোনও দিনই খুব একটা বেরোই না। এ বারও আমার আবাসনেই থাকব। অষ্টমীর সকালে পরিবারের সঙ্গে অঞ্জলি। আর জমিয়ে খাওয়াদাওয়া। শরীরস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে সারা বছর অনেক কিছুই খেতে পারি না। তা বলে পুজোর সময় পেটপুজোতেও বিধিনিষেধ? নৈব নৈব চ! ওই কটা দিন কবজি ডুবিয়ে খাওয়ার পালা। নবমীর দিন মাংস চাই-ই চাই। আর ঘুম ভাঙবে গরম গরম লুচি, ছোলার ডালের মিষ্টি গন্ধে। পাতে এ সব খাবার না পড়লে পুজো পুজো আমেজটাই যে ঠিক আসে না!
পুজোয় পেটপুজোর পাশাপাশিই আসে কেনাকাটার প্রসঙ্গ। নিজের জন্য বিশেষ জামাকাপড় কিনি না। শুভ (শুভশ্রী) প্রত্যেক বছর নিয়ম করে আমায় পাঞ্জাবি কিনে দেয়। ও জানে আমি পাঞ্জাবি পরতে ভালবাসি। শুভর দেওয়া পাঞ্জাবি পরে অষ্টমীতে অঞ্জলি দিই। আমি কিন্তু ওর থেকে দিব্যি পাঞ্জাবি চেয়ে ফেলি। কিন্তু ও আমার থেকে কিছুই নিতে চায় না। অগত্যা আমিই পছন্দ করে ওকে শাড়ি কিনে দিই। এখন লিখতে লিখতে মনে পড়ল! এ বছরের শাড়িটা এখনও কেনা হয়নি। এ বার কিনে ফেলতে হবে! আমাদের ইউভানেরও ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটা জামা হয়েছে। স্বয়ং দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ভালবেসে ওর জন্য জামা পাঠিয়েছেন।
পুজো আর আড্ডা বরাবরই সমার্থক। এমনিতে প্রতি বছর বন্ধুদের সঙ্গে ঘরোয়া আড্ডা দিই। জানি না এ বছর সে সব কিছু হবে কি না। আসলে এই অতিমারির আবহে আলাদা করে আনন্দ করতে ইচ্ছে করছে না। মনটা ভারী হয়ে আছে। কিন্তু উৎসব তো নতুন আশা জাগায়। উন্মাদনা নিয়ে আসে। শহরে ইতিমধ্যেই চার দিকে হোর্ডিং পড়ে গিয়েছে। রাস্তায় বেরোলে মানুষের ভিড়। এই কয়েকটা দিন দুঃখ ভুলে মানুষ নতুন করে হাসতে শেখে। এটাই তো সব চেয়ে বড় পাওনা। আর কয়েকটা মাত্র দিন। মা আসছেন… যা জীর্ণ, যা দীর্ণ সব মুছে যাক। হাসি, আলোয় ভরে যাক জীবন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy