সৌমিতৃষা কুণ্ডু।
আমি বরাবর পরিবারকেন্দ্রিক মানুষ। বাড়ির পাশেই মামাবাড়ি। মামা, মাসি, মামী, ভাই-বোন মিলে দেদার হুল্লোড়। পুজো এলে বাড়িতে যেন প্রাণের জোয়ার। এই জামা-কাপড় কিনতে বেরোচ্ছি। সবাই নতুন জামা কিনে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে। মা সেগুলো গুছিয়ে আলমারিতে তুলে রাখছেন। একটা তাক আবার অষ্টমীর জন্য আলাদা। সেখানে গঙ্গাজল ছিটিয়ে মা বিশেষ জামা তুলে রেখে দিতেন। আর আমি জুল জুল করে তাকিয়ে দেখছি। অথচ ছুঁতে পারছি না!
ছোট থেকে আমার পুজো এ রকমই ছিল। আমার মায়ের পছন্দ বরাবর অন্য রকম। সবার থেকে আমার পোশাক, সাজ তাই একদম আলাদা হত। সবাই ফিরে ফিরে দেখত। প্রশংসা করত। আমার খুব গর্ব হত। মনে আছে, সে বার প্রথম শাড়ি পরেছি। মা বেছে শাড়ি কিনে পরিয়ে দিয়েছেন। সাজিয়েও দিয়েছেন। মণ্ডপে অঞ্জলি দিতে এসে দেখি, পাঞ্জাবি পরা সুন্দর দেখতে একটা ছেলে আমায় ঘুরে ঘুরে দেখছে! মনটা সঙ্গে সঙ্গে ফুরফুরে। এক দিন যদি বন্ধুদের সঙ্গে বেরোতাম, তো এক দিন মা-বাবা, বাড়ির সবার সঙ্গে।
আর ছিল খাওয়া দাওয়া। নিরামিষ-আমিষ মিলিয়ে রকমারি রান্না। পুজোর ভোগ। বারাসতের মেয়ে আমি। মিষ্টি থাকবেই পাতে। ২০১৮-য় হঠাৎই ছন্দপতন। আমার দিদা চলে গেলেন। আমাদের বাড়ি থেকে আনন্দ চলে গেল। এখন আর আলাদা করে পুজো শপিং নেই। প্রতি সপ্তাহের দ্বিতীয় আর চতুর্থ শনি-রবিবার ছুটি। ওই দিন মা আর আমি কেনাকাটা সারি। সারা বছর এ ভাবেই কিছু না কিছু কিনতেই থাকি। সেগুলোই জমতে জমতে পুজোর পোশাক হয়ে যায়। এখনও একটা দিন বন্ধুদের জন্য বরাদ্দ থাকে। একটা দিন মা-বাবার জন্য। কাজে মনোযোগী সৌমিতৃষার এখন প্রেমে পড়া বারণ। তাই কেউ ঘেঁষতে চাইলে সঙ্গে সঙ্গে নিজের চারপাশে লক্ষ্মণরেখা টেনে নিই। গত বছর থেকে অতিমারি ব্লটিং পেপারের মতো পুজোর আনন্দ শুষে নিয়েছে। এ বারেও কারওর মনে আনন্দ নেই। কলকাতায় পুজো উদ্বোধনে থাকব, না বারাসতে ফিরে যাব, এখনও ঠিক করে উঠতে পারিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy