Advertisement
Aneek Dhar

Kali Puja 2021: ভোর রাতে লরির সঙ্গে গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ, আমার গায়ে কোনও আঁচড় নেই! মা কালীর কৃপা?

কাচ ভেঙে গায়ে ছড়িয়ে পড়া ছাড়া আর কিচ্ছু হয়নি আমার

‘‘আমরা বৈষ্ণব মন্ত্রে দীক্ষিত। দেবী মা আমাদের বাড়িতে বৈষ্ণব মতে পুজো পান।’’

‘‘আমরা বৈষ্ণব মন্ত্রে দীক্ষিত। দেবী মা আমাদের বাড়িতে বৈষ্ণব মতে পুজো পান।’’

অনীক ধর
অনীক ধর
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২১ ১২:১৯
Share: Save:

কালীপুজোয় আমাদের বাড়ি যেন যজ্ঞিবাড়ি! লন্ডন, হংকং, দিল্লি, মুম্বই— যে যেখানে থাকেন সপরিবার চলে আসেন দুর্গাপুজোর সময়। সেই যে উৎসব শুরু শেষ হয় ভাইফোঁটায়। এত দিন ধরে আমাদের শ্যামনগরের বাড়ি লোকারণ্য। হইচই, খাওয়াদাওয়া, খুনসুটি— সে এক আলাদা মজা! দীপাবলির বাড়তি উদ্‌যাপন প্রদীপ দিয়ে বাড়ি সাজানো। সবাই মিলে আতসবাজি পোড়ানো। এ বছর যদিও বাজি নিষিদ্ধ। এ বছর তাই আরও বেশি আলো দিয়ে সাজানো হবে আমাদের বাড়ি।

আমাদের বাড়ির পুজোর ইতিহাস কিন্তু পুরনো। প্রায় ৭০ বছর আগে আমার ঠাকুরদা রায়হরণ সূত্রধর সপরিবার চলে এসেছিলেন বাংলাদেশ থেকে। আমাদের আদিবাড়ি কুমিল্লায়। সেখান থেকে দাদু তাঁর চার ভাইকে নিয়ে চলে আসেন শ্যামনগরে। মণ্ডলপাড়ায় বাড়ি বানিয়ে থাকতে শুরু করেন। সেই সময় দাদু চাকরি করতেন স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এসআইবি)-তে। এ দেশে এসে থিতু হয়ে বসার কয়েক বছর পরের ঘটনা। এক দিন কুলপুরোহিত দাদুকে বলেন, ‘‘ঈশ্বরের আশীর্বাদে আপনারা সুখে-শান্তিতেই বসবাস করছেন। এ বার তা হলে দেবী দুর্গার পুজোর আয়োজন করুন।’’ সেই শুরু দুর্গাপুজোর। তার পর কালীপুজো। তখন কাঁচা মাটির মণ্ডপ। চারপাশে বাঁশের বেড়া। দেবীর আশীর্বাদে আস্তে আস্তে মণ্ডপ বড় আকার নিয়েছে। পাথর বসেছে মেঝেতে। এ বছর সেই পুজোর ৬৩ বছর।

বাড়িতে কালীপুজো হয়। অনেকেই ভাবেন আমরা বোধহয় শাক্ত। তা কিন্তু নয়। আমরা বৈষ্ণব মন্ত্রে দীক্ষিত। দেবী মা আমাদের বাড়িতে বৈষ্ণব মতে পুজো পান। পুজোয় কোনও আমিষ ভোগ দেওয়া হয় না। পুজোর ক’দিন আমিষ রান্নাও হয় না। অনেকেই বলেন, মদ এবং মাংস ছাড়া নাকি কালীপুজো অসম্পূর্ণ। আমাদের বাড়ির পুজো এই দিক থেকেও ব্যতিক্রম। বৈষ্ণব মতে পুজো বলে বলিপ্রথাও নেই।

‘‘ঠাকুরদার শুরু করে যাওয়া ৬৩ বছরের মাতৃ আরাধনার সুফল এ ভাবেই সে দিন পেয়েছিলাম হাতেনাতে।’’

‘‘ঠাকুরদার শুরু করে যাওয়া ৬৩ বছরের মাতৃ আরাধনার সুফল এ ভাবেই সে দিন পেয়েছিলাম হাতেনাতে।’’

তবু আমাদের দেবী মা জাগ্রত। একটা ছোট্ট ঘটনা বলি। ২০০৮-এর, ফেব্রুয়ারি। সারেগামাপা প্রতিযোগিতা জেতার কয়েক মাস পরের ঘটনা। অসম কোকরাঝাড় থেকে ফিরছিলাম শো করে। জাতীয় সড়কে ভোর রাতে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার মুখোমুখি আমাদের গাড়ি। সামনে থেকে একটি লরি ধাক্কা মেরেছে। একই সঙ্গে পিছন থেকে আরেকটি লরি ধাক্কা মেরেছিল। আমি বসেছিলাম সামনের আসনে। চালকের পাশে। বেঁচে ফেরার কথাই ছিল না সে দিন। অদ্ভুত ব্যাপার, কাচ ভেঙে গায়ে ছড়িয়ে পড়া ছাড়া আর কিচ্ছু হয়নি আমার। বাকিদের কারওর ৩০টি, কারওর ৩২টি সেলাই পড়েছিল। গুরুতর জখম প্রায় সবাই।

ঠাকুরদার শুরু করে যাওয়া ৬৩ বছরের মাতৃ আরাধনার সুফল এ ভাবেই সে দিন পেয়েছিলাম হাতেনাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE