প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

উৎসব আসে-যায়, ফেরে না কেবল বোন, ফোঁটার দিনও রোগীর সেবায় মগ্ন ঐন্দ্রিলার দিদি ঐশ্বর্য

যত স্বল্পদৈর্ঘ্যেরই হোক না কেন, জীবনকে কী ভাবে উদযাপন করতে হয়, তা বোধ হয় সকলকে শিখিয়ে গিয়েছেন ঐন্দ্রিলা।

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:২৯
ঐন্দ্রিলা-ঐশ্বর্যার বোনফোঁটা কেমন হত

ঐন্দ্রিলা-ঐশ্বর্যার বোনফোঁটা কেমন হত

যে কোনও আনন্দের কারণ। যে কোনও উৎসবের উৎস। যে কোনও উদ্‌যাপনের ধারক ও বাহক। বাড়ির সকলের কাছে তাঁর ভূমিকাটা খানিকটা এমনই ছিল। লক্ষ্মীপুজো হোক বা দোল, রাখি হোক বা ভাইফোঁটা- সকলকে এক সুতোয় বাঁধতেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। দিদি ঐশ্বর্য দিল্লি থেকে ফেরার পর থেকে বোনফোঁটার আয়োজনও করেছিলেন অভিনেত্রী। আজ রাখি আসে, রাখি যায়; ফোঁটা আসে, ফোঁটা যায়; ঐন্দ্রিলা সেই যে গেলেন, আর ফেরেননি। দিদির এখন সময় কাটে কেবল হাসপাতালে কেবিনে-কেবিনে। ডিউটিতে-ডিউটিতে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। যাতে এক টুকরোও ফাঁক তৈরি না হয়। হলেই বোনের হাসিমুখটা চোখে ভেসে ওঠে যে! বড্ড যন্ত্রণা হয়।

২০২২ সালের ২০ নভেম্বর মারণরোগ ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই শেষ হয়েছিল ঐন্দ্রিলার। তার পর থেকে গত দু’বছর ধরে শর্মা পরিবারে আর কোনও উৎসবের আলো জ্বলে না। মা, বাবা, দিদি- একে অপরের থেকে কেবল নিজেদের কষ্ট লুকিয়ে চলেন। এ বছরও কি বেরঙিন উৎসব কাটল দিদি ঐশ্বর্যর?

আনন্দবাজার অনলাইনকে ঐশ্বর্য বলেন, ‘‘এমবিবিএস শেষ করে ২০২০-তে কলকাতায় চলে আসার পরে আমার সবটা সময় বোনের সঙ্গেই কাটত। ফলে বছরে তেরো পার্বণ ওর মতো করেই হইহুল্লোড় করে কেটে যেত। আর এখন? যতটা পারি জোর করে হাসপাতালে ডিউটি নিয়ে নিয়েছি। অন-কল চলছে এখন। বাড়িতে থাকতে পারছি না এই সময়ে। ২০২২ সালে এই সময়েই বোনের স্ট্রোক হয়েছিল। ১ নভেম্বর থেকে বোন হাসপাতালেই ছিল। এই সময়টা প্রতি বছরই খুব যন্ত্রণাদায়ক। কিন্তু মা-বাবার সামনে যদি আমি আমার কষ্টটা প্রকাশ করে ফেলি, তা হলে ওদের যে কী হবে! ওরাও কষ্ট চেপে চলে, যা বুঝতে পারি। তাই যে যার মতো করে সময় কাটাচ্ছি। কে-ই বা কাকে সামলাবে! এই আনন্দ উৎসবগুলো বোনই পালন করত। লক্ষ্মীপুজোর ভোগ রান্না থেকে শুরু করে, ভাইফোঁটায় সকলকে ডেকে ডেকে খাওয়ানো- কিছুই বাদ দিত না। ও চলে যাওয়ার পর থেকে সে ভাবে কারও জন্মদিনও পালন করা হয়নি। সব্যও (সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়) এ সব আচার-অনুষ্ঠানে একদম বিশ্বাসী ছিল না। বোনের ভাল লাগত বলে ওকেও দেখতাম সবেতেই সুন্দর করে যোগ দিত।’’

মাত্র ২৪টা বছর। তার মধ্যেই সবটুকুর আস্বাদ নিতে হত যে! তাই প্রত্যেকটা মুহূর্ত হইহই করে কাটাতে চাইতেন ঐন্দ্রিলা। এই ২৪ বছরের জীবনেও একাধিক বার মাসের পর মাস কেটেছে হাসপাতালের বেডেই। পাশে ছিলেন তাঁর মা, বাবা, দিদি আর সব্যসাচী।

২০২২ সাল পর্যন্ত বোনফোঁটা পালন করতেন ঐন্দ্রিলা-ঐশ্বর্য। একে অপরকে ফোঁটা দেওয়ার পরে আদরের দুই পোষ্য বোজ আর তোতনকেও ফোঁটা দিতেন দুই বোন। কালীপুজোর আগে থেকেই চোদ্দো শাক রান্না করে খাওয়া, চোদ্দো প্রদীপ জ্বালানো, টুনির আলোয় গোটা বাড়ি সাজানো- সব রকম নিয়মরীতি পালন করতে ভালবাসতেন দুই বোনই।

ঐশ্বর্যর কথায়, ‘‘বোনের বন্ধুরাই আমার বন্ধু হয়ে উঠেছিল তখন। ওরা বাড়ি আসত। হাউজ় পার্টির আয়োজন করা হত। ভাইফোঁটার দিন সকাল থেকে নাড়ু বানানো থেকে শুরু করে সমস্ত রান্নাবান্না করতাম আমরা। এ ছাড়াও এক বার বড় করে রাখির অনুষ্ঠান হল। সেই বার সব্যসাচীকে আমি রাখি পরিয়েছিলাম। আরও বন্ধুবান্ধব এসেছিল বাড়িতে।’’

একাদশ শ্রেণিতে পড়াকালীন ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে বহু দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ঐন্দ্রিলা। দেড় বছর টানা ঘরে থাকতে হয়েছিল তাঁকে। সেই সময়েও বাড়িতে রোশনাই আনার দায়িত্ব যেন ছিল ঐন্দ্রিলারই। সমস্ত অনুষ্ঠান পালন করতেন নিষ্ঠাভরে। ঐশ্বর্যর কথায়, “আমরা ওকে আনন্দে রাখব কী! ও-ই আমাদের আনন্দে রাখত। যতগুলো বছর ও বাঁচতে পেরেছে, তা মনের জোরেই।”

যত স্বল্পদৈর্ঘ্যেরই হোক না কেন, জীবনকে কী ভাবে উদযাপন করতে হয়, তা বোধ হয় সকলকে শিখিয়ে গিয়েছেন ঐন্দ্রিলা।

আরজি করের ঘটনার পর থেকে ডাক্তারি সামলে ঐশ্বর্যও আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন। তিলোত্তমার বিচারের দাবিতে পথে নেমেছিলেন। আরও এক বোনের জন্য প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন তিনি। ভাইফোঁটা-বোনফোঁটার সময়ে সব মিলিয়েই তাই মন খারাপ ঐশ্বর্যর।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Aindrila Sharma Bonphota Bhaiphonta 2024 Ananda Utsav 2024
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy