প্রতীকী চিত্র
শোক নয়, দ্রোহ। প্রতিবাদেই দিন কাটছে হাজার হাজার নারী, প্রান্তিক যৌনতার মানুষ এবং পুরুষদেরও। আরজি কর হাসপাতালের নির্মম ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় রোজ পথে নামছেন রাজ্যের মানুষ। সেই পথেই হেঁটে এক অন্য মহালয়া দেখবে বঙ্গবাসী।
রাত পোহালেই মহালয়া। পিতৃপক্ষ শেষে দেবীপক্ষের সূচনা। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র সুর ভেসে আসে অলিগলি থেকে। যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা সেই চেনা ছক ভাঙতে বসেছে আগামিকাল, ২ অক্টোবর, বুধবার। মহালয়ার ভোর দখল করবেন হাজার হাজার মানুষ। মহালয়া কি তবে বিদ্রোহের সূচনা, নাকি পুজোর?
কী বলছেন টলিপাড়ার অভিনেত্রীরা? এ বারের মহালয়া কতটা আলাদা তাঁদের কাছে? রাত পোহানোর আগেই জানালেন আনন্দবাজার অনলাইনকে।
অভিনেত্রী শ্রীময়ী চট্টরাজের কাছে এই পুজো মন খারাপের। বিয়ের পর প্রথম পুজো হলেও পরিকল্পনামাফিক ঠাকুর দেখা, কেনাকাটা, কোনও কিছুতেই তেমন উদ্যোগ নেই। কারণ তিনি বিচার চান অভয়ার। অভয়ার মতো আরও হাজার হাজার মহিলার, যাঁরা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। কিন্তু একইসঙ্গে শ্রীময়ীর মতে, যে যাঁর মতো করে বিচারের দাবি করুন। রাস্তায় না নেমেও তো বিচার চাওয়া যায়। পুজোয় গোলা খেয়েও তো বিচারের দাবি করা যায়। পুজোয় অঞ্জলি দিয়েও দোষীদের শাস্তি চাওয়া যায়। নিজের কাজ করতে করতে, শ্যুটিং করতে করতেও অন্যায়ের বিরোধিতা করা যায়।
শ্রীময়ীর কথায়, ‘‘যে যেভাবে ইচ্ছে, বিচার চাইতে পারে। তার জন্য তাকে ট্রোল করা বা কটূক্তি করা তো ঠিক নয়। আমি দেখছি, অনেক শিল্পীকে প্রশ্ন করা হচ্ছে, কেন তাঁরা ছবির প্রচার করছেন। অন্যরা কেউ কি কাজ বন্ধ রেখেছে? সবাই তো অফিস-কাছারি সেরে তবেই প্রতিবাদ করছে। তা হলে আমাদের মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কেন কথা শুনতে হচ্ছে এ কথা? কেবল আমাদের রোজগারের মাধ্যম বিনোদন বলে? আমাদের মুর্শিদাবাদের বাড়িতে ৩০০ বছর ধরে পুজো হয়। আমি কি তা বন্ধ করে দিতে পারব? যে পুরোহিতেরা মায়ের পুজো করবেন, তাঁদের কাজ আটকে দেব? মশাল নিয়ে রাস্তায় নেমে লোককে খারাপ কথা বলা মানেই কিন্তু প্রতিবাদ করা নয়। মিছিলের মধ্যে থেকেই তো শ্লীলতাহানির মতো ঘটনার খবর উঠে আসছে। আসলে আমরা যতই গলা তুলি না কেন, এই বিকৃতির কোনও সুরাহা হবে না। তা বলে আইন আমরা নিজের হাতে তুলে নিতে পারি না।’’
শ্রীময়ীর কাছে প্রতিবাদ মানে, ‘‘সুস্থ ভাবে যে যার মতো বিচারের দাবি করা। যদি কেউ পুজোতে আনন্দ করে কাটাতে চান, তিনি সেটাই করবেন। যদি কেউ রাস্তায় নামতে চান, নামবেন। কেউ কারও উপর আঙুল না তুললেই হল।’’
কাঞ্চন-জায়ার কথায়, ‘‘ঠিক তেমন ভাবেই যাঁরা যে ভাবে মহালয়ার দিনটি কাটাতে চান, সে ভাবেই কাটাবেন। আমি কাউকেই ভুল বলব না। কেউ হয়তো রেডিও চালিয়ে মহালয়া শুনবেন, কেউ আবার টিভি খুলে মহালয়ার অভিনয় দেখবেন। একইসঙ্গে কেউ মনে করবেন টিভি খুলে ভোর দখলের খবর দেখবেন, কেউ হয়তো রাস্তায় নেমে ভোর দখল করবেন। কেউ আবার গঙ্গার ঘাটে তর্পণ দেখতে বা করতে যাবেন। যেমন আমার স্বামী কাঞ্চন এবং ওঁর দাদা দু’জনেই তর্পণে যোগ দেবে কাল। আমি ঈশ্বরের কাছে তিলোত্তমার আত্মার শান্তির কামনা করব। আর কারও সঙ্গে যেন এমন ঘটনা না ঘটে, সেই প্রার্থনাও থাকবে। এখানে কাকে দোষ দেব, কেনই বা দেব? সকলের চাহিদা যেন একটাই হয়, তিলোত্তমার বিচার।’’
অভিনেত্রী দেবলীনা দত্তের কাছে এ বারের মহালয়া ‘বিদ্রোহের মহালয়া’। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত দেবলীনাকে প্রতিবাদে শামিল হতে দেখা গিয়েছে। কখনও মিটিংয়ে, কখনও মিছিলে, কখনও আবার জমায়েতে পা মিলিয়েছেন অভিনেত্রী।
দেবলীনার কথায়, ‘‘ছোটবেলা থেকে মহালয়া বলতেই বুঝতাম, উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে। এ বার কিন্তু তা নয়। এক-দেড় মাস হয়ে গেল, বিদ্রোহের মধ্যেই রয়েছি। আর যাঁরা প্রতিবাদে রাস্তায় নামছি, তাঁদের নিয়ে মানুষের একটা বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হয়েছে। সেটি হল, আমরা নাকি পুজো বিমুখ বা উৎসব বিমুখ। কিন্তু তা নয়। আমরা আছি, প্রতিবাদের উৎসবে সকলেই আছি। যাঁরা এই প্রশ্নগুলি তুলছেন, তাঁদের আমি শুধু পাল্টা প্রশ্ন করব, এ বারের মহালয়া যতটা জোরদার হতে চলেছে, আগে কখনও এত তীব্রতা ছিল কি মহালয়ার? এ বার যত মানুষ পুজোয় আরাধনা করবেন, তাঁদের মধ্যে শত শত মানুষ তিলোত্তমার হয়ে তর্পণও করছেন। আমরা মহালয়া থেকে পুজোর দিন গুনি। এ বার প্রতিবাদের দিন গোনা শুরু হতে চলেছে। এই পুজোটাই প্রতিবাদের ক্ষেত্রে বদল ঘটাবে। মা-ও এ বার বিদ্রোহী হয়ে আসছেন। এই প্রসঙ্গে বলি, শিল্পী সনাতন দিন্দা প্রথম বার তাঁর তৈরি দুর্গা প্রতিমার হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন। যা তিনি কখনও করেননি।’’
কেবল মহালয়া নয়, ২০২৪ সালের দুর্গাপুজোর প্রত্যেকটি দিনই দেবলীনার কাছে বিদ্রোহের দিন। খুঁটিপুজো থেকে শুরু করে ব্র্যান্ডিং, পুজোর বিচারক থেকে শুরু করে পরিক্রমা, কোনও উপলক্ষেই তিনি যোগ দিচ্ছেন না। পুজোর মাস তো অভিনেত্রীদেরও উপার্জনের মাস। কিন্তু তিলোত্তমার বিচার না পাওয়া পর্যন্ত এই আনন্দে শামিল হতে পারবেন না দেবলীনা।
তবে যাঁরা উৎসবে যোগ দিচ্ছেন, তাঁদের বিরোধিতা করছেন না অভিনেত্রী। সকলেরই নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে বলেই মনে করেন তিনি।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy