অভিনেতা হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করলেও, এখন তাঁর পরিচয়ে একটা নতুন পালক যোগ হয়েছে। তিনি এখন অভিনেতা তো বটেই, পাশাপাশি ব্লগার-ও। কার কথা বলছি? সায়ক চক্রবর্তী। জীবনের নানা ছোটখাটো থেকে বিশেষ মুহূর্ত, সবই তিনি অনুরাগীদের সঙ্গে ভাগ করে নেন। পুজোতেও কি তাই হবে? আনন্দবাজার ডট কমকে সায়ক বলেন, “একদম, আমি নিজে ঘুরব, সকলকেও আমার ব্লগের মাধ্যমে ঘোরাব।”
তা হলে অভিনেতার এ বারের পুজো পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন শুনেই তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন যে ভাবেই হোক কলকাতার সব ঠাকুর তাঁকে দেখে ফেলতেই হবে এ বার! সায়কের কথায়, “এ বারের মূল উদ্দেশ্য কলকাতা শহরের সব ঠাকুর দেখে ফেলা। সেটা যে ভাবেই হোক, নিজে আগে আগে গিয়ে হোক বা পুজো পরিক্রমার মাধ্যমে। ঠাকুর আমাকে সব দেখে ফেলতেই হবে।”
এত পরিচিত হয়েও এ ভাবে ঠাকুর দেখতে গিয়ে অনুরাগীরা ছেঁকে ধরেন না? সমস্যা হয় না? অভিনেতা বলেন, “না না, অসুবিধা হয় না। যাঁরা আমায় চিনতে পারেন তাঁরা তো এসে দুটো কথাই বলেন, আর ছবি তোলেন শুধু। পুজোর ক’দিন তো ফাঁকাই থাকি। ফলে অসুবিধা হয় না। আর যাঁরা আমায় ভালবাসেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে আমারও ভাল লাগে।”
ব্লগের জন্যই কি তবে কলকাতার সব ঠাকুর দেখে ফেলার ইচ্ছে সায়কের? অভিনেতা জানান মোটেই এমন কিছু নয়। বরং তিনি ছোট থেকেই ঠাকুর দেখতে ভালবাসেন। তাঁর কথায়, “পুজোর ওই ক’টা দিন রোজ ‘হোলনাইট’ বেরোনো হয়। আসলে আমি খুব ছোট থেকেই, মানে ধরুন ক্লাস ৭-৮ থেকেই আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যেতাম। ওই সময়ও পুজোর ক’দিন আমি রাতেও ছাড় পেতাম। বাড়ি ফিরি না ফিরি কোনও অসুবিধা নেই। আমার খুব ভাল লাগে ঠাকুর দেখতে।”
রোজ রাত জেগে ঠাকুর দেখে ক্লান্ত হয়ে পড়েন না? “পুজো বছরে এক বার আসে। এটা ভাবলেই আমার মনে হয় সব ক্লান্তি চলে যায়। মনে হয়, না বেরোলে ঠাকুর দেখা মিস হয়ে যাবে, জামাটা ঘরে পড়ে পড়ে কাঁদবে, জুতোটা পরতে পারব না। অনেক ধরনের জিনিস কিনেছি, সেগুলি তো আমায় পরতে হবে। তাই এই চার দিন রাত জেগে কাটিয়ে দিই”, মত সায়কের।
কথা শুনেই মনে হল যেন পুজোর কেনাকাটা হয়ে গিয়েছে। সত্যিই কি তাই? লাজুক স্বরে সায়ক বলেন, “কেনাকাটা তো হয়ে গিয়েছে। এ বারে না খুব পাঞ্জাবি কিনেছি। পঞ্চমীর দিন আমার জন্মদিন। এ বার ৩১ এ পা দেব। বয়সটা অনেক হল। বয়স্ক বয়স্ক অনুভূতি হচ্ছে, আর সেটার কারণে অনেক পাঞ্জাবি কিনে ফেলেছি। এমনই আগে গোল গলার টিশার্ট পরতে পছন্দ করতাম, এখন কলার দেওয়া টিশার্ট পরছি। একটু বয়স্ক ভাবনা-চিন্তা এসেছে।”
পুজোয় যখন রোজ রাত জেগে ঠাকুর দেখা হয়, নিশ্চয় জীবনে কখনও না কখনও পুজোর প্রেম দরজায় কড়া নেড়েছে? সায়ক জানান, জীবনে “পুজোর প্রেমটা নেই। ওটা ছাড়া আমার জীবনে সব আছে।” তিনি আরও বলেন, “স্কুল জীবনে হয়তো ছিল। আসলে আমি বিশ্বাস করি, আমরা যাঁরা অভিনেতা তাঁদের জীবন দুটো এক সঙ্গে ভাল চলতে পারে না। হয় প্রেম ভাল চলবে, নইলে পেশাগত জীবন। আমার পরিবারের কেউ যেহেতু তেমন প্রতিষ্ঠিত নন, তাই আমি নিশ্চয় কেরিয়ারকেই বেছে নেব প্রেমের আগে। সবাই ছেড়ে দিতে পারে, কিন্তু যে কেরিয়ার গড়বে সেটা তোমায় ছেড়ে যাবে না। এই ছেড়ে যাওয়ার যুগে একা থাকো, ভাল থাকো।”
সায়ক এ দিন গল্প করতে করতেই জানান যতই তিনি অভিনেতা হন, পরিচিত মুখ হন, পুজোর সময় তাঁর পছন্দের গন্তব্য আলিশান রেস্তোরাঁ নয়। বরং পথের ধারের খাবারের দোকান। অভিনেতা বলেন, “পুজোর সময় আমি প্রচুর খাই, রাস্তার ফুচকা, রোল থেকে সব খাই। খালি এই সময় বড় বড় রেস্তোরাঁগুলি এড়িয়ে চলি, কারণ এই সময় ওখানে এত চাপ থাকে যে খাবারের মান খারাপ হয়ে যায়। মা যেহেতু অন্য ধরনের খাবার খেতে পছন্দ করে না, তাই ওই একটা দিন মায়ের সঙ্গে বাঙালি রেস্তোরাঁয় যেতেই হয়। বাদ বাকি দিন রাস্তার ধারের খাবার খেতেই বেশি পছন্দ করি। ওদের তো এই সময়ই ব্যবসা হয়।”
আরও পড়ুন:
গোটা আড্ডা আনন্দের সঙ্গে, মজা করে দিতে দিতেই ছোটবেলার পুজোর প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে যেন নস্ট্যালজিক হয়ে পড়েন সায়ক। অতীতের স্মৃতি হাতড়ে বলেন, “ছোটবেলার পুজো বলতে জামা কেনার কথা মনে পড়ে। এখন সারা বছর যেমন নিজেই কিনতে থাকি। অনেক জামা হয়। সেখানে দাঁড়িয়ে কোথাও গিয়ে ওই একটা জামাটা খুব মিস করি। আমার মাসি পুজোয় আমায় একটা জামা কিনে দিতেন, আর একটা জুতো দিতেন জন্মদিন উপলক্ষ্যে যেহেতু দুটো প্রায় একই সময়ে, নইলে পরপর পড়ে। সেই জামা পরে আমি সারা বছর, মূলত পুজোর পাঁচটা দিন কাটাতাম। এটা একটু কষ্টের হলেও..., এখন মনে হয় কী করে পারতাম। কিন্তু ওই একটা জামার আলাদাই গুরুত্ব ছিল। ঠাকুর দেখে এসে ওটা মেলে দিতাম। দু’দিন পরা হয়ে গেলে তো কেচে দিতে হতো। সকালে কেচে দিলেই বার বার মাকে জিজ্ঞেস করতাম মা শুকালো? নইলে কী পরে ঠাকুর দেখতে যাব? অনেক স্মৃতি আছে সেগুলি কষ্টের হলেও ভাল লাগার। অনেকেই অতীতকে মনে রাখতে চান না। আমি মনে রাখি। ওই দিনগুলি দেখেছি বলেই আজকের মর্যাদা বুঝতে পারি।”
তা হলে এ বার জন্মদিনের কী প্ল্যান জিজ্ঞেস করায় সায়ক বলেন, “আমার দাদু যখন মারা যান তখন আমার মাকে বলে যান যে, ওর জন্মদিন যেন প্রতি বছর পালন করা হয়। প্রতি বছর হয়ে এসেছে ছোট থেকে। কিন্তু শেষ কিছু বছর ধরে না আমি আর কাউকে ডাকি না। মনে হয় যে টাকাটা খরচ করব সেটা আমি রেখে দিই, আমি যে বাড়ি বানানোর জন্য জমি কিনেছি, বাড়ি বানাব, তাতে খরচ করি। কিন্তু কিছু বন্ধু আছে, যাদের না বললেও তারা আসে। ওদের জন্য আয়োজন করে রাখতে হয়। ওরা আমায় সারপ্রাইজ দেয়। আলাদা করে ডাকি না কাউকে। যাঁরা আসার আসে। আর জন্মদিন বা পুজোর আগে আমার উপার্জন থেকে কিছু মানুষকে কিছু জিনিস দিতে পছন্দ করি।”
আড্ডা শেষে দেবীর কাছে কী চাইবেন এ বার জানতে চাইলে কিছুতেই মনের কথা মুখে আনলেন না অভিনেতা। বললেন, “দেবীর কাছে কী চাইছি বলে দিলে যদি পূরণ না হয়?”
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।