Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Actor Abhishek Banerjee Interview

সিনেমায় ভর করেছিল ‘স্ত্রী’, বাস্তবেও ভূত দেখেছেন ‘জেনা’! কালীপুজোর স্মৃতিতে ডুব অভিষেকের

মুম্বইবাসী বলিউড অভিনেতার জীবনে ঠিক কী ভাবে আসে ভূতচতুর্দশী বা কালীপুজো? আনন্দবাজার অনলাইনে অকপট আড্ডায় কাস্টিং ডিরেক্টর তথা অভিনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

অভিনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

তিস্তা রায় বর্মণ
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:৪৪
Share: Save:

কলকাতায় কালীপুজোর স্মৃতি বড়ই আবছা। কৈশোর না পেরোতেই ‘দিওয়ালি’র সঙ্গে পরিচিতি। তার পরেও বাঙালিয়ানাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে পেরেছিলেন কেবল বাবা-মায়ের জন্য। দিল্লির ‘দিওয়ালি’তেও তাই কালীপুজোর আমেজ ছিল সতেজ। আজ মুম্বইবাসী বলিউড অভিনেতার জীবনে ঠিক কী ভাবে আসে ভূতচতুর্দশী বা কালীপুজো? আনন্দবাজার অনলাইনে অকপট আড্ডায় কাস্টিং ডিরেক্টর তথা অভিনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রশ্ন: ভূতচতুর্দশী এসেই গেল। ভূত দেখার সৌভাগ্য হয়েছে কখনও? ‘স্ত্রী’ ছবিতে এত বার ভূত দেখলে, দেখালে… কিন্তু বাস্তবে?

অভিষেক: (হেসে) হ্যাঁ! পর্দার বাইরেও ভূত দেখেছি। দিল্লিতে।

প্রশ্ন: বাহ! এ তো সুখবর! রাজধানীর ভূত বলে কথা। কী ঘটেছিল?

অভিষেক: অটোয় চেপে কোথাও একটা যাচ্ছিলাম রাত ২টো নাগাদ। একটা গোল চক্করের সামনে এসে দেখি, সাদা শাড়ি পরে এক মহিলা রাস্তার ঠিক মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে। চমকে গিয়ে অটোচালককে বলি, ‘‘ভাইয়া, দেখে!’’ আর বলেই মুখ তুলে দেখি, কেউ কোত্থাও নেই! ও দিকে অটোচালক মাথা নিচু করে বলে ওঠেন, ‘‘ভাইয়া, তাকিয়ো না, তাকিয়ো না।’’ শুনে পিলে চমকে গিয়েছিল! মাথা নিচু করে অটো চালাচ্ছেন। ভূতের ভয়ের থেকেও বেশি আতঙ্ক হচ্ছিল দুর্ঘটনার! (হেসে উঠলেন)

প্রশ্ন: জেনা (‘স্ত্রী’ ছবিতে অভিষেকের চরিত্রের নাম) তার মানে বাস্তবেও ‘স্ত্রী’ দেখে ফেলেছে?

অভিষেক: (হেসে) দিল্লির গ্রেটার কৈলাশে গেলে সকলেই দেখতে পাবেন তেনাদের। কত যে গল্প!

প্রশ্ন: ‘স্ত্রী’ বা ‘স্ত্রী ২’ শুট করতে গিয়ে এমন কোনও ভৌতিক অভিজ্ঞতা হয়েছে?

অভিষেক: না, না। তেমন কিছু ঘটেনি। তবে চান্দেরি জায়গাটা একটু গা ছমছমে। ৩০০ বছরের পুরনো বাড়িঘর রয়েছে সেখানে। ভাঙাচোরা। প্রায় ধ্বংস হতে বসা বাড়ির জানালার দিকে তাকালে মনে হতে পারে, ও পারে কিছু যেন রয়েছে। প্রথম ছবির শ্যুটিংয়ে একটু বেশি গা শিরশিরানি ভাব ছিল। তবে পরের ছবির শ্যুটিংয়ের সময়ে সম্ভবত ভূতেরাও অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। তাই ওইটুকু অস্তিত্বও আর জানান দেয়নি! (হেসে)

প্রশ্ন: কালীপুজো নাকি দিওয়ালি?

অভিষেক: কালীপুজো মানে মা-বাবা, পরিবার। আর দিওয়ালি মানেই বন্ধুবান্ধব। আমার পক্ষে তুলনা করাটা বেশ কঠিন। কারণ আমি এই উৎসবের সব রকম রূপ দেখেছি ভারত জুড়ে। আমি বাঙালি, তাই কালীপুজোর সঙ্গে হয়তো নস্টালজিয়া জড়িয়ে। কিন্ত একটা উৎসবের সব রকম চরিত্র দেখার সুযোগ পেয়ে সৌভাগ্যবান মনে হয় নিজেকে।

প্রশ্ন: খড়্গপুর, কলকাতা, চেন্না‌ই, দিল্লি, মুম্বই… উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম, মানে সব রকম ভাবেই আলোর উৎসব দেখা হয়ে গিয়েছে তা হলে?

অভিষেক: হ্যাঁ। কলকাতার বাঙালিয়ানায় ভরা কালীপুজো, চেন্নাইয়ের গ্রামীণ পুজো আর চড়কের মতো মেলা, দিল্লির আলোর উৎসব, মুম্বইয়ের ককটেল পার্টি। এক এক শহরে উৎসবের এক এক চেহারা।

প্রশ্ন: বাংলার কালীপুজোর স্মৃতি কি একেবারেই আবছা?

অভিষেক: খড়্গপুরের কালীপুজো হোক বা কলকাতার নাকতলা- কোনও স্মৃতিই খুব একটা টাটকা নয়। বড্ড ছোট ছিলাম তখন। খুব কম বয়সেই চেন্নাই। তার পরে দিল্লিতে চলে যাই বাবা-মায়ের সঙ্গে। কিন্তু কালীপুজো বলতে একটা কথাই মনে পড়ে। তা হল, পাঁঠার মাংস। সেই স্মৃতিটুকু বেশ জোরালো। তার একটি বিশেষ কারণও আছে। কোনও এক বার ভোর ৪টেয় উঠিয়ে পুজোর প্যান্ডেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এবং পাঁঠার কষা মাংস খেতে দেওয়া হয়েছিল।

প্রশ্ন: সেকী! ভোর ৪টে নাগাদ পাঁঠার কষা ঝোল?

অভিষেক: (হেসে) ঠিক এই কারণেই ওই স্মৃতি কখনও মুছে যাবে না! আকাশে যখন ঠিক করে আলোও ফোটেনি, আমরা নাকি ঘুম থেকে উঠে পাঁঠার মাংস খাচ্ছি। ভাবতে পারেন? সঙ্গে পোলাও ছিল বোধহয়। তাই কালীপুজো মানেই আমার কাছে খাসির মাংস।

প্রশ্ন: আর বাজি ফাটানো?

অভিষেক: বাজি ফাটানোর স্মৃতি বেশির ভাগই চেন্নাই আর দিল্লিতে। তখন একটু বড় হয়েছি। কিন্তু এখানে একটা মজার গল্প আছে। চেন্নাই থাকাকালীনই আমাদের স্কুলে বাজির কারখানার ছবি দেখানো হয়েছিল। যেখান থেকে জানতে পারি, আমাদের বয়সি বাচ্চারা পটকা বানানোর কাজ করছে। ওটা দেখে খুব মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। বাজির প্রতি বিতৃষ্ণা তৈরি হয়ে যায়। মা-বাবা বাজি নিয়ে আসার কথা বলতে আমি নিজে থেকেই বলেছিলাম, এগুলো ঠিক নয়।

প্রশ্ন: অত ছোট বয়সে বাজি থেকে মুখ সরিয়ে নিয়েছিলেন?

অভিষেক: হ্যাঁ, মা-বাবাও খুব অবাক হয়ে যায়। শুধু আমি নই, আমাদের ক্লাসের বাকিরাও বাড়ি ফিরে এই কাণ্ড করেছিল। ছোটদের এই উপলব্ধির কথা শুনে সকলেই চমকে গিয়েছিল। তবে বাজি ফাটাতে আমার হালকা ভয়ও করত (হেসে)। তাই বাজি ফাটানো, বিকট শব্দ- এ সবের খুব বেশি নস্টালজিয়া তৈরিই হয়নি আমার।

প্রশ্ন: এর পরেই তো দিল্লি। ফলে বাংলার কালীপুজো থেকে একেবারে দূরে…

অভিষেক: না, পুরোপুরি ভাবে তা নয়। আসলে বাঙালিরা যেখানেই যাক না কেন, নিজের চারপাশে এক চিলতে বাংলা তৈরি করে নিতে বেশি সময় নেয় না।

প্রশ্ন: তা বটে। তার মানে দিল্লির ‘দিওয়ালি’কে কালীপুজোতে পরিণত করেই ফেলেছিলেন আপনারা?

অভিষেক: একেবারেই তাই। দিল্লির পুষ্পবিহারে কালীপুজোর আয়োজন করে ফেলল আমার বাবা-মা আর তাদের বন্ধুরা মিলে। প্যান্ডেল খাটিয়ে বড় করে পুজো করত বাঙালিরা। আমরা বাচ্চারাও খুব মজা করতাম। ভোরে উঠে পাঁঠার মাংস খাওয়ার ঘটনাটা সেখানেই। মুম্বই চলে আসার পরে ওই যৌথ উৎসবের আমেজটাই পাইনি আর। দিল্লিতে আমরা অনেক বেশি বাঙালি হয়ে আনন্দ করতাম।

প্রশ্ন: তা ছাড়া মা-বাবা সঙ্গে থাকলে নিজের শিকড়ের সঙ্গে যোগটাও বাড়ে...

অভিষেক: সত্যি তাই। এখন তো মুম্বই শহরে কালীপুজো বা দিওয়ালিতে বাড়িতেই সময় কাটে আর পাঁচটা ছুটির দিনের মতো। বড়জোর রান্নাবান্না করে, বন্ধুদের ডেকে খাওয়াদাওয়া। ওইটুকুই। কেবল মা-বাবা এলে চোদ্দো প্রদীপ জ্বালানো হয়।

প্রশ্ন: তার মানে বাংলার কালীপুজোর জন্য মন খারাপ করার মতো রসদই পাননি কখনও?

অভিষেক: না, খুব আবছা স্মৃতি আসলে। কিন্তু জানেন তো, দুর্গাপুজোর সময়টায় আমার কলকাতা যাওয়ার ইচ্ছেটা বেড়ে যায়। খুব যে সময় কাটিয়েছি দুর্গাপুজোয়, তা কিন্তু নয়। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে মন খারাপ হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিয়ো দেখতে থাকি। কী যে সুন্দর দেখতে লাগে শহরটাকে! প্রতিটি মণ্ডপ এক একটা শিল্পের নিদর্শন। আশ্চর্য লাগে। এ বারও কয়েকটা প্যান্ডেলের ছবি-ভিডিও দেখে চমকে গিয়েছিলাম। পর্দার পিছনে কী ভাবে কাজ হয়, সে দিকে মানুষের নজর যাওয়া উচিত। যে শ্রমিকেরা কাজ করেন, তাঁরাও যে কত বড় শিল্পী! ভার্চুয়ালিই প্যান্ডেল দেখার স্বাদ মেটাই।

প্রশ্ন: তার মানে বাংলার প্যান্ডেল দেখার সুযোগ হয় না খুব একটা?

অভিষেক: বড় হওয়ার পর সুযোগ কমে গিয়েছে। কিন্তু ছোটবেলায় মনে আছে, আমরা আর মাসিরা মিলে একটা গাড়ি ভাড়া করে খড়্গপুরের সমস্ত প্যান্ডেল, তার পরে মেদিনীপুরের সব পুজো দেখতাম। কালীপুজোর থেকে দুর্গাপুজোর স্মৃতি যেন একটু বেশি টাটকা।

প্রশ্ন: অর্থাৎ যে কোনও পুজোতেই পরিবারের কথা মনে পড়ে, তাই না?

অভিষেক: এখন একটা জিনিস বুঝি। উৎসব তখনই উৎসব হয়ে ওঠে, যখন গোটা পরিবার আপনার সঙ্গে থাকে। মুম্বইয়ে আসার পরে দেখেছি, আমাদের আশপাশের অধিকাংশই তাদের পরিবারের থেকে দূরে অন্য শহরে এসে থাকছে। ফলে উৎসব এখন আমাদের কাছে হাউজ় পার্টি হয়ে উঠেছে।

এই প্রতিবেদন ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE