কী বলব? জাতীয় লজ্জা? হ্যাঁ, তাই! নইলে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র বলে অসীম ক্ষমতাধর, বিরল প্রতিভার, পেশা ও ব্যক্তিজীবনে এক হাজার শতাংশ উজাড় করে দেওয়া মানুষটিকে শুধু মহালয়ার আগে পরে আমরা স্মরণ করি!!! একে জাতীয় লজ্জা ছাড়া কী বলব, বলুন তো?
রেলের চাকরির পাট গুটিয়ে আকাশবাণী-তে গিয়ে কী না করেছেন তিনি! বেতার নাটকে তিনি, মহিলা মজলিশে তিনি, শ্রোতাদের চিঠিচাপাটি নিয়ে ‘সবিনয় নিবেদন’য়ে তিনি, ‘মহিষাসুর মর্দিনী’তেও তিনিই! নলিনীকান্ত সরকার তাঁর আত্মজীবনী, ‘আসা যাওয়ার মাঝখানে’তে লিখছেন, ‘‘একটা দিনের কথা বলি, বর্ষাকাল। বৃষ্টির জন্য বাড়ি থেকে বেরোতে পারিনি, সন্ধ্যানাগাদ, দারুণ বৃষ্টি নামল। রেডিয়োটা চালালাম। বীরেন্দ্র ভদ্রের কণ্ঠে ঘোষণা। বললেন, ‘এ বার একটু পিয়ানো শুনুন, বুঝতে পারলাম, প্রথম আর্টিস্ট আসেননি। পিয়ানো বাজিয়ে অভাব পূরণ করলেন বীরেন ভদ্র। দ্বিতীয় আর্টিস্টও অনুপস্থিত। বীরেন ভদ্র ঘোষণা করলেন, ‘এ বার রবীন্দ্রসঙ্গীত।’ বলা বাহুল্য, গায়ক স্বয়ং বীরেন ভদ্র।’’
এমন অসংখ্য ঘটনার স্বরলিপি এই মানুষটি! আসি মহিষাসুরমর্দিনীর কথায়।
আকাশবাণী থেকে তখন অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত হত সরাসরি। কোনও ভুলচুক হলেও শুধরে নেওয়ার উপায় ছিল না। এ দিকে যন্ত্র বেজে উঠতেই আবেগমোথিত গলায় চড়া সুরে, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ বলে চললেন, ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর/ ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা...’।’’
ঘরের সবাই হাঁ। পাশে বসা বাণীকুমার, আরেক প্রবাদপ্রতিম, তিনিও থ। তাঁর বন্ধু এই সব কী বলে চলেছেন! এমন তো হওয়ার কথা নয়। তাঁকে থামানোও যাচ্ছে না। শুধু বাজনদাররা বাজিয়ে চলেছেন। বাকি সবাই কেমন বিহ্বল! একমাত্র পঙ্কজ কুমার মল্লিক অবিচল। এক রাশ বিস্ময় নিয়ে ঘনঘোর মুগ্ধ চাউনি তাঁর। তিনি দেখে চলেছেন তাঁর বন্ধু এবং সহকর্মীটিকে। শুনে চলেছেন তাঁর আলোকিত স্বর্গীয় ধারাবিবরণ! মাঠ়জোড়া শস্যশ্যামলা ফসলের আগাম আঘ্রাণ তিনি বুঝি টের পেয়েছিলেন বীজ বপনের কালেই!
সদ্যস্নাত বীরেন্দ্রকৃষ্ণের গৌরবর্ণ শরীর ঘিরে তখন জ্যোতির্বলয়ের বেষ্টনী। তাঁকে ভেদ করে কার সাধ্যি! সিল্কের কাপড়। গায়ে উড়নি। চোখ অর্ধনিমীলিত। স্তবগানে বিভোর হয়তো’বা তাঁর তাঁর অন্তরাত্মাও। — ‘প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ীর আগমন বার্তা...’।
কোনও ক্রমে ইশারায় সায় দিলেন পঙ্কজ মল্লিক, ‘ঠিক আছে, চালিয়ে যাও।’
এ ভাবে সূতিকা ঘরই বদলে গিয়েছিল বাঙালির অতিপ্রিয় মহালয়ার মুখড়া।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy