Advertisement
Ananda Utsav News

সন্ধিপুজোয় এক মণ চালের নৈবেদ্য

পটুয়াতলা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের পুজোয় বিলিতি কোনও সব্জি ভোগে ব্যবহার করা যায় নাএই বাড়িতে পুজো হয় শাক্তমতে। আগে বলি হত নিয়মিত। তিন দিনে চারটি বলি হত। এখন অবশ্য বলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আঁশহীন মাছ ভোগ দেওয়া হয়। মাছ রান্নায় কোনও পেঁয়াজ দেওয়া হয় না। ঠাকুরকে যা কিছু ভোগ দেওয়া হয় সব নিরামিষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৮ ১০:২৫
Share: Save:

পটুয়াতলার বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে মায়ের আরাধনা প্রতি বছরই খুব ধুমধাম করে হয়। শতাব্দী প্রাচীন বাড়িটার সারা গায়ে অদ্ভুত প্রাচীনত্বের গন্ধ। এই বাড়ির পূর্বপুরুষ হিসাবে যাঁর নাম পাওয়া যায় তিনি বেণীমাধব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন প্রথম বাঙালি অ্যাটর্নি জেনারেল। সেই সময় সুপ্রিম কোর্ট ছিল কলকাতায়। ১৮৪৯ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি অ্যাটর্নির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বিভিন্ন চিঠিপত্রে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায় যে সেই সময়ের সুপ্রিম কোর্টে ইংরেজদের একাধিপত্যর মাঝে এক জন বাঙালির এ হেন কৃতিত্ব এই পদগুলিতে ব্রিটিশদের একচেটিয়া আধিপত্যের অবসান ঘটিয়েছিল। শুধু তাই নয়, অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন, কারণ রানি রাসমণির পরিবার এবং সিমলার দেব পরিবারের মতো বিত্তশালী পরিবারের অ্যাটর্নি ছিলেন তিনি। মারা যাওয়ার সময় প্রচুর ধনসম্পদ তিনি তাঁর ছেলে বিনোদবিহারী বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য রেখে যান। পটুয়াতলার এই বাড়িটি তৈরি করে ১৮৮৯ সালে এখানে পুজো শুরু করেন বিনোদবিহারী।

আগে এই বাড়িতে ঠাকুর তৈরি হলেও, অন্য বনেদি বাড়িগুলির মতো এই বাড়িতে এখন আর ঠাকুর তৈরি হয় না। বিরাট যৌথ পরিবার ভেঙে গিয়ে আত্মীয়স্বজনরা ছিটকে গিয়েছেন নানা দিকে। সেই সময় থেকেই ঠাকুর বাইরে থেকে তৈরি করে আনা হয়। একচালার ডাকের সাজের ঠাকুরকে অলঙ্কার পরানো হয় বাড়িতে আসার পর।

এই বাড়িতে পুজো হয় শাক্তমতে। আগে বলি হত নিয়মিত। তিন দিনে চারটি বলি হত। এখন অবশ্য বলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আঁশহীন মাছ ভোগ দেওয়া হয়। মাছ রান্নায় কোনও পেঁয়াজ দেওয়া হয় না। ঠাকুরকে যা কিছু ভোগ দেওয়া হয় সব নিরামিষ। বোধনে অল্প পরিমাণে ভোগ দেওয়া হয় ঠাকুরকে। সপ্তমী থেকে বড় আকারে ভোগ দেওয়া শুরু হয়।

আরও পড়ুন: ঠাকুরবাড়ির ঈর্ষা জাগাতে বেশ কয়েক বার ঘোরানো হত শিবকৃষ্ণ দাঁয়ের ঠাকুর

এই বাড়িতে অন্নভোগ সাজিয়ে দেওয়া হয় ঠাকুরকে। সপ্তমীর দিন দেওয়া হয় খিচুড়ি, সাদা ভাত, ঘি ভাত আর পায়েস। তার সঙ্গে দিতে হয় পাঁচ রকম ভাজা, লাল শাক আর কলার বড়া। এ ছাড়াও ফুলকপির তরকারি, মোচা, চাটনি। এমন নানা জিনিস রোজ রান্না করে দেওয়া হয়।

সেই প্রাচীন কাল থেকে এই বাড়িতে বিলিতি কোনও সব্জি ভোগে ব্যবহার করা যায় না। গোঁড়া ব্রাহ্মণ বাড়িতে আগে এগুলি ঢোকাই নিষেধ ছিল। এখনও সেই নিয়ম মানা হয় পুজোর সময়। টম্যাটো, কাঁচা লঙ্কা, ক্যাপসিকাম এগুলি সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: বলির সময় পাঁঠাটি ছুটে চলে এল সামনে দাঁড়ানো রামদুলাল দে-র কাছে

সপ্তমী-অষ্টমী-নবমীতে মোট ১২টি মালসা দেবীকে উৎসর্গ করা হয়। এই মালসাগুলিতে সমস্ত খাবার সুন্দর করে সাজিয়ে দেওয়া হয়। ভোগ দেওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ঠাকুরকে পাঁচটা নারকেল নাড়ু আর পাঁচটা পান দেওয়া হয়। মনে করা হয়, ঠাকুর খেয়ে উঠে মিষ্টিমুখ করে পান খাবেন।

এই বাড়ির ভোগের যাবতীয় রান্না করেন বাড়িরা মহিলারা। পুরুষরাও কখনও সখনও হাত লাগান তাতে। তবে এর জন্য তাঁদের দীক্ষিত হতে হয়। সন্ধ্যাবেলা অবশ্য অন্নভোগ হয় না। তখন দেবীকে লুচি মিষ্টি ভোগ দেওয়া হয়। এই সময় দীক্ষিত না হলেও দেবীকে ভোগ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: ষষ্ঠীর দিন আমিষ খেতেই হয় হালদার বাড়ির মেয়েদের

সন্ধিপুজোর দিন ঠাকুরের সামনে এক মণ চালের নৈবেদ্য দেওয়া হয়। নৈবেদ্য সাজিয়ে দেওয়া হয় ফল আর মিষ্টি দিয়ে। সেই সঙ্গে দেওয়া হয় ১০৮টি পদ্ম। এক হাঁড়ি রাবড়ি, এক হাঁড়ি দই, এক হাঁড়ি মিষ্টি— এমন নানা জিনিস একই সঙ্গে দিতে হয় ঠাকুরকে।

অষ্টমী নবমীর দিন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে কুমারীপুজো হয়। পরিবারের প্রধান যিনি পুজোর সংকল্প করেন, তিনিই কুমারী পুজো করেন। দশমীর দিন ঘটে ঠাকুর বিসর্জনের পরে বেড়া অঞ্জলির নিয়ম আছে এই পরিবারে। দেবীর চার দিকে ঘিরে গোল করে তিন বার ঘুরে অঞ্জলি দেন পরিবারর সদস্যরা। এর পর শুরু হয় সুবচনী সত্যনারায়ণ পুজো। বাড়ির মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি রওনা করার আগে তাঁর মঙ্গলকামনায় এই পুজো হয়। এর পর বরণ করে বিসর্জন দিতে নিয়ে যাওয়া হয় দেবীকে।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE