পুরনো বাড়ির লাল মেঝে সবুজ জাফরিতে স্মৃতিভেজা নস্টালজিয়া। রেলিং-এর ধার বরাবর উঠে যাওয়া মাধবীলতা থেকে টুপটাপ ফুল ঝরে পড়ে উঠোনে। গুপ্তিপাড়া থেকে মল্লিকরা ভবানীপুরে এসে যখন বাড়িটি তৈরি করেছিলেন তখন আশেপাশে খুব বেশি বাড়ি ছিল না। ধুমধাম করে সেইসময় অন্নপূর্ণা পুজো হত বাড়িতে। আশেপাশের লোক আসত ভিড় করে। ঠাকুর দেখে প্রসাদ নিয়ে যেত। অন্নপূর্ণা পুজো শুরু করার কিছুদিন পরেই দুর্গাপুজো শুরু করেন মল্লিকরা। যতদূর জানা যায় এর আগে গুপ্তিপাড়ার বাড়িতেও দুর্গাপুজো হত। সেই পুজোর আচার-অনুষ্ঠান ছাপ ফেলেছিল নতুন করে শুরু করা এই পুজোতেও। ১৯২৫ এ রাধাগোবিন্দ মল্লিকের ছেলে সুরেন্দ্রমাধব মল্লিক এই পুজো শুরু করেন। সুরেন্দ্রমাধব মল্লিকের ভাই ইন্দুমাধব মল্লিক ছিলেন খ্যাতিমান মানুষ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা-সদস্যদের অন্যতমইন্দুমাধব ছিলেন ইকমিক কুকারের আবিষ্কর্তা। অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিকের ও কোয়েল মল্লিক এই বাড়ির সন্তান। রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী প্রমিতা মল্লিক এই পরিবারেরই বধূ।
মল্লিকবাড়িতে জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামো পুজো হয়। প্রতিপদ থেকে শুরু হয় চণ্ডীপাঠ। পঞ্চমীর দিন চণ্ডীরঘরের সামনে বোধন হয়। সাবেকি ছাঁদের একচালা মহিষাসুরমর্দিনী রূপে থাকেন দেবী। প্রতিমার চালায় থাকেন মহাদেব। দুর্গার অঙ্গে থাকে ডাকের সাজ। নাকের নথ, গলার হার থেকে সোনার টিপ, দেবীর সব অলংকার পরান মেয়েরা। এরপর বাড়ির পুরুষরা দেবীর হাতে অস্ত্র তুলে দেন। সাজ সম্পূর্ণ হয় প্রতিমার। ঠাকুরদালানের আলো-ছায়ায় ঝলমল করে ওঠে স্নিগ্ধ মাতৃমূর্তি। এই বাড়িতে পুজো হয় বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকামতে।
বাড়ির কুলদেবতা শ্রীধর। তাঁকে পুজো শুরুর সময় দেবীর পাশে ঠাকুরদালানে নিয়ে আসা হয়। দশমীর দিন তুলে দেওয়া হয় উপরে। মল্লিকবাড়িতে কলাবউকে স্নানের জন্য বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় না। সপ্তমীর দিন কলাবউ স্নান হয় বাড়ির উঠোনেই। বৈষ্ণবমতে পুজো হয় বলে এই বাড়িতে বলি হয় না। অষ্টমীর দিন কুমারী পুজো হয়। এরপর সন্ধিপুজো হয়। ১০৮টি প্রদীপ সুন্দর করে সাজিয়ে দেওয়া হয় উঠোন জুড়ে। ঠাকুরকে অন্নভোগ বা ভাজা মিষ্টি দেওয়া হয় না। লুচি , আলু ফুলকপির বা আলুপটলের ডালনা নানারকম ভাজা দেওয়াহয়। এছাড়াও থাকে মিষ্টি, নাড়ু, ফল। অষ্টমীর দিন চালের চূড়া করে নানারকম ফল,মিষ্টি, মেওয়া দিয়ে নৈবেদ্য সাজিয়ে দেওয়া হয়। এদিন রাতে ঠাকুরকে দেওয়া হয় ক্ষীর।