প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

প্রতিমার পায়ে বেঁধে দেওয়া হয় গৃহকর্ত্রীর মাথার চুল!

পরিবারের রীতি অনুসারে দেবীর কাঠামো কখনও বিসর্জন হয় না। সারা বছর তা ঠাকুরদালানে রাখা থাকে।

বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২০ ১৪:৩০

অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আদিগঙ্গার তীরবর্তী ভবানীপুর অঞ্চল ছিল ঘন জঙ্গলে ঘেরা। ১৭৫৩ সালে ইংরেজরা যখন ভাগীরথীর তীরে গড়গোবিন্দপুর অঞ্চলে দুর্গ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন এলাকাবাসীদের অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়। মিত্র পরিবারের আদি বসবাস ছিল গড়গোবিন্দপুরে। ইংরেজদের কেল্লা তৈরির সুযোগ করে দিতে নরসিংহ মিত্রকে তাঁদের কয়েক পুরুষের ভিটে ছেড়ে ১৭৫৩ সালে ভবানীপুর অঞ্চলে চলে আসতে হয়। ভবানীপুর অঞ্চলে জঙ্গল কেটে প্রথম বসতি স্থাপন করেন মিত্ররাই। সেখানেই ১৫ নম্বর নীলগোপাল মিত্র লেনে বসতবাড়ি ও পাঁচ খিলানের ঠাকুরদালান তৈরি করে ১৭৫৭ সাল থেকে শুরু হয় দুর্গোৎসব।

মিত্র পরিবারের প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে। ৯৪০ খ্রিস্টাব্দে মহারাজা আদিশূর কণৌজ থেকে পাঁচ জন ব্রাহ্মণ ও পাঁচ জন কায়স্থকে বাংলায় নিয়ে আসেন। সেই পাঁচ কায়স্থের মধ্যে ছিলেন মিত্র বংশের আদিপুরুষ কালিদাস মিত্র। তাঁরই সপ্তদশ প্রজন্ম নরসিংহ মিত্র গড়গোবিন্দপুর থেকে ভবানীপুরে এসে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তী কালে ১৮৯২ সালে এই মিত্র পরিবারের অ্যাটর্নি সুবোধচন্দ্র মিত্র ১৩ নম্বর পদ্মপুকুর রোডে আলাদা একটি বাড়ি নির্মাণ করে দুর্গোৎসব শুরু করেন। জনশ্রুতি অনুযায়ী এই পরিবারের এক সদস্য দুর্গাপুজো শুরু করার স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন এবং দেবী তাঁর কাছে গয়না চেয়েছিলেন। সেই ব্যক্তি নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী দেবীকে একজোড়া সোনার বালা তৈরি করে দিয়েছিলেন। পরে দেবী স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেছিলেন যে, দু’হাতের গয়নাতেই তিনি সন্তুষ্ট। সেই থেকেই দেবী দ্বিভুজা। প্রথা মেনেই আজও পারিবারিক সোনা এবং রুপোর গয়না দেবীকে পরানো হয়। যেমন মুকুট, নথ, নাকছাবি, মুক্তোর মালা ইত্যাদি।

আরও পড়ুন: প্রতিমার সামনে নাচগানে মাতে বৈষ্ণবদাস মল্লিক বাড়ি

আপাত দৃষ্টিতে দেবী দ্বিভুজা হলেও আটটি ছোট হাত চুলের নীচে ঢাকা থাকে। পরিবারের রীতি অনুসারে দেবীর কাঠামো কখনও বিসর্জন হয় না। সারা বছর তা ঠাকুরদালানে রাখা থাকে।

এ বছর করোনার জন্য পুজো উদযাপন পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

রথের দিন কাঠামো পুজোর মধ্য দিয়ে প্রতিমা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। দেবীর বাহন এখানে পৌরাণিক ঘোটক আকৃতির সিংহ। এখানে সরস্বতী এবং লক্ষ্মীর বাহন থাকে না। এই পরিবারে দেবীকে কন্যারূপে পুজো করা হয়। গঙ্গার ঘাটে নয়, ঠাকুরদালানেই স্নান করানো হয় নবপত্রিকা। সে সময়ে বাড়ির মহিলারা সামনে কাপড় ধরে থাকেন। অতীতে প্রতিপদে দেবীর বোধন হতো। এখন হয় পঞ্চমীতে।

সপ্তমীর সকালে যাঁর নামে সঙ্কল্প হয়, তিনি ধুতি-আংটি দিয়ে পুরোহিতকে বরণ করেন। সপ্তমী থেকে নবমী এই তিন দিনে মোট ১০০৮টি বেল পাতার হোম করা হয়। পুজোর কদিন সকালে দেওয়া হয় চালের নৈবেদ্য ও নানা ধরনের ফল। সন্ধ্যায় শীতল ভোগে থাকে লুচি, রকমারি ভাজা ও মিষ্টি। অষ্টমীর দিন কুমারীপুজো এবং নবমীতে হয় সধবাপুজো। দশমীর দিন অপরাজিতা পুজো এই পরিবারের বিশেষত্ব। পুজো শেষে পরিবারের পুরুষদের ডান হাতে আর মেয়েদের বাঁ হাতে হাতে অপরাজিতার বালা বেঁধে দেয়া হয়। দুর্গাপুজার সময়ে এই পরিবারের গৃহদেবতা লক্ষ্মী-নারায়ণের নিয়মিত পুজোও করা হয়।

রথের দিন কাঠামো পুজোর মধ্য দিয়ে প্রতিমা নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

এই পরিবারে আরও একটি প্রথা প্রচলিত আছে। বিসর্জনের আগে বাড়ির গৃহকর্ত্রী নিজের মাথার চুল প্রতিটি প্রতিমার পায়ে বেঁধে দেন। এর অর্থ, দেবী যেন আগামী বছর আবার এই গৃহে ফিরে আসেন। সপ্তমীর দিন জ্বালানো হয় বড় একটি ঘিয়ের প্রদীপ, যাকে বলে যাগপ্রদীপ। সপ্তমী থেকে বিসর্জনের আগে পর্যন্ত সেটি জ্বালিয়ে রাখা হয়। প্রদীপটি যে পাত্রে রাখা হয়, সেই পাত্রটিতেই জল দিয়ে প্রতিমার সামনে রাখা হয়। এই পাত্রেই দেবীর মুখ ও পায়ের ছাপ দেখে বিসর্জন সম্পন্ন হয়। অতীতে মিত্রবাড়ির পুজোয় পাঁঠা ও মহিষ বলি হলেও পরবর্তীকালে তা বন্ধ হয়ে যায়। এক সময় পুজো উপলক্ষে এখানে যাত্রা অভিনয় করেছেন অহীন্দ্র চৌধুরী, নরেশ মিত্র প্রমুখ।

আরও পড়ুন: করোনা সতর্কতা মেনেই প্রস্তুতি তুঙ্গে বনেদি বাড়ির পুজোয়

পরিবারের বর্তমান সদস্য সুপ্রিয় মিত্র জানান, এ বছর করোনার জন্য পুজো উদযাপন পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে আরতি ও পুষ্পাঞ্জলি লাইভ দেখানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy