Maa Kali worshipped as four sisters in Amadpur village of Bardhaman dgtl
Four Sisters Kali
স্বয়ং মা কালীই পূজিতা হন চার বোন রূপে, আমাদপুরের এই ঐতিহ্যের বয়স প্রায় ৪০০ বছর!
এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বণিকদের বিশ্বাস ও এক সাধুর কালীভক্তির লোকগাথা।
আনন্দ উৎসব ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৫ ১৮:২২
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১০
পূর্ব বর্ধমানের 'কালীগ্রাম' আমাদপুর: আমাদপুর হল পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি থানা এলাকার একটি গ্রাম। যার নাম দূরদূরান্তে পরিচিত। কালীপুজো উপলক্ষে এখানে প্রতি বছর উৎসব হয়। সেই উৎসবের এতটাই জনপ্রিয়তা যে, অনেকে এই গ্রামকে 'কালীক্ষেত্র' বলেও ডাকেন!
০২১০
কালীর চার বোন রূপে আরাধনা: আমাদপুর গ্রামের প্রধান আকর্ষণ হল 'কালীর চার বোন' রূপ! দেবী কালিকা এখানে চার বোন রূপে পূজিতা হন! দেবীর এই রূপগুলি প্রায় ৪০০ বছরের বেশি পুরনো ঐতিহ্য। একই গ্রামে চার বোন রূপে মায়ের এই পুজো বেশ বিরল।
০৩১০
বড় মা, মেজ মা, সেজ মা ও ছোট মা: চার বোনের নাম যথাক্রমে - বড় মা, মেজ মা, সেজ মা ও ছোট মা। গ্রামে ঢুকলেই প্রথমে বড় মায়ের দর্শন পাওয়া যায়। প্রতিমার উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। এর পরে দেখা মেলে বাকি তিন বোনের, তাঁরাও বিশালাকার।
০৪১০
বেহুলা নদী ও সাধুর সাধনক্ষেত্র: এই পুজোর ইতিহাস প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো। এক সময়ে এই গ্রামের পাশ দিয়ে বেহুলা নদী বইত। যার তীরে ছিল মহাশ্মশান। কথিত, সেখানে এক সাধু কালী সাধনা করতেন।
০৫১০
বণিকদের বিশ্বাস ও মা কালীর মাহাত্ম্য: শোনা যায়, দস্যুদের হাত থেকে বাঁচতে বণিকেরা এখানে দেবীর পুজো দিতেন। তাতেই তাঁরা বিপদ থেকে রক্ষা পেতেন! সেই বিশ্বাস থেকেই এখানে কালীপুজোর প্রচলন শুরু। আমাদপুরে দুর্গাপুজোর থেকে কালীপুজোতেই বেশি জাঁকজমক হয়।
০৬১০
বিসর্জন শোভাযাত্রা - এক বিরল দৃশ্য: কালীপুজোর পরের রাতে বিসর্জন শুরু হয়। বিসর্জন উপলক্ষে সারা গ্রামে উৎসবের মেজাজ থাকে। চার বোনকে চতুর্দোলায় (পালকি - আদতে কাঁধে চড়িয়ে) করে নিয়ে যাওয়া হয়। এটি এখানকার পুজোর এক বিশেষ ঐতিহ্য।
০৭১০
অন্ধকারে 'দেবীর নৃত্য' - মশালের আলোয় 'কালী নাচ': রাত ১২টার পরে গ্রামের সমস্ত আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। শুধুমাত্র মশালের আলোয় চলে শোভাযাত্রা। ঢাক ও কাঁসরের বোলে দেবীকে কাঁধে নিয়ে উদ্দাম নৃত্য করা হয়। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবীর মাহাত্ম্যেই এত বড় প্রতিমা নাচে!
০৮১০
সারা রাত গ্রাম পরিক্রমা: বিসর্জন শোভাযাত্রা শুরু হয় রাত ১২টার পরে। সারা রাত ধরে চার বোন গ্রাম পরিক্রমা করেন। সকালে প্রায় ৭টার দিকে এই প্রক্রিয়া শেষ হয়। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এই দৃশ্য দেখতে ভিড় করেন।
০৯১০
জমিদার পাড়ায় চার বোনের মিলন: বিসর্জনের রাতে চার বোন জমিদার পাড়ায় এসে মিলিত হন। সেখানে বেশ কিছু ক্ষণ ধরে চলে তাঁদের নৃত্য। এই মিলন পর্বটি ভক্তি ও আবেগে ভরা থাকে। এর পরে একে একে দেবীদের ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়।
১০১০
ভৈরব ও অন্যান্য দেবীর পুজো: এই গ্রামে চার বোন ছাড়াও একশোরও বেশি কালী মূর্তি আছে! সিদ্ধেশ্বরী, বুড়িমা, ডাকাত কালী — এমন দেবীরও পুজো হয়। কালীপুজোর দিনে এখানে ভৈরবের (মহাদেবের) পুজোও করা হয়। আমাদপুর তার এই বিশেষ ঐতিহ্য নিয়ে প্রতি বছর উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।)