প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner
Kali Puja 2025

অষ্টভুজা মহিষাসুরমর্দিনী কালী হয়ে উঠেছেন কাটোয়ার কালিকাপুরে!

দেবীর নির্দেশ পেয়ে বসে রইলেন না ব্রাহ্মণ। অবশ্য মা ডাক দিলে সন্তান কী ভাবে উপেক্ষা করতে পারে!

তমোঘ্ন নস্কর
শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:৩৬
Share: Save:
০১ ১৭
দেবীর নির্দেশ পেয়ে বসে রইলেন না ব্রাহ্মণ। অবশ্য মা ডাক দিলে সন্তান কী ভাবে উপেক্ষা করতে পারে! একা একাই তিনি এলেন নদীর পাড়ে। “জয় মা” বলে খরস্রোতা তটিণীর জলে ডুবসাঁতার দিয়ে হাতড়ালেন চার পাশ। সময় বাড়ে, বুকে চাপা কষ্ট উঠে আসে। আর পারছেন না তিনি। তবে কী তিনি পাবেন না?  ঠিক, সেই সময়েই নদীর তলদেশে দৃশ্যমান হয় এক অপূর্ব জ্যোতি! ঘন কালো শিলায় খোদিত এক অপরূপা মাতৃ মূর্তি...

দেবীর নির্দেশ পেয়ে বসে রইলেন না ব্রাহ্মণ। অবশ্য মা ডাক দিলে সন্তান কী ভাবে উপেক্ষা করতে পারে! একা একাই তিনি এলেন নদীর পাড়ে। “জয় মা” বলে খরস্রোতা তটিণীর জলে ডুবসাঁতার দিয়ে হাতড়ালেন চার পাশ। সময় বাড়ে, বুকে চাপা কষ্ট উঠে আসে। আর পারছেন না তিনি। তবে কী তিনি পাবেন না? ঠিক, সেই সময়েই নদীর তলদেশে দৃশ্যমান হয় এক অপূর্ব জ্যোতি! ঘন কালো শিলায় খোদিত এক অপরূপা মাতৃ মূর্তি...

০২ ১৭
ব্রাহ্মণ তুলে আনেন সে মূর্তি। কিন্তু স্বপ্নে দেবী যে বলেছিলেন তিনি কালী রূপে পূজিত হবেন। কিন্তু এ যে অষ্টভুজা মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তি! মোষের পিঠে উঠে তাকে বধ করছেন দেবী দুর্গা। অবশ্য সেই ভয়াবহ রণপ্রাঙ্গণে দেবী মুহুর্মুহু রূপ বদল করেছিলেন।

ব্রাহ্মণ তুলে আনেন সে মূর্তি। কিন্তু স্বপ্নে দেবী যে বলেছিলেন তিনি কালী রূপে পূজিত হবেন। কিন্তু এ যে অষ্টভুজা মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তি! মোষের পিঠে উঠে তাকে বধ করছেন দেবী দুর্গা। অবশ্য সেই ভয়াবহ রণপ্রাঙ্গণে দেবী মুহুর্মুহু রূপ বদল করেছিলেন।

০৩ ১৭
সেখানেই মহামায়ার ব্যূহ রচনা করে দেবী দেখিয়েছিলেন, তিনিই দুর্গা, তিনি কৌশিকী, তিনি কাত্যায়নী, তিনিই গৌরী, আবার তিনিই চণ্ডিকা।  তিনিই কালী এবং তিনিই কালরাত্রি! সেই দিন থেকে নদীতীরে সেই গ্রামে দেবী অধিষ্ঠিত হলেন দুর্গা রূপে, অথচ কালিকাকল্পে। তাঁর পুজো কালী ধ্যান ও মন্ত্রেই সাধিত হয়।

সেখানেই মহামায়ার ব্যূহ রচনা করে দেবী দেখিয়েছিলেন, তিনিই দুর্গা, তিনি কৌশিকী, তিনি কাত্যায়নী, তিনিই গৌরী, আবার তিনিই চণ্ডিকা। তিনিই কালী এবং তিনিই কালরাত্রি! সেই দিন থেকে নদীতীরে সেই গ্রামে দেবী অধিষ্ঠিত হলেন দুর্গা রূপে, অথচ কালিকাকল্পে। তাঁর পুজো কালী ধ্যান ও মন্ত্রেই সাধিত হয়।

০৪ ১৭
 দীপান্বিতা অমাবস্যা রাতেই দেবী কালীর মহাপুজো হয়ে আসছে শতাধিক বৎসর ধরে। সেই ছোট্ট অজানা গ্রাম দেবীর পাদস্পর্শে খ্যাত হল কালিকাপুর নামে। মহিষাসুরমর্দিনীর কালী হয়ে ওঠা সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু কাটোয়ার কালিকাপুর অধিষ্ঠাত্রী দেবী কালী অষ্টভুজা মহিষাসুরমর্দিনী কালী!

দীপান্বিতা অমাবস্যা রাতেই দেবী কালীর মহাপুজো হয়ে আসছে শতাধিক বৎসর ধরে। সেই ছোট্ট অজানা গ্রাম দেবীর পাদস্পর্শে খ্যাত হল কালিকাপুর নামে। মহিষাসুরমর্দিনীর কালী হয়ে ওঠা সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু কাটোয়ার কালিকাপুর অধিষ্ঠাত্রী দেবী কালী অষ্টভুজা মহিষাসুরমর্দিনী কালী!

০৫ ১৭
।। গাথা।। দেবীর প্রতিষ্ঠা নিয়ে একটি একশো বছরেরও পুরনো ভাষ্য পাওয়া যায়। কালিকাপুরের অদূরে কুমরি নদী (অধুনা শীর্ণ কুমরির বিল) তীরে কুমরি গ্রাম।

।। গাথা।। দেবীর প্রতিষ্ঠা নিয়ে একটি একশো বছরেরও পুরনো ভাষ্য পাওয়া যায়। কালিকাপুরের অদূরে কুমরি নদী (অধুনা শীর্ণ কুমরির বিল) তীরে কুমরি গ্রাম।

০৬ ১৭
এ গ্রামেরই এক ব্রাহ্মণ স্বপ্নাদেশ পান কুমরি নদী থেকে মূর্তি তুলে এনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কিন্তু তিনি বিষয়টি চেপে যান । তাই অবিশ্বাসীকে দেবী ধরাও দেননি।

এ গ্রামেরই এক ব্রাহ্মণ স্বপ্নাদেশ পান কুমরি নদী থেকে মূর্তি তুলে এনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কিন্তু তিনি বিষয়টি চেপে যান । তাই অবিশ্বাসীকে দেবী ধরাও দেননি।

০৭ ১৭
কালিকাপুরে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ এ বার একই স্বপ্নাদিষ্ট হন। তিনি দ্বিধা করেননি।  নদীতে নামেন এবং ওই অপরূপা মূর্তি পান। দেবীকে নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তখন থেকেই ওই মূর্তি পুজো চলে আসছে।

কালিকাপুরে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ এ বার একই স্বপ্নাদিষ্ট হন। তিনি দ্বিধা করেননি। নদীতে নামেন এবং ওই অপরূপা মূর্তি পান। দেবীকে নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তখন থেকেই ওই মূর্তি পুজো চলে আসছে।

০৮ ১৭
।। মূর্তিতত্ত্ব ও ইতিহাস।।  মূর্তিটি যে কত প্রাচীন, তার কোনও লিখিত তথ্য পাওয়া যায় না।  মূর্তির গঠন শৈলী, বিন্যাস, আভরণ দেবতাগণের উপস্থিতি দেখে অনুমান করা হয় তা পাল-সেন যুগের সমসাময়িক।

।। মূর্তিতত্ত্ব ও ইতিহাস।। মূর্তিটি যে কত প্রাচীন, তার কোনও লিখিত তথ্য পাওয়া যায় না। মূর্তির গঠন শৈলী, বিন্যাস, আভরণ দেবতাগণের উপস্থিতি দেখে অনুমান করা হয় তা পাল-সেন যুগের সমসাময়িক।

০৯ ১৭
পাল যুগের পাথরের মূর্তিগুলির সঙ্গে এর গঠনগত সাদৃশ্য আছে! সেই হিসাবে অন্তত সহস্র বছরের প্রাচীন এই মূর্তি।   গবেষকদের মতে, বর্তমানে যা কুমরি নদী, আদতে সেটাই সপ্ত মাতৃকার এক মাতৃকা কৌমারী নদী। কৌমারী নদীর তীরে এক সময়ে ওই মূর্তি পূজিত হত বা এমনও হতে পারে এই মূর্তি কৌমারী হিসাবেই পূজিত হতেন।

পাল যুগের পাথরের মূর্তিগুলির সঙ্গে এর গঠনগত সাদৃশ্য আছে! সেই হিসাবে অন্তত সহস্র বছরের প্রাচীন এই মূর্তি। গবেষকদের মতে, বর্তমানে যা কুমরি নদী, আদতে সেটাই সপ্ত মাতৃকার এক মাতৃকা কৌমারী নদী। কৌমারী নদীর তীরে এক সময়ে ওই মূর্তি পূজিত হত বা এমনও হতে পারে এই মূর্তি কৌমারী হিসাবেই পূজিত হতেন।

১০ ১৭
কালের নিয়মে মন্দির এক সময়ে ধ্বংস হয়ে যায় এবং নদীর মধ্যে অবহেলায় পড়ে থাকে মূর্তিটি। পরে অষ্টাদশ শতকের গোড়ার দিকে কালিকাপুরের মানুষ মূর্তিটি উদ্ধার করে এনে প্রতিষ্ঠা করেন এবং দেবীর নামেই গ্রামের নাম হয় কালিকাপুর।

কালের নিয়মে মন্দির এক সময়ে ধ্বংস হয়ে যায় এবং নদীর মধ্যে অবহেলায় পড়ে থাকে মূর্তিটি। পরে অষ্টাদশ শতকের গোড়ার দিকে কালিকাপুরের মানুষ মূর্তিটি উদ্ধার করে এনে প্রতিষ্ঠা করেন এবং দেবীর নামেই গ্রামের নাম হয় কালিকাপুর।

১১ ১৭
 বর্তমানে যে জায়গায় মন্দিরটি রয়েছে, সেই জায়গাটি দান করেছিলেন যোগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। কালিকাপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার এখনও নানা ভাবে মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে যুক্ত।

বর্তমানে যে জায়গায় মন্দিরটি রয়েছে, সেই জায়গাটি দান করেছিলেন যোগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। কালিকাপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার এখনও নানা ভাবে মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে যুক্ত।

১২ ১৭
বর্তমানে কালিকাপুরের কালীমন্দিরের সেবায়েত রতন মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, তাঁর  ঠাকুরদার বাবার সময় থেকে তাঁরা দেবীর বংশানুক্রমিক সেবায়েত ও পূজারী। তার আগে বহু সন্ন্যাসী ও গৃহী এই মন্দিরের সেবার দায়িত্ব সামলেছেন।

বর্তমানে কালিকাপুরের কালীমন্দিরের সেবায়েত রতন মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, তাঁর ঠাকুরদার বাবার সময় থেকে তাঁরা দেবীর বংশানুক্রমিক সেবায়েত ও পূজারী। তার আগে বহু সন্ন্যাসী ও গৃহী এই মন্দিরের সেবার দায়িত্ব সামলেছেন।

১৩ ১৭
দেবীর প্রতি অগাধ বিশ্বাস কালিকাপুরবাসীদের। ওই গ্রামে আর অন্য কোনও কালীপুজো হয় না। এমনকী পাশের গ্রাম থেকে কালীর কোনও বিসর্জন শোভাযাত্রাও ঢোকে না কালিকাপুরে। এমনকি কুমরি গ্রামের বাসিন্দারাও এই দেবী ছাড়া অন্য কালীর আরাধনা করেন না।

দেবীর প্রতি অগাধ বিশ্বাস কালিকাপুরবাসীদের। ওই গ্রামে আর অন্য কোনও কালীপুজো হয় না। এমনকী পাশের গ্রাম থেকে কালীর কোনও বিসর্জন শোভাযাত্রাও ঢোকে না কালিকাপুরে। এমনকি কুমরি গ্রামের বাসিন্দারাও এই দেবী ছাড়া অন্য কালীর আরাধনা করেন না।

১৪ ১৭
এক বার খরার সময়ে গ্রামে বীভৎস আগুন লাগে। কিছুতেই আগুন নেভানো যাচ্ছিল না। এমন সময়ে গ্রামের বাইরে ধানজমির আলে এক ব্যক্তি একটি বাচ্চা মেয়েকে হেঁটে আসতে দেখেন। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, কোথায় যাচ্ছো মা ? বাচ্চা মেয়েটি উত্তর দেয়, আমার কালিকাপুর গ্রাম পুড়ে যাচ্ছে, আমি যাবো না ?

এক বার খরার সময়ে গ্রামে বীভৎস আগুন লাগে। কিছুতেই আগুন নেভানো যাচ্ছিল না। এমন সময়ে গ্রামের বাইরে ধানজমির আলে এক ব্যক্তি একটি বাচ্চা মেয়েকে হেঁটে আসতে দেখেন। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, কোথায় যাচ্ছো মা ? বাচ্চা মেয়েটি উত্তর দেয়, আমার কালিকাপুর গ্রাম পুড়ে যাচ্ছে, আমি যাবো না ?

১৫ ১৭
তার পরেই বিনা মেঘে বজ্রপাত হয় এবং গ্রামে বৃষ্টি নামে। আগুন নিভে যায়।

তার পরেই বিনা মেঘে বজ্রপাত হয় এবং গ্রামে বৃষ্টি নামে। আগুন নিভে যায়।

১৬ ১৭
কালিকাপুরে দীপান্বিতা অমাবস্যায় এবং মাঘ মাসে কুমরি গ্রামে দেবীর বিশেষ পুজোপাঠ হয়। কালীপুজো ছাড়াও সব পুজোতেই বিশেষ পুজো পাঠ হয় ওই কালী মন্দিরে। তবে, দীপান্বিতা অমাবস্যা বাৎসরিক পুজো হলেও বলি হয়  না। মানসিক বলি হয়, অন্যান্য তিথিতে।

কালিকাপুরে দীপান্বিতা অমাবস্যায় এবং মাঘ মাসে কুমরি গ্রামে দেবীর বিশেষ পুজোপাঠ হয়। কালীপুজো ছাড়াও সব পুজোতেই বিশেষ পুজো পাঠ হয় ওই কালী মন্দিরে। তবে, দীপান্বিতা অমাবস্যা বাৎসরিক পুজো হলেও বলি হয় না। মানসিক বলি হয়, অন্যান্য তিথিতে।

১৭ ১৭
পথ নির্দেশ ~ হাওড়া কাটোয়া ট্রেন রুটে অগ্রদ্বীপ স্টেশন থেকে পনেরো মিনিটের অটোপথ। তথ্যঋণ: গ্রামের পুরোহিত বংশজ সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য।   (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।)

পথ নির্দেশ ~ হাওড়া কাটোয়া ট্রেন রুটে অগ্রদ্বীপ স্টেশন থেকে পনেরো মিনিটের অটোপথ। তথ্যঋণ: গ্রামের পুরোহিত বংশজ সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy