নিরিশা কালী
বীরভূমের কোণে কোণে এত অজস্র ঐতিহ্যবাহী কালীমন্দির ছড়িয়ে, তার হিসাব রাখা কঠিন বললেই চলে। এ যেন এক অন্য কালী ক্ষেত্র। যার আনাচকানাচে লুকিয়ে নানা অলৌকিক ও বিচিত্র গল্প। তারই অন্যতম এই লালমাটির দেশের ৩০০ বছরের পুরনো নিরিশা মায়ের কাহিনি।
লালমাটির এই জেলায় রয়েছে মোট ৫টি সতীপীঠ। এই সতীপীঠ ছাড়াও আছে কয়েকটি জাগ্রত কালী মন্দির, যে তালিকায় জনপ্রিয় নিরিশা মা। কথিত, এক সময়ে পঞ্চমুণ্ডির আসন রাখা থাকত মায়ের জন্য। ৩০০ বছরের পুরনো সেই রীতিনীতি মেনে আজও পূজিত হন দেবী। কালীপুজোর দিনে শুধু বীরভূম নয়, আশপাশের প্রায় সমস্ত জেলা থেকেই মানুষ ভিড় জমান এই মন্দিরে।
কথিত, প্রায় ৩০০ বছর আগে এই নিরিশা গ্রাম ছিল জঙ্গল। জনবসতি প্রায় ছিল না বললেই চলে। সেখানেই আশপাশের গ্রামবাসীরা এক অমাবস্যার রাতে জঙ্গলের মধ্যে আলো জ্বলতে দেখেন। স্থানীয়রা গ্রামেরই এক বাসিন্দা ডম্বুর বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিষয়টি জানান। গিয়ে দেখা যায়, এক সাধক সেখানে সাধনা করছেন। এই সাধক তাঁর রীতিনীতি মেনে পুজো শুরুর জন্য ডম্বুর বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই কালী পুজোর দায়িত্ব দেন। পরবর্তীতে পুজোর ভার পান ওই গ্রামেরই রায় পরিবার। শোনা যায়, আগে পঞ্চমুণ্ডির আসনে মা কালীর আরাধনা করা হত। এখন প্রত্যেক বছর মন্দির থেকে কিছুটা দূরে মায়ের মূর্তি তৈরি হয়। পুজোর দিনে চক্ষুদানের পরে মুহূর্তের মধ্যেই মা-কে মন্দিরে এনে প্রতিষ্ঠা করা হয়,যা দেখতে সেখানে গভীর রাতেও ভিড় করেন বহু মানুষ।
এই মন্দির ঘিরে আছে কিছু অলৌকিক বিষয়, যা বিশেষ ভাবে নজর কাড়ে। যেমন, প্রতি বছর প্রতিমা তৈরির কারিগর বদলে গেলেও বদলায় না মায়ের মুখমণ্ডল। প্রত্যেক বছর মায়ের রূপ একই থাকে, কোনও বছরই প্রতিমার উচ্চতা ও ওজনের পরিবর্তন হয় না। নিরিশা মায়ের উপরে অটুট ভক্তি মানুষের। এই গ্রাম ও বাইরের অন্যান্য এলাকার মেয়েদের কোনও রোগ হলেই তাঁরা ছুটে যান এই নিরিশা মায়ের কাছে। তাঁদের বিশ্বাস, এখানে মানত করলেই রোগ-জ্বালা থেকে মুক্তি মেলে। এমন বহু অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী বীরভূমের এই নিরিশা মায়ের মন্দির।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy