শারদ সম্মানের ৪০ বছরের পথ চলাকে উদ্‌যাপন করতে সেজে উঠল নস্টালজিয়ায় মোড়া হলুদ ট্যাক্সি

দীর্ঘ পথচলার স্মৃতিকে নতুনভাবে তুলে ধরতে এই বছর দুর্গাপুজোয় ‘এশিয়ান পেন্টস’ নিয়ে এল এক অভিনব উদ্যোগ— ‘চলতে চলতে ৪০’।

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:৪৮
‘চলতে চলতে ৪০’

‘চলতে চলতে ৪০’

প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলা ও বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে ‘এশিয়ান পেন্টস’। এশিয়ান পেন্টসের প্রতিটি উদ্যোগে মিশে আছে বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির উজ্জ্বল ছাপ। দুর্গাপুজোর সৃজনশীলতাকে সম্মান জানাতে ১৯৮৫ সালে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘এশিয়ান পেন্টস শারদ সম্মান’, তা আজ চল্লিশ বছরে পা দিল। তাই, এই দীর্ঘ পথচলার স্মৃতিকে নতুনভাবে তুলে ধরতে এই বছর দুর্গাপুজোয় ‘এশিয়ান পেন্টস’ নিয়ে এল এক অভিনব উদ্যোগ— ‘চলতে চলতে ৪০’। এই উদ্যোগে কলকাতার চেনা পরিচিত হলুদ ট্যাক্সিগুলিকে সাজানো হয়েছে চার দশকের পুরনো স্মৃতি ও শিল্পকলা দিয়ে, যেন প্রতিটি ট্যাক্সি হয়ে উঠেছে চলমান সময়ের এক অনন্য সম্পদ।

‘শারদ সম্মান’ শুরু হয়েছিল এক সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন দিয়ে, যেখানে প্রথমবার দুর্গাপুজোকে কেবল ভক্তির নয়, সৃজনশীলতার উৎসব হিসেবেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। প্রথম বছরেই তিনটি পুজো কমিটিকে দেওয়া হয় ‘শ্রেষ্ঠ পুজো’ সম্মান। পরে যুক্ত হয় আরও বিভাগ — শ্রেষ্ঠ পুজো, বছরের বিস্ময় ও শ্রেষ্ঠ প্রতিমাশিল্পী। এভাবেই পরিসর বাড়তে থাকে, যা চার দশক ধরে কলকাতার দুর্গাপুজোর রূপান্তরকেও সুন্দরভাবে তুলে ধরেছে।

হলুদ ট্যাক্সি – শহরের স্মৃতির অনন্য বাহক

১৯৮০-র বাঁশের প্যান্ডেল আর রেডিয়োর গান থেকে শুরু করে আজকের ডিজিটাল আলো আর ‘এআর’-এর ঝলক, প্রতিটি দশক খুলে দেয় পুজোর নতুন রূপ। যেখানে ট্যাক্সিতে আঁকা ‘রয়্যাল গ্লিট্‌জ়’-এর তুলিতে আঁকা নকশায় রঙের জাদুতে বদলে যায় চলমান ক্যানভাস। সুর আর দৃশ্যপট বিভিন্ন সময়ের আবহ ফুটিয়ে তোলে। কখনও সাদা-কালো নস্টালজিয়া, কখনও উজ্জ্বল আলো-রঙের ঝলক।

কলকাতার হলুদ ট্যাক্সি কেবল যাতায়াতের একটি মাধ্যম নয়, এটি শহরের উৎসবের আবেগে মিশে থাকা এক নীরব সঙ্গী। কখনও কুমোরটুলি থেকে খড়-মাটি বহন করে এনেছে প্রতিমা গড়ার স্বপ্ন, কখনও পরিবারের হাত ধরে ছুটেছে মণ্ডপ পরিক্রমার উচ্ছ্বাসে, আবার কখনও এশিয়ান পেন্টসের শারদ সম্মান বিচারকদের পৌঁছে দিয়েছে অজস্র অলিগলির অন্তরে লুকিয়ে থাকা সৃজনশীলতার আসরে। সেই চেনা ট্যাক্সিকেই শিল্পের ছোঁয়ায় নতুন রূপ দিয়ে ‘এশিয়ান পেন্টস’ জানাল এক অভিনব শ্রদ্ধাঞ্জলি।

কলকাতার চেনা পরিচিত হলুদ ট্যাক্সিগুলিকে সাজানো হয়েছে চার দশকের পুরনো স্মৃতি ও শিল্পকলা দিয়ে

কলকাতার চেনা পরিচিত হলুদ ট্যাক্সিগুলিকে সাজানো হয়েছে চার দশকের পুরনো স্মৃতি ও শিল্পকলা দিয়ে

৪০টি ট্যাক্সি সাজানো হয়েছে প্রতিটি দশকের চিত্র দিয়ে—

১৯৮৫–১৯৯৫: বিক্রমজিত পাল এই দশকের চিত্রায়ণ করেছেন, যখন পুজো এক প্রাতিষ্ঠানিক উদ্‌যাপন থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত কমিউনিটি উৎসবে পরিণত হয়। এই শিল্পকর্মে দেখা যায় নস্টালজিক প্রতীকগুলো, যেমন গাট্টুর সঙ্গে প্রথম ‘এশিয়ান পেন্টস’ শারদ সম্মান বিজ্ঞাপন, রেডিও সেট এবং সেই সময়ের সাংস্কৃতিক বিশেষত্ব।

১৯৯৫–২০০৫: মীনাক্ষী সেনগুপ্ত চন্দননগরের আলো, মণ্ডপ, ফুলের বাজার এবং রাস্তার খাবারের স্টলগুলিকে দেখিয়েছেন। তিনি এই দশককে একটি থিয়েটারের মতো দেখিয়েছেন। হাওড়া ব্রিজের উপর ট্রাম, এক পরিবার এক সঙ্গে রাস্তা পার হওয়া, মণ্ডপের গেটের উপরে ঝলমল করা দেবদেবী। বাঙালি রক সঙ্গীতও এখানে স্থান পেয়েছে। এই দশকেই পুজো হয়ে উঠেছিল এক বৃহত্তর সামাজিক উদ্‌যাপন।

২০০৫–২০১৫: সায়ন মুখোপাধ্যায় পুজোর আনন্দ এবং থিম তুলে ধরেছেন। তাঁর ট্যাক্সিতে দেবীকে পৃথিবী ধরে থাকতে দেখা যায় এবং ‘রয়্যাল গ্লিটজ কার্টেন-রেইজার’ মোটিফগুলি আলোয় ঝলমল করছে। এটি ব্র্যান্ডের সঙ্গে পুজোর সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এই সময়টি ছিল শিল্পী এবং কর্পোরেট স্পন্সরশিপের যুগ, যখন পুজোর থিম সত্যিই বড় হয়ে উঠেছিল।

২০১৫–২০২৫: সৃষ্টি গুপ্তরায় আজকের পুজো দেখিয়েছেন, ডিজিটাল, বহুমুখী এবং আধুনিক। মণ্ডপে আলো, সঙ্গীত ও কনসার্ট মানুষের অনুভূতি ছুঁয়ে যায়। শিল্পী এবং আয়োজনকারীরা নতুন নতুন চিন্তাভাবনার মাধ্যমে মণ্ডপকে বড় করেছেন। বাংলার চেনা প্রতীক যেমন বাঘ, পেঁচা, চা-গ্লাস ও আলপনা রয়েছে তাঁর শিল্পে।

প্রতিটি ট্যাক্সির ভেতর সাজানো হয়েছে এশিয়ান পেন্টসের নিজস্ব রং, বস্ত্র ও দেওয়ালসজ্জা দিয়ে, যাতে প্রতিটি যাত্রাতেই থাকে পুজোর অনুভূতি।

এই প্রসঙ্গে এশিয়ান পেন্টসের কর্ণধার অমিত সিঙ্গল বলেছেন, “১৯৮৫ সালে ‘শারদ সম্মান’ শুরু হয়েছিল পূজোর কল্পনাশক্তিকে সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে। চল্লিশ বছর পরে এটি হয়ে উঠেছে কলকাতার সৃজনশীলতার জীবন্ত দলিল। হলুদ ট্যাক্সি শহরের প্রতিদিনের সঙ্গী, পুজোর স্মৃতি বহন করা এক নীরব সাক্ষী। তাই এই ট্যাক্সি প্রকল্প আমাদের কাছে ‘রাজকীয় শ্রদ্ধাঞ্জলি কলকাতাকে’। আমরা চাই সৃজনশীলতা যেন শুধু বাড়ি বা প্রদর্শনীতে সীমাবদ্ধ না থেকে শহরের রাস্তায়, মানুষের জীবনের ছন্দে ফিরে আসে।”

ট্রাম থেকে ট্যাক্সি

২০২৩ সালে কলকাতার ট্রামের ১৫০ বছর উপলক্ষে একটি ট্রামকে শিল্পের রূপ দেওয়া হয়েছিল। এ বার সেই ভাবনাকেই নতুন মাত্রা দিল ট্যাক্সি প্রকল্প —রেল থেকে রাস্তা, ইতিহাস থেকে বর্তমান।

প্রকল্পের নির্মাতা রুতভা ত্রিবেদী বলেন, “এই ট্যাক্সি প্রকল্প কেবল স্মৃতিচারণ নয়, কৃতজ্ঞতাও। আমরা ধন্যবাদ জানাই এশিয়ান পেন্টসকে, তাঁদের শিল্পীদের, প্রতিটি কারিগরকে, যাঁরা পরিশ্রম করে এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করেছেন। বিশেষ কৃতজ্ঞতা হলুদ ট্যাক্সিচালকদের প্রতি, যাঁরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম পুজোর রাতে কলকাতাকে মানুষদেরকে পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছেন।”

সংবাদপত্রের প্রথম বিজ্ঞাপন থেকে চল্লিশ বছরের ট্যাক্সির যাত্রা, ‘এশিয়ান পেন্টস শারদ সম্মান’ প্রমাণ করেছে, দুর্গাপুজো শুধুই একটি উৎসব নয়, এটি এক বিশাল সৃজনশীল উৎসব। আর সেই উৎসবের সঙ্গে একাত্ম হয়ে, ‘এশিয়ান পেন্টস’ আজও বলছে— “ঐতিহ্যের পুজো, উদ্দীপনার উৎসব।”

পুজোর এই ভিডিয়ো কেবল ইতিহাসকে স্মরণ করায় না, বরং আগামী প্রজন্মকেও আমন্ত্রণ জানায় উৎসবের হৃদয়স্পর্শী রঙিন যাত্রায়।

‘চলতে চলতে ৪০’ —অতীতের ছোঁয়া, আজকের স্পন্দন, আর আগামী দিনের অনুপ্রেরণা।

ভিডিয়োটি দেখুন:

‘এশিয়ান পেন্টস’ ‘শারদ সম্মান’-এর নতুন উদ্যোগ

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ ।

Asian paints royale glitz Sharad Shamman SOS Kolkata

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy