প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

যে কোনও ধর্মকে উৎসাহিত করা এই মণ্ডপের ব্রত!

এ বছর ১১৪ বছরে পা রাখা এই পুজোটাই কলকাতার প্রাচীনতম বারোয়ারি দুর্গাপুজো।

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৩ ১২:৩৬

একটা বারোয়ারি দুর্গাপুজো কমিটির নামের সঙ্গে এমন অপরিচিত, তার চেয়েও বেশি খটমট শব্দ যুক্ত কেন? এই পুজো কমিটির মানে, ভবানীপুর সনাতন ধর্মৎসাহিনী সভা-র যুগ্ম সম্পাদক শিবাশিস দাস আনন্দবাজার অনলাইন-কে বলছেন, ‘‘ধর্মৎসাহিনী শব্দের অর্থ, ধর্মকে উৎসাহ দেওয়া। যে কোনও ধর্মের আরাধনা মানেই সেই ধর্মকে উৎসাহিত করা। মা দুর্গার আরাধনাও তাই।"

আসলে এই খটমট নামের কমিটির দুর্গাপুজোর সংক্ষিপ্ত ইতিহাসও এবার বললে, তার চেয়েও বোধহয় বেশি, পুজোটা কোথায় হয় বললে, নিমেষে এতক্ষণের অচেনা বারোয়ারি দুর্গাপুজোটা ভীষণ চেনা লাগবে প্রায় সবার!

এ বছর ১১৪ বছরে পা রাখা এই পুজোটাই কলকাতার প্রাচীনতম বারোয়ারি দুর্গাপুজো। যেটা সেই ১৯১০ সাল থেকে বরাবর হয়ে আসছে দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরের যেখানটা দিয়ে গঙ্গার খাল গিয়েছে, সেই বলরাম বোস ঘাটে।

এখন গঙ্গার খাল, কিন্তু শতাব্দী প্রাচীন যুগে ওই অঞ্চল দিয়েও বয়ে চলা গঙ্গা প্রশস্ত ছিল। এবং এহেন গঙ্গার এই বলরাম বোস ঘাটে সতীদাহ হত! যার জন্য এখনও এ অঞ্চলের অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ বলরাম বোস ঘাট-কে সতীদাহ ঘাট বলেন। ১৮২৯ সালে এই ঘাটে যে দুটি সতীদাহ হয়েছিল, কোনও এক মুখোপাধ্যায় পরিবারের দুই সদ্য বিধবা তাঁদের মৃত স্বামীদের সঙ্গে সহমরণে গিয়েছিলেন এই ঘাটে, তার ঐতিহাসিক প্রমাণ আছে কলকাতার ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে। জানা যায়, ওই দু’টি সহমরণের ঘটনার যে ফলকদ্বয় বলরাম বোস ঘাটে ওরফে সতীদাহ ঘাটে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তখনকার সতীদাহ প্রথার সমর্থকগোষ্ঠী, সেই ‘অরিজিনাল’ দুটি ফলক এখনও ন্যাশনাল মিউজিয়ামে গেলে দেখতে পাওয়া যায়।

কালক্রমে যে পুজো বলরাম বোস স্ট্রিট ঘাটের দুর্গাপুজো হিসেবে সুপরিচিত হয়ে উঠেছে, ১১৪ বছর আগে কলকাতার সেই প্রথম বারোয়ারি দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন তৎকালীন গীতা মহাসভার সভাপতি খগেন্দ্রনাথ শাস্ত্রী। অতএব এমন পুজো কমিটির নামের সঙ্গে সনাতন ধর্মৎসাহিনী, ধর্মকে উৎসাহ দেওয়ার ব্যাপার থাকবে, সেটাই বোধহয় স্বাভাবিক। এই পুজোর সঙ্গে একসময় শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে প্রেমেন্দ্র নাথ মিত্র, প্রসিদ্ধ অঙ্কের বই রচয়িতা কেশব চন্দ্র (কে সি) নাগ, অভিনেত্রী মলিনা দেবীর মতো নামী ব্যক্তিত্বরা যুক্ত ছিলেন।

অনেক বছর আগে এই পুজোয় নহবত খাটিয়ে তার ভেতর বসে পুজোর পাঁচ দিন সানাই বাজাতেন সানাইওয়ালা। এখন নহবত হয় না। কিন্তু সেই একই সানাইবাদক পরিবারের বংশধরেরা পরম্পরাগত ভাবে মহাষষ্ঠী থেকে বিজয়া দশমী, রোজ সকাল-সন্ধ্যে বলরাম বোস ঘাটের দুর্গাপুজোয় 'লাইভ' সানাই বাজিয়ে চলেছেন প্রতি বছর। দশমীতে শুধু সকালে এই 'লাইভ' সানাই।

তারপর সচরাচর বারোয়ারি দুর্গাপুজোয় যেটা প্রায় আর কোথাও দেখাই যায় না, সেই শ্বেত অপরাজিতা পুজো হয় এখানে। নীল অপরাজিতা ফুল দেখা যায়। শ্বেত বা সাদা অপরাজিতা বিরল। প্রতি বছর বলরাম বোস ঘাটের পুজোর বিজয়া দশমীতে শ্বেত অপরাজিতা পুজোর পরে এহেন বিরলতম গাছের পাতা শুকিয়ে, দড়িতে বেঁধে সেগুলো পাড়াপড়শি, উপস্থিত নরনারীদের পরানো হয় সবার মঙ্গল কামনায়।

গত ১১৩ বছরের মতোই এবারও এই বারোয়ারি দুর্গাপুজো সাবেকি পুজো। থিমের পুজো নয়। ঘাটের ধারে প্রতিষ্ঠিত সুদৃশ পাকা ঠাকুরদালানের সঙ্গে আরও সুন্দর করে সাজিয়েগুছিয়ে প্যান্ডেল বানানো হয় এখানে। এবারও হচ্ছে চট, ঝুড়ি, বিভিন্ন ধরনের পুতুল দিয়ে। বানাচ্ছেন নদিয়ার দীপক বিশ্বাস। গত ৩-৪ বছর ধরেই শিল্পী এই পুজোর সঙ্গে জড়িত। এঁদের একচালার প্রতিমাও পুরোপুরি সাবেকি। এবং সেটা কুমারটুলি থেকে নয়, মা দুর্গা আসেন এই শতাব্দীপ্রাচীন পুজোর থেকে একটু দূরেই পটুয়াপাড়া থেকে।

কীভাবে যাবেন : ভবানীপুরের হরিশ মুখার্জি রোডে হরিশ পার্ক থেকে একটু এগিয়ে উল্টোদিকের গলি বলরাম বোস ঘাট স্ট্রিট। রাস্তার একেবারে শেষে ঘাটের গায়ে এই পুজো।

ভাবনা : সাবেকি পুজো

মন্ডপ শিল্পী : দীপক বিশ্বাস

প্রতিমা শিল্পী : রাজীব পাল

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Durga Puja Pandal Durga Puja 2023
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy