প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

দুর্গতি নাশে মহামারী পুজো

জমিদারি নেই, নেই ঠাটবাটও। তবে দুর্গা মণ্ডপের সামনে সিংহ দুয়ার পুরনো জৌলুস মনে করিয়ে দেয়।

বিশ্বসিন্ধু দে

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৯ ১১:০৩

কামানের তোপ নেই, নেই হাজার টাকার ঝাড়বাতির রোশনাই। তবু পরম্পরা অটুট।

সেই পরম্পরা মেনেই নবমীতে এখনও মহামারী পুজো হয় দাঁতনের আঙ্গুয়া দাস মহাপাত্র জমিদার বাড়িতে। প্রায় আড়াইশো বছর আগে এই পুজোর সূচনা। সেই সময় কলেরা ও বসন্তের প্রাদুর্ভাব ছিল বঙ্গদেশে। মা উমা সেই দুর্গতি সংহার করবেন— এই বিশ্বাসেই শুরু মহামারী পুজোর। আর এখন মহামারী পুজো হয় গ্রামবাসীর দুর্গতিহরণের জন্য।

একেবারে শুরুতে এখানে ঘট পুজো হত। পরে পট পুজো। তারপর এসেছে মূর্তি। সেখানেও আছে বিশেষত্ব। বৈষ্ণব আদলে রসসিক্ত মূর্তিকে শাক্ত মতে পুজো করা হয় এই জমিদারবাড়িতে। পারিবারিক ইতিহাস জানাচ্ছে, ১৭৪০-৪২ নাগাদ বর্গী আক্রমণে ওড়িশার (তখন কলিঙ্গ) খুড়দা থেকে নিরাপদ জায়গা জলেশ্বর পরগণায় চলে আসেন পরিবারের পূর্বপুরুষ বিরিঞ্চি মহান্তি। থাকতেন দাঁতনের পলাশিয়াতে। এক বাঙালি ব্রাহ্মণ জমিদারের মেয়েকে পড়ানো শুরু করেন বিরিঞ্চি। সঙ্গে জমিদারিও দেখাশোনা করতেন। সেই ব্রাহ্মণের থেকেই জমিদারির অংশ পেয়েছিলেন তিনি। আর ব্রাহ্মণ জমিদার কাশীযাত্রা করেন। এরপরেই প্রভাব বাড়তে শুরু করে বিরিঞ্চির। ক্রমে শুরু হয় দুর্গোৎসব। গোড়ায় ঘট পুজো। পরে পট পুজোর প্রচলন করেন রূপনারায়ণ দাস মহাপাত্র। ১৯০০ সাল নাগাদ চৌধুরী যাদবেন্দ্রনাথ দাস মহাপাত্র মূর্তি পুজোর প্রচলন করেন।

মহান্তি থেকে দাস মহাপাত্র হওয়ারও কাহিনি আছে। ধর্ম-কর্মে মতির পাশাপাশি শিক্ষাতেও উন্নত ছিল এই পরিবার। কায়স্থ করণ বংশীয় বিরিঞ্চি মহান্তি জমিদারের প্রধান কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। এই দায়িত্ব যাঁরা পালন করতেন তাঁদের বলা হত মহামাত্য। তাই অপভ্রংশে মহামাত্র থেকে মহাপাত্র হয়েছে। আর কায়স্থ পরিচয় প্রাধান্য দিতে পদবীতে দাসও ব্যবহার করতেন। আবার রাজা বা জমিদারের অনুগত বলেও ‘দাস’ ব্যবহৃত হতে পারে। ফলে মহান্তি হয়ে যায় দাস মহাপাত্র। ব্রিটিশদের থেকে জুটেছিল ‘চৌধুরী’ উপাধি।

সাবেক আমলে এই পুজোয় মঙ্গল গান হত। চণ্ডী মঙ্গল গান দিনে তিনবার, শিবায়ন গান এখনও হয়। বসে যাত্রার আসর। প্রথা মেনে জমিদারের তরবারি নিয়ে ঘটোত্তোলনে যাওয়া হয়। প্রতিপদে ঘট তুলে শুরু হয় পুজো। দেবীর চক্ষুদানের সময় এখনও চাল কুমড়ো বলি দেওয়ার রীতি আছে। বিশ্বাস, জড়কে বলি দিয়ে প্রাণের স্পন্দন জাগানো। প্রতিদিন চালকুমড়োর বলি হয়। সপ্তমীতে সাত, অষ্টমীতে আট, নবমীতে নয় ও দশমীতে একটি বলি হয়। সবই চাল কুমড়ো। তবে নবমীতে এলাকার অনেকেই পুজোতে মানত করে বলির জন্যে চালকুমড়ো দেন।

পুরনো আমলের আতস কাচ ধরে সূর্যের আলো থেকে নেওয়া আগুণে হয় হোমের আগুন। না হলে ‘অগ্নিহোত্রী’ ব্রাহ্মণের বাড়ি থেকে আনা হয় আগুন। আগে একমন ঘি পোড়া হত। এখন একুশ কেজি। উমাকে বরণ করা হয় কন্যা হিসেবে। মাতৃরূপে পুজো। দশমীতে রাবণ বধ এখনও হয়।

জমিদারি নেই, নেই ঠাটবাটও। তবে দুর্গা মণ্ডপের সামনে সিংহ দুয়ার পুরনো জৌলুস মনে করিয়ে দেয়। বহু মানুষের সমাগমও ঘটে। পরিবারের সদস্য আশি বছর বয়সী প্রণব দাস মহাপাত্র বলেন, ‘‘সব ঐতিহ্য তো আর নেই। তবে পরম্পরা ধরে রাখার চেষ্টাটুকু চলছে। কর্মসূত্রে বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পরিজনেরা পুজোর সময় বাড়িতে আসেন।’’

Durga Puja 2019 Ananda Utsav 2019 Durga Puja Celebration
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy