উমা ফিরে যেতে না যেতেই বাংলার কম বেশি প্রতিটি বাড়িই ধনদেবীর আরাধনায় মেতে ওঠে। ধূপ, ধুনো, ফুল, আরতি, শঙ্খধ্বনি ভেসে আসে লক্ষ্মীপুজোর দিন। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হল পশ্চিমবঙ্গের একটি গ্রাম, সেখানে কোনও বাড়িতেই পূজিত হন না লক্ষ্মী।
বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের ঘোষ গ্রাম ‘লক্ষ্মীর গ্রাম’ নামেই পরিচিত, কিন্তু এখানে কোনও বাড়িতেই লক্ষ্মীপুজোর দিন পুজো পান না দেবী। তারাপীঠ থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রাম। আর এখানের কোনও বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো না হওয়ার নেপথ্যে জড়িয়ে আছে এক স্বপ্নাদেশের কাহিনি।
শোনা যায়, এই ঘটনাটি প্রায় দেড় হাজার বছর আগের। এক ব্রহ্মচারী সাধক স্বনাদেশ পান, তার পরই এই গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হন দেবী লক্ষ্মী। সেই থেকে তিনি মন্দিরে পূজিত হন, বাড়িতে নয়।
জনশ্রুতি অনুযায়ী হর্ষবর্ধনের আমলে এক সাধক ব্রহ্মচারী দেবীর আসন খুঁজতে গোটা রাঢ় অঞ্চল ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। সেই সময়ই তিনি একচক্র ধামে কিছু দিন থাকার পর ভরা বর্ষায় ঘোষ গ্রামে এসে পৌঁছান। রাত হয়ে গেলে তিনি সেই গ্রামের একটি নিম গাছের তলায় আশ্রয় নেন। তখনই তিনি স্বপ্নে দেখেন ত্রেতাযুগে রাম, লক্ষ্মণ ও হনুমান বনবাসের সময় এই গ্রামে কিছু দিন থেকেছিলেন। তখন তিনি সেখানেই কঠোর তপস্যা করা শুরু করেন। এক সময় দেবী লক্ষ্মী তাঁকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে আদেশ দেন যে তিনি যেখানে বসে তপস্যা করছেন সেখানেই যেন তাঁর মন্দির গড়ে পুজো করা হয়। একই সঙ্গে দেবী তাঁকে এও জানান যে এই গ্রামের এক কৃষক এই কাজে তাঁকে সাহায্য করবে।
অন্য দিকে তখন ঘোষ গ্রামে বসবাসকারী কৃষক দয়াল ঘোষ মাঠে চাষ করছিলেন। তাঁর সন্তান শ্বেত পদ্ম চায়। তিনি সেই পদ্ম তুলতে গেলে তা বার বার সরে যেতে থাকে। এই ঘটনার পর খানিক হতাশ, খানিক অবাক হয়ে বাড়ি ফেরেন কৃষক। এর পরই দেবী তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন, স্বপ্নেই তিনি জানতে পারেন ব্রহ্মচারীর কথা। কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে তিনি সেই নিম গাছের কাছে ছুটে আসেন। দেখেন সাধক ধ্যান করছেন। তিনি সাধককে সব কথা জানান। ব্রহ্মচারী তাঁকে আশ্বস্ত করেন, এবং সেই নিম গাছ কেটে তৈরি হয় লক্ষ্মীর ছোট কাঠের মূর্তি।
তবে আরেক জনশ্রুতি অনুযায়ী, জলে শ্বেত পদ্মের সঙ্গে এই কাঠও নাকি ভেসে এসেছিল। এর পর সেটা দিয়েই মূর্তি গড়ে শুরু হয় পুজো। সেই পুরনো কাঠের মূর্তি আজও মন্দিরে রাখা। যদিও, পরবর্তীকালে মুর্শিদাবাদের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই অলৌকিক কাহিনি শুনে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৯ সালে দেবীর নবকলেবর উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। তখন নতুন করে দেবীর মূর্তি তৈরি করা হয়।
সেই কারণেই ঘোষ গ্রামে কোনও বাড়িতে আলাদা করে লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয় না, বরং মন্দিরেই পূজিত হন দেবী।
‘আনন্দ উৎসব ২০২৫’-এর সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন একাধিক সহযোগী। প্রেজ়েন্টিং পার্টনার ‘মারুতি সুজ়ুকি অ্যারেনা’। অন্যান্য সহযোগীরা হলেন ওয়েডিং পার্টনার ‘এবিপি ওয়ানস্টপ ওয়েডিং’, ফ্যাশন পার্টনার ‘কসমো বাজ়ার’, নলেজ পার্টনার ‘টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি’, ব্যাঙ্কিং পার্টনার ‘ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’, কমফোর্ট পার্টনার ‘কার্লন’।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।