বছরভর অপেক্ষা শেষ হল বলে! আবারও কৈলাস থেকে উমার মর্ত্যে আগমনের সময় এসে গিয়েছে। ঘরের মেয়েকে বরণ করে নিতে কোমর বেঁধেছে আপামর বঙ্গবাসী। ব্যতিক্রম নয় হাতিবাগানের কুণ্ডুবাড়িও। ক্ষুদিরাাম বোস রোড ও নটী বিনোদিনী সরণীর সংযোগস্থলে অবস্থিত এই বাড়িতে মহামায়া পূজিতা হন ব্যাঘ্রবাহিনী রূপে। মহিষাসুরমর্দিনী এখানে যেন স্বয়ংই প্রকৃতি মাতার প্রতীক।
কিন্তু, যেখানে বাংলার অধিকাংশ জায়গায় দশভুজা সিংহবাহিনী রূপেই আরাধ্যা, সেখানে কুণ্ডুবাড়িতে তিনি ব্যাঘ্রবাহিনী কেন? এর নেপথ্য কারণ নিজেই ব্যাখ্যা করেছেন এই পরিবারের সদস্য জয়দীপ কুণ্ডু।
জয়দীপ নিজে একজন প্রখ্যাত পরিবেশকর্মী ও বন্যপ্রাণপ্রেমী। তাঁর কাজ মূলত বাঘ এবং বাঘ সংরক্ষণ নিয়ে। যেখানে তাঁর সহযোদ্ধা তাঁর স্ত্রী সুচন্দ্রা কুণ্ডু। সাধারণ মানুষকে বাঘ সম্পর্কে সচেতন করতেই তাঁদের বাড়ির দেবী ব্যাঘ্রবাহিনী।
ফাইল চিত্র।
জয়দীপের মতে, বাঘ আমাদের জাতীয় পশু। রাজকীয় এই প্রাণীটিকে রক্ষা ও সংরক্ষণ করা প্রত্যেক ভারতীয়েরই কর্তব্য। আর, দুর্গাপুজো বাঙালির আবেগ, ঐতিহ্য ও পরম্পরা। বাঘ তথা প্রকৃতি রক্ষার তাগিদে তাই কর্তব্য ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধন ঘটানোর চেষ্টা করেছেন কুণ্ডু বাড়ির সদস্যরা। তা ছাড়া, বাঘ এবং দেবী দুর্গা - এই দুই-ই শক্তির প্রতীক। কুণ্ডু বাড়ির পুজোয় সেই ভাবনারও সম্মিলিত প্রকাশ ঘটেছে।
এই বাড়ির দেবী প্রতিমার আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল, এর চালচিত্র। এক চালা কাঠামোর পিছনের এই অংশটিতেও বাঘের নানা প্রতিকৃতি আঁকা হয়। পাশাপাশি, মহামায়া ও তাঁর চার সন্তানকে ঘিরে থাকে নানা প্রজাতির প্রাণী - যেমন - মাছ, পাখি, পশু, সরীসৃপ ও পতঙ্গ। এই পুরো ভাবনাটাই আসলে পরিবেশ রক্ষার বার্তা বহন করে। পাশাপাশি, প্রতিমার সাজ তৈরি করা হয় জৈব-পচনশীল শোলা দিয়ে। সঙ্গে ব্যবহার করা হয় কেবল মাত্র ভেষজ রং।
কাজের সূত্রেই কুণ্ডু দম্পতির সঙ্গে সুন্দরবনের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। এ বারের শারদোৎসবে কলকাতার পুজো দেখাতে সেখানকারই ২৫টি শিশুকে শহরে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা। এক দিনের জন্য তারা কলকাতায় আসবে, বিভিন্ন বিখ্যাত পুজো দেখবে, তার পর ফিরে যাবে। মাঝে কুণ্ডু বাড়িতেই তারা ভোগ প্রসাদ খাবে। একই সঙ্গে, এ বার এখানে এক দিনের জন্য ভোগ রাঁধার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রন্ধনশিল্পী পিনাকী রায়।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।