কলকাতার পুজো মানেই নতুন কিছু দেখার প্রতিশ্রুতি। হাতিবাগান সর্বজনীন এ বার সেই প্রত্যাশায় যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। ৯১তম বছরে তাদের থিম— ‘অথঃ ঘাট কথা’। শহরের গঙ্গার ঘাট, যেগুলি এক দিন ছিল আড্ডার আসর, নাটকের মহড়া, কুস্তির মঞ্চ কিংবা পুজো-পার্বণের কেন্দ্র— আজ সেগুলি সময়ের ধুলোয় প্রায় বিস্মৃত। সেই ভুলে যাওয়া গল্পই এ বার ফিরে আসছে পুজোর মণ্ডপে।
সংগৃহিত চিত্র
থমাস হেনরিয়ট, ফরাসি এই শিল্পী আমাদের এই ঘাটগুলির পুরোনো গৌরব ফিরিয়ে আনতে চেয়েছেন। জিয়াং অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস-এর এই প্রাক্তনীর ছবি স্থান পেয়েছে প্যারিস আর্ট ফেস্টিভ্যালে। সেই তিনিই এ বার হাতিবাগানের মণ্ডপের জন্য হাতে এঁকেছেন ২২ ফুট বাই ৪ ফুটের ক্যানভাস। সেখানে ২০,০০০ সোনালি সুতোয় ফুটিয়ে তুলেছেন গঙ্গা পাড়ের জীবনের এক নিখুঁত ছবি। এই কাজ করতে তিনি শুধু তুলি আর সুতো নয়, সঙ্গে নিয়ে এসেছেন এক অন্য রকম অনুভূতি। সেই অনুভূতির প্রকাশ দেখতে, শিল্পীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন বাংলার ঘরের ছেলে তাপস দত্ত এবং পরিমল পাল। তাঁদের সম্মিলিত প্রয়াস একাকার হয়ে গেছে বাঙালির আবেগ আর ফরাসি শিল্পের মিশেলে।
সংগৃহিত চিত্র
মুম্বই বা বারাণসীর ঘাটের মতো কলকাতার ঘাটগুলোও এক দিন ছিল প্রাণবন্ত, সচল। আজকের প্রজন্ম হয়তো সেই ঘাটগুলির আসল রূপ দেখেনি, তাদের কাছে এই ঘাটগুলি কেবল ইতিহাসের পাতায় বা ছবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। হাতিবাগানের এই থিম শুধু একটি পুজো মণ্ডপ নয়, বরং একটি জীবন্ত ক্যানভাস, যা এই প্রজন্মের কাছে তুলে ধরছে আমাদের শহরের পুরনো স্মৃতি। এই থিম যেন আমাদের আবারও মনে করিয়ে দেয় যে ঐতিহ্য আমরা হারাতে বসেছি, তাকে বাঁচিয়ে রাখা কতটা জরুরি।
সংগৃহিত চিত্র
ইতিমধ্যে থমাসের এই কাজ সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের নানা আর্ট ফোরামে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। প্রতি বছর হাতিবাগান সর্বজনীন-এর মণ্ডপে লাখ লাখ মানুষের ভিড় হয়, আর এ বছর এই ভিড় যেন আরও একটু অন্য রকম হতে চলেছে বলেই অনুমান করা হচ্ছে। মানুষ আসছেন শুধু দেবী দুর্গাকে দেখতে নয়, শিল্পীর অসাধারণ সৃষ্টিকেও চাক্ষুষ করতে। তাই এই পুজোয় এক বার হাতিবাগানের দিকে ঢুঁ মারতেই পারেন, যেখানে এক ফরাসি শিল্পীর চোখে দেখবেন কলকাতার গঙ্গার পাড়।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।