চন্দননগর মানেই আলোর রোশনাই, আর তার সঙ্গে মিশে আছে সুউচ্চ জগদ্ধাত্রী প্রতিমার টানটান আকর্ষণ। ঘাড় কাত করে সেই সুবিশাল মাতৃমূর্তি না দেখলে যেন উৎসবের আনন্দ পূর্ণতা পায় না। এর মধ্যে কিছু পুজো যেমন আশি বছরের পুরনো, তেমনই কিছু পুজোর বয়স প্রায় আড়াইশো বছর। প্রতি বছর এই ঐতিহ্যবাহী পুজো দেখতে হাজার হাজার ভক্তের ভিড় জমে এই প্রাচীন শহরে।
এরই মধ্যে চন্দননগরের এক বিশেষ আকর্ষণ হল 'রানি মা'। শিব মন্দিরের কাছে তেমাথা সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজোয় মায়ের এই রূপ দেখতে সবাই ছুটে আসে। সুবিশাল প্রতিমা, টানা টানা চোখ, এক কথায় চোখ ফেরানো কঠিন! এই তেমাথা জগদ্ধাত্রী দেবীই কেন 'রানি মা' নামে পরিচিত হলেন, তার পিছনে রয়েছে এক চমৎকার কাহিনি।
জনশ্রুতি বলে, এই পুজোর শুরু পরাধীন ভারতে, যখন চন্দননগরে ফরাসিদের উপনিবেশ ছিল। কেউ কেউ বলেন, ফরাসি সরকারের দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী, যিনি ছিলেন নদীয়াপতির বন্ধু, তিনি কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজো দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে চন্দননগরে পুজো শুরু করেন। যদিও এই কাহিনি নিয়ে কিছুটা দ্বিমতও আছে। কিন্তু একটি বিষয়ে সবাই এক মত, সেই সময় চন্দননগরে বেশি রভাগ জগদ্ধাত্রী প্রতিমা সেজে উঠত সাদা ডাকের সাজে।
আরও পড়ুন:
ঠিক এখানেই ছিল তেমাথার মায়ের বিশেষত্ব। যখন চারপাশের সব প্রতিমা ডাকের সাজে সজ্জিত, তখন কেবল এই শিব মন্দির তলার তেমাথার প্রতিমাকে সাজানো হতো সোনালি সাজে। যেন স্বয়ং রাজরানি! মায়ের সেই রাজকীয় বেশ আর সোনালি সজ্জার জন্যই দেবীর এই নাম— 'রানি মা'। আজও সেই ধারা বজায় আছে। প্রায় ৩৫ ফুট উচ্চতার এই প্রতিমা তৈরি করতে লাগে প্রায় ৩৫ মন খড় এবং ১০০০ কেজি মাটি, যার জন্য লোহার কাঠামো ব্যবহার করা হয়। লক্ষ্মীপুজোর পর থেকেই শুরু হয়ে যায় এই রানি মায়ের প্রতিমা তৈরির কাজ। বুড়ো শিবের আরাধনার পরেই শুরু হয় চন্দননগরের এই রানি মায়ের উৎসব। মায়ের সেই অপরূপ রূপ দেখতে আজও দূর দূরান্ত থেকে ভিড় জমান অগুনতি মানুষ।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।