প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

ইতিহাসের পথ বেয়ে বর্তমানে, মেদিনীপুরের দীপলক্ষ্মী পুতুলে ধরা বাংলা তথা ভারতের সংস্কৃতি

দীপাবলীর আগে মেদিনীপুরে এক বিশেষ পুতুলের দেখা মেলে। এই অন্য রকম পুতুলটি কেবলমাত্র দীপাবলির আগেই দেখতে পাওয়া যায়। একে দীপলক্ষ্মী পুতুল বলা হয়।

তমোঘ্ন নস্কর

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৪ ১২:৪৫
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

দীপ হাতে সার সার দাঁড়িয়ে আছেন পুরনারীরা। রাজপথ থেকে প্রাসাদ, জানলা আলোয় আলোকিত। আর তার মধ্যে দিয়ে সুসজ্জিত রথে চেপে আসছেন রাম-সীতা। দীপ হাতে সেই মেয়েরাই হয়ে গেল কালজয়ী পুতুল।

ডুরে পাড় শাড়ি কন্যার, মুখখানি তার টোপা,

ঊর্ধ্বে তুলে দুইটি হাত, প্রদীপ ধরা ঝাঁকা।

দীপাবলীর আগে মেদিনীপুরে এক বিশেষ পুতুলের দেখা মেলে। এই অন্য রকম পুতুলটি কেবলমাত্র দীপাবলির আগেই দেখতে পাওয়া যায়। একে দীপলক্ষ্মী পুতুল বলা হয়। মূলত দীপাবলির রাতের প্রদীপসজ্জার সঙ্গে এর গভীর সম্পর্ক।

দীপান্বিতা বা দীপাবলির অনেকগুলি পৌরাণিক মতামতের মধ্যে একটি হল- অযোধ্যা নগরীতে রাম-সীতার প্রত্যাবর্তনের কাহিনি। বলা হয়, রাবণ বধ করে, বনবাস শেষ করে সীতাকে নিয়ে রামচন্দ্র যে দিন অযোধ্যায় ফিরে আসেন, সে দিন ছিল কার্তিক অমাবস্যা। কিন্তু অযোধ্যা নগরীতে সেই অন্ধকার রাতই হয়ে ওঠে সবচেয়ে আলোকিত রাত। নগরীর পথে দুই ধারে, প্রাসাদের শীর্ষে সুসজ্জিত নারীরা প্রদীপ হাতে আলোয় অভ্যর্থনা জানান তাঁদের রাজা-রানিকে। সে দিন থেকেই সেই নারীদের অনুকরণে এই দীপলক্ষ্মী পুতুল গড়ে ওঠা শুরু।

সুপ্রাচীন কাল থেকেই এই দীপলক্ষ্মী পুতুলের উল্লেখ পাওয়া যায় সংস্কৃত ভাষার নানা পুঁথিপত্রে। জ্যোতির্লক্ষ্মী স্তোত্রম বলছে-

“জ্যোতিস্স্বরূপিণী মাতা দীপলক্ষ্মী সুমঙ্গলা।

সা মাং পাতু সদা ক্ষেমমঙ্গলপ্রদমাতৃকা॥”

অর্থাৎ, মা দীপলক্ষ্মী সুমঙ্গলা সাক্ষাৎ জ্যোতি! তিনি মঙ্গলময়ী মা।

এ বার আসা যাক এর গড়ন ও গঠনের কথায়। এই পুতুলের গড়নের কথা ছড়ার পংক্তিতেই রয়েছে। মূলত তলার অংশটি অর্থাৎ কোমর থেকে নীচের অংশটি তৈরি হয় কুমোরের চাকে। মাঝের অংশটি, অর্থাৎ কটি দেশ হতে উর্ধ্বাংশ ছাঁচে ফেলে গড়া হয়। তার পরে দুই পাশ থেকে বাড়ানো হাত এবং একটি, দু’টি, তিনটি বা পাঁচটি প্রদীপ। হাত দিয়ে টিপে টিপে তা গড়ে দেন মৃৎশিল্পী। কোথাও নারীমূর্তি দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কোথাও নারীমূর্তি ঘোড়ায় চড়ে মাথার উপরে প্রদীপের ঝাঁকি ধরে আছেন। এই পুতুল রোদে তাতানো হয় এবং তার পরে ভাটিতে ফেলে শক্ত করা হয়। শেষে ইচ্ছামত রং করা হয় তাকে।

এই পুতুলের ইতিহাস সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়, তা বলে- সিপাহী বিদ্রোহের কালে মানুষ লাগাতার স্থান পরিবর্তন করতে থাকে। সে ভাবেই কিছু কর্মকার ও শিল্পী ঝাড়খণ্ড অঞ্চল পেরিয়ে বর্তমান পুরুলিয়া জেলার বলরামপুর, ছাতাটাঁড় ও কুক্কড়ু গ্রামে বসবাস করতে শুরু করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাঁসাইয়ের নরম মাটির লোভে তাঁরা ক্রমশ সেই দিকে সরে আসতে থাকেন এবং মেদিনীপুরের মির্জাপুরে এসে থিতু হন। এখন এই দীপাবলির পুতুল কেবলমাত্র মেদিনীপুরের মির্জাপুরেই পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পুতুলের সংস্কৃতি প্রায় ২০০ বছরের পুরনো।

অনেকে এই পুতুলের সঙ্গে আবার ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈয়ের মিল খোঁজেন। ঘোড়ায় চড়া দীপলক্ষ্মী পুতুলটি নাকি সিপাহী বিদ্রোহকালীন ঝাঁসির রানির প্রতীক। ঘোড়ায় চেপে তিনি দু’হাতে বিদ্রোহের আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন। যেহেতু ১৮৫৭-এর আশপাশে শিল্পীদের এই যাযাবর দশাটি পরিলক্ষিত হয়, তাই এমন ধারণা।

দীপাবলির আগে বিক্রি হয় এই মাটির পুতুল। মির্জাপুর থেকে নানা গ্রাম-শহরে ছড়িয়ে পড়ে এই পুতুলগুলি সুসজ্জিত দোকানে থেকে ফুটপাথ, সর্বত্রই সাজানো থাকে এর পসরা। চোখে পড়লে আপনিও কিনতে পারেন এই পুতুল। তার পরে একটু তেল আর সলতে দিয়ে জ্বালিয়ে দেখুন না... আপনার সঙ্গে সঙ্গে আলোকিত হবে শিল্পীর পরিবারও।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Ananda Utsav 2024 Kali Puja 2024 Diwali 2024 festive season midnapore
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy