‘কালী-কার্তিক’এর দেশ বাঁকুড়ার প্রাচীন শহর হল সোনামুখী। বাঁকুড়া জেলাতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে হয়ে থাকে প্রচুর কালীপুজো। সোনামুখীর ‘হটনগর কালীপুজো’ তার মধ্যে সবথেকে বিখ্যাত। সারা বছর নিত্য পুজো হয় এই মন্দিরে। আর কার্তিক মাসের অমাবস্যায় তিথি মেনে সাড়ম্বরে হয় কালীপুজো।
নানা কাহিনি প্রচলিত এই মন্দিরের স্থাপনাকে ঘিরে। এটির এমন নামকরণ নিয়ে অনেকে বলেন যে হট যোগী নামের এক সিদ্ধপুরুষ পুজো করতেন এই মন্দিরে, তাই এমন নাম। আবার কারও মতে দেবী হঠাৎ করে এসেছিলেন বলে এই রকম নাম এই কালীমায়ের।
এর মধ্যে একটি লোককথা সবচেয়ে জনপ্রিয়, যেখানে সাড়ে চারশো বছর আগের এক বৃদ্ধার কাহিনী স্থানীয় লোকের মুখে মুখে ফেরে। তারিণী সূত্রধর নামের ওই বৃদ্ধা বড়জোড়ার নিরশা গ্রামে চিড়ে বিক্রি করতে যেতেন। তাঁর সঙ্গে থাকত ঝুড়ি। প্রতিদিন জঙ্গলের পথে হেঁটে ফেরার সময় তাঁর সঙ্গে দেখা হত লাল পাড় শাড়ির একটি ছোট্ট শ্যামবর্ণা মেয়ের। মেয়েটি রোজই তাঁর কাছে আবদার করত তাকে সোনামুখী নিয়ে যাওয়ার জন্য। বৃদ্ধার কাছে এক দিন এভাবেই সে জেদ ধরে বসল। তারিণী তাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে রাজি হলেন। তবে এ দিকে আর এক বিপদ! মেয়েটি একটু পরেই তাঁর কোলে উঠতে চাইল। ছোট্ট শিশু পথশ্রম নিতে পারে না আর। শেষে তারিণী তাঁকে নিজের মাথার ঝুড়িতে বসিয়ে নিলেন। তবে একটু দূরে গিয়েই খেয়াল হল, মাথায় এ যে শুধু দুখানি পাথর, মেয়েটি নেই!সেই রাতে বৃৃদ্ধা স্বপ্ন পান যে, মেয়েটি মা কালী নিজেই। দেবী তাঁকে পুজো শুরু করার নির্দেশ দেন।
এ দিকে, সূত্রধর সম্প্রদায়ের মানুষের পুজোর কাজে হাত দেওয়া তখন বারণ!দেবীর কোপে অসুস্থ হয়ে পড়লেন মন্দিরের পুরোহিত স্বয়ং। আশপাশের অঞ্চলে নামল চিন্তার ছায়া। শেষে স্থানীয় জমিদার পত্নী কাদম্বরী দেবীর প্রদান করা জমিতে গড়ে ওঠে হটনগরের এই জাগ্রত কালী ঠাকুরের মন্দির। সেই মন্দিরের সামনে এখনও আছে তারিণী সূত্রধরের মুর্তি। মাথায় ঝুড়িতে চড়ে ছোট্ট শিশুর রূপে কালী মা। মা কালীর নির্দেশে সেই পাথর দু'টি নাকি রাখা হয়েছিল একটি আকড় গাছের নীচে। এখনও অনেকে বলেন, ঋতুর সঙ্গে পরিবর্তন হয় পাথর দু'টির রঙ, পুজো করা হয় তাদেরও!
এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy