দুর্গাপুজোর আর বেশি দিন বাকি নেই। আকাশে-বাতাসে যেন উৎসবের গন্ধ। শহর জুড়ে প্যান্ডেলের কাজ শুরু হয়ে গেছে, কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। এর মধ্যেই নতুন এক ঝলক সবার নজর কেড়েছে। কলকাতার কুমোরটুলির এক সরু গলির স্টুডিয়োতে নজর কাড়ল শিল্পী ইন্দ্রজিৎ পালের প্রতিমা। তাঁর হাতের নিপুণতায় দেবী দুর্গার চোখে বসছে চকচকে পাথর বা ‘আমেরিকান ডায়মন্ড’। শিল্পী ইন্দ্রজিৎ পাল আনন্দবাজার ডট কম-কে বলেছেন, ‘‘প্যান্ডেলের আলো পড়লে, ওই চোখে যেন প্রাণ আসবে। ঠিক যেন ত্রিনয়নের ঝলক।’’
নিজস্ব চিত্র
গত কয়েক বছর ধরে যিনি ‘করোনাসুর’ আর ‘ডেল্টাসুর’-এর মতো নতুন ভাবনায় দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে নজর কেড়েছেন, সেই ইন্দ্রজিৎ এই বার দুর্গার চোখকে এক ভিন্ন রূপে সাজিয়েছেন। সাধারণ রং-তুলি ছেড়ে তিনি প্রতিমার চোখে ব্যবহার করছেন ঝকঝকে হিরে। যা রোদের আলো পড়লে জ্বলে উঠবে, আর প্যান্ডেলের আলোয় তৈরি করবে এক মায়াবী তিন মাত্রার (থ্রিডি) প্রভাব।
দেবীর চোখের চার কোণে ছোট-বড় আমেরিকান হিরে ব্যবহার করা হয়েছে। চোখের মাঝখানে আছে আরও দুটো ছোট হিরে, যা আলোর প্রতিফলন আর প্রতিসরণে চোখগুলোকে জীবন্ত করে তুলবে। সঠিক কোণ থেকে আলো পড়লে মনে হবে যেন প্রতিমায় প্রাণ রয়েছে। এই ভাবনাটা প্রথমে তাঁর ওয়ার্কশপে একটা সাধারণ পরীক্ষা হিসাবে শুরু হলেও, এখন সেটাই পুজোর আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।
সংগৃহীত চিত্র
৫৪ বছর বয়সী এই শিল্পী ৪০ বছর ধরে এই পেশায় থাকলেও, তাঁর শিল্প কীর্তি চর্চায় উঠে আসে আজ থেকে ১৫ বছর আগে। পুজো ছাড়াও তিনি সিনেমার কাজও করেন। বেশ কিছু স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ও টেলিফিল্ম পরিচালনা করেছেন, এর মধ্যে ২০২৩ সালে নির্মিত 'রেড রোজ' উল্লেখযোগ্য। তবে সিনেমার জগৎ নয়, প্রতিমা গড়াই তাঁর সব চেয়ে পছন্দের কাজ।
এই বছর কুমোরটুলিতে বৃষ্টির কারণে প্রতিমা শুকোতে অনেক সমস্যা হলেও, শিল্পীরা পাখা চালিয়ে কাজ করছেন। এমন প্রতিকূলতার মধ্যেও এই হিরের দুর্গা তৈরি হয়েছে যা ১১ ফুট উঁচু, আর এর দাম ১.৫-২ লাখ টাকা। শুধু কলকাতাই নয়, দেশের বাইরেও বহু প্রতিমা কুমোরটুলি থেকে পাঠানো হচ্ছে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।