প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

এক বার নয়, একাধিক বার জগদ্ধাত্রী রূপে ধরা দেন সারদা দেবী!

মা সারদার বাল্যকালেই তাঁর মধ্যে দেবত্ব ও মানবত্বর অত্যাশ্চর্য মিশ্রন ঘটেছিল।

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৫ ২১:০২
প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

তাঁর সঙ্গে কখনও কারও ঝগড়া হয়নি। ছেলেবেলার সঙ্গিনী অঘোরমণি স্মৃতিকথায় বলেছিলেন, 'মা খুব সাদাসিধে ছিলেন। সরলতা যেন মূর্তিমতী। অন্যান্য মেয়েদের মধ্যে মাঝে মাঝে ঝগড়া হলেও মিটিয়ে দিতেন।' মা সারদার বাল্যকালেই তাঁর মধ্যে দেবত্ব ও মানবত্বর অত্যাশ্চর্য মিশ্রন ঘটেছিল। কন্যা সারদমণির জন্মলগ্নের আগে থেকে মা শ্যামাসুন্দরী এবং বাবা রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায় বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করতেন।

শ্রীমায়ের নিজের কথায়, 'ছেলেবেলায় দেখতুম আমারই মতো এক মেয়ে সর্বদা আমার সঙ্গে সঙ্গে থেকে আমার সকল কাজের সহায়তা করত- আমার সঙ্গে আমোদ আহ্লাদ করত। কিন্তু অন্য কেউ এলেই সেই মেয়েটিকে আর দেখতে পেতেম না।' তাঁর জীবনের প্রায় ১০-১২ বছর পর্যন্ত এ রকম চলেছিল।

এক বার জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় হলদেপুকুরের স্থানীয় ব্যক্তি রামহৃদয় ঘোষাল গ্রামে উপস্থিত ছিলেন। ছোট্ট সারদামণিকে জগদ্ধাত্রীর সামনে ধ্যান করতে দেখে তিনি অবাক হয়ে অনেক ক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলেন। কিন্তু কে জগদ্ধাত্রী আর কে মা কিছুই ঠিক করতে পারলেন না। তখন ভয়ে স্থানত্যাগ করলেন।

শ্রীমাকে ঘোষাল মহাশয়ের জগদ্ধাত্রীরূপে দেখা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মায়ের অনুগামিনী সহায়িকা বাসনাবালা নন্দীরও অনুরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। দশ বছর বয়সে মায়ের বাড়িতে কাজ করতে আসেন তিনি। মায়ের প্রয়াণ পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে ছিলেন। এক বার জয়রামবাটীতে থাকাকালীন পাশের গ্রামে জগদ্ধাত্রী পুজো দেখতে যাওয়ার জন্য করে মায়ের কাছে খুব কান্নাকাটি করছিলেন। কিন্তু মা একা মেয়েকে ছাড়তে নারাজ। সে দিন রাতে এক অপার্থিব ঘটনার সাক্ষী হলেন তিনি। মায়ের পায়ে তেল মালিশ করার সময় তিনি বাসনাবালা দেবীকে বললেন,‘তুই যা দেখার জন্য ব্যস্ত হয়েছিস তা তুই এখানে বসেই দেখতে পাবি।’ এ দিকে তেল মালিশ করতে করতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বাসনাবালা। অনেক রাতে হঠাৎ ঘুম গেল ভেঙে। তাকিয়ে দেখেন, গোটা ঘর ভরে গিয়েছে এক অদ্ভুত আলোয়। এমন আলো তিনি আগে কখনও দেখেননি। আর সেই আলোর মধ্যে বসে আছেন জীবন্ত মা জগদ্ধাত্রী। কিন্তু মা কোথায় নেই! প্রচন্ড ভয়ে তিনি মাকে ডাকতে লাগলেন।

দরজার খিল খুলে বাইরে এসেও কোথাও মায়ের দেখা পেলেন না। ঘরে ফিরে দেখেন, মা যেমন শুয়েছিলেন, তেমনি ঘুমোচ্ছেন। তবে ঘরের মধ্যে সেই স্বর্গীয় আলো আর নেই। এ বার শ্রীমাকে ডাকতে তিনি উঠে বসলেন, বললেন, ‘তুই দেখেছিস তো?’ বাসনাবালা দেবী মাকে সব বললেন তিনি কী দেখেছেন। শুনে মা হাসলেন। বললেন, 'যা দেখেছিস সব সত্যি…. '

এক বার গ্রামের কালী পুজোয় শ্যামাসুন্দরী দেবী নৈবেদ্য দানে বঞ্চিত হন। সে রাতেই এক রক্তবর্ণা দেবী তাঁকে দেখা দেন। বলেন, মা কালীর জন্য রাখা চাল তিনি গ্রহণ করবেন। তিনিই জগদম্বা। এই ঘটনার পর থেকে জগদ্ধাত্রী রূপে জয়রামবাটির শ্যামাসুন্দরী গৃহে তাঁর পুজো শুরু হয়। প্রথম চার বছর এই পুজোর সংকল্প হয় শ্যামাসুন্দরী দেবীর নামে। দ্বিতীয় চার বছর সারদা দেবীর নামে। তৃতীয় চার বছর তাঁর কাকা শ্রীযুক্ত নীলমাধবের নামে। ১২ বছর পুজো হওয়ার পর শ্রীমা পুজো বন্ধের ভাবনা শুরু করেন। কারণ পরিবারের সকলের নামেই যে পুজো হয়ে গিয়েছে! কিন্তু যে দিনই সেই অভিপ্রায় প্রকাশ করলেন সেই রাতেই দেবী দর্শন হল তাঁর। স্বপ্নে দেখা দিয়ে দেবী জগদ্ধাত্রী তিন বার তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন- 'তবে আমি যাই?' শ্রীমা বুঝতে পারেন জগদ্ধাত্রী ত্রিসত্য করে চলে যেতে চান। তখন সারদা দেবী বলেন, 'আমি আর ছাড়ব না মা তোমাকে, বছর বছর তোমাকে আনব।' এই সংকল্পানুসারে তিনি প্রায় সাড়ে ১০ বিঘার বেশি চাষের জমি দেবোত্র করে দেন।

রামকৃষ্ণ পরমহংসের ভাষায়, “মন করীকে যে বশ করতে পারে তারই হৃদয়ে জগদ্ধাত্রী উদয় হন।… ভক্তরা আজও বিশ্বাস করে জগদ্ধাত্রী শ্রীমায়ের মূর্তিতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। সুতরাং দেবী আরাধিত হলে শ্রীমাও আরাধিত হন।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy