জগজ্জননীর আরাধনা উপলক্ষ করেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিচ্ছে চন্দননগরের একটি পুজো কমিটি। একই সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে দেশভাগের যন্ত্রণা। জাতপাতের নিরিখে হওয়া ভাগাভাগির ফলে যখন নিজের ভিটে-মাটি হারাতে হয়, যখন উদ্বাস্তু হয়ে পরভূমে আশ্রয় নিতে হয়, কালক্রমে সেই দেশকেই আপন করে নিতে ছিন্নমূলরা বাধ্য হয়, কিন্তু মুখে কোনও প্রতিবাদ করতে পারে না, সেই অব্যক্ত বেদনা যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা জীবন্ত হয়ে উঠেছে এই পুজোর মণ্ডপে!
আরও পড়ুন:
এই অনবদ্য থিম ভাবনার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে - ভিটে মাটি। সৌজন্যে চন্দননগরের গোন্দলপাড়া সাতঘাট জগদ্ধাত্রী পূজা কমিটি। তাদের মণ্ডপ আকারে বিরাট না হলেও এই আয়োজনের বার্তা অত্যন্ত গভীর।
মণ্ডপ সজ্জায় টিন, লোহা, কাপড়, প্রতীকী মাইল ফলক প্রভৃতির ব্যবহার আপনার নজর কাড়বেই। রয়েছে একাধিক ইনস্টলেশন। বড় বড় পেন্টিংয়ের সাহায্যে তুলে ধরা হয়েছে, দেশভাগের সময়কার মানুষের দল বেঁধে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি দেওয়ার নির্মম চিত্র। যে সমস্ত এলাকায় দেশভাগের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছিল, সেই স্থানগুলিকেও মানচিত্রের মাধ্যমে ফোকাসে আনা হয়।
একই সঙ্গে লিখিত ভাবে দেওয়া হয়েছে নানা বার্তা। যেমন - একটি বিরাট আকারের প্রতীকী পুঁটলির এক পাশে লেখা হয়েছে - 'মানুষ আর মানুষ নেই, শুধুই হিন্দু কিংবা মুসলমান'। সেই একই পুঁটলির অন্য পাশে লেখা - 'আমরা সমঝোতা করতে পারিনি তাই...'! আবার মণ্ডপে প্রবেশের মুখে লেখা আছে - 'মানুষ যদি সত্যিই নিজের কথাগুলো বলতে পারত, তা হলে...'!
অর্থাৎ - আমজনতাকে যে তথাকথিত প্রশাসনিক, কিন্তু আদতে রাজনৈতিক কৌশলের ফাঁদে পড়ে ভিটে, মাটি পর্যন্ত ত্যাগ করতে হয় এবং তার জন্য ধর্মের মতো একটি বিষয়কে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ব্যবহার করা হয়, সেই বার্তা এখানে খুবই স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
মণ্ডপের দেবী - অর্থাৎ - মা জগদ্ধাত্রীকে এখানে চেনা সাবেকি রূপেই দেখা যাবে। তিনি ডাকের সাজে সজ্জিতা। সেই শ্বেত শুভ্র সাজ যেন শেষমেশ শান্তি আর ভরসা জোগায়!
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।