প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

বিধবা ব্রাহ্মণীর অভিশাপ থেকে পরিত্রাণ পেতেই দশভুজার শরণাপন্ন হয়েছিলেন বহরমপুরের অটল মণ্ডল!

কোন দুঃখে চরম অভিশাপ দিয়েছিলেন সেই অসহায় বিধবা?

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:০৯
সংগৃহীত চিত্র।

সংগৃহীত চিত্র।

মুর্শিদাবাদ জেলার নওদা ব্লকের আলমপুরে (পুরাতন) অবস্থিত অটল মণ্ডলের বাড়ির পুজো কেবল একটি ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজোই নয়, এর সূচনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক করুণ ইতিহাস ও অভিশাপের কাহিনি! প্রায় ১৫০ বছর আগে এক বিধবা ব্রাহ্মণের অভিশাপের জেরে এই পুজোর সূত্রপাত! সেই থেকে মণ্ডল পরিবারের সদস্যরা আজও নিষ্ঠা ভরে এই রীতি ও ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন।

পুজোর নেপথ্য ইতিহাস: অভিশাপের ফল!

জানা যায়, আজ থেকে প্রায় ১৫০ বছর আগে অটল মণ্ডলের বাড়ির পাশেই এক ব্রাহ্মণ বিধবার ৮০ বিঘা কৃষিজমি নিলামে উঠেছিল। জমিদার বা প্রভাবশালী হওয়ায় সেই জমি নিলামে কিনে নেন অটল মণ্ডল। জমির দখল নেওয়ার পর সেই বিধবা ব্রাহ্মণ অত্যন্ত রুষ্ট হন এবং অভিশাপ দেন — 'এই জমির ফসল যে ভোগ করবে, তারই অকাল মৃত্যু হবে!'

অটল মণ্ডল সেই বিধবার চোখের জল ও অভিশাপ উপেক্ষা করতে পারেননি। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে এই 'অভিশপ্ত' জমি থেকে যে ফসল উঠবে, তার বিক্রয়লব্ধ অর্থ তিনি নিজের বা পরিবারের কাজে ব্যবহার না করে শুধুমাত্র দেবী দুর্গার আরাধনায় খরচ করবেন। সেই বছরই তিনি প্রথম বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করেন। এ ভাবেই এক অভিশাপের জেরে মায়ের আরাধনার পথ প্রশস্ত হয়!

পুজোর রীতিনীতি ও পরম্পরা:

এই পুজোয় অটল মণ্ডলের চালু করা নিয়মের কোনও হেরফের আজও হয়নি। বর্তমানে মণ্ডল পরিবার ভেঙে গেলেও পুজোর চার দিন সব শরিক একত্রিত হন এবং পুজোয় অংশ নেন।

পূজার সূচনা: ষষ্ঠী তিথিতে মঙ্গল ঘট ভরার মধ্যে দিয়ে পুজোর সূচনা হয়।

নবপত্রিকা: প্রথা মেনে পালকিতে চাপিয়ে নবপত্রিকা এনে স্থাপন করা হয়।

ভোগ ও নৈবেদ্য: মণ্ডল বাড়িতে বৈষ্ণব মতে পুজো হয়ে আসছে এবং বংশানুক্রমে বহরমপুরের এক ব্রাহ্মণ পরিবার এই পুজো পরিচালনা করে।

একান্নবর্তী হেঁশেল: পুজোর চার দিন পরিবারের সব শরিক একত্রিত হন এবং একই হেঁশেলে রান্না করা হয়।

প্রসাদ বিতরণ: এটি মণ্ডল বাড়ির পুজোর এক বিশেষ ঐতিহ্য। সন্ধিপুজোর পর নতুন আলমপুর, পুরাতন আলমপুর এবং রামনগর গ্রামের প্রায় ৫০০টি পরিবারে মায়ের প্রসাদ হিসাবে লুচি ও মন্ডা পৌঁছে দেওয়ার প্রথা আজও অক্ষুণ্ণ রয়েছে।

বিসর্জন ও ভোজ: দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের পর গ্রামবাসীকে লুচি, তরকারি এবং বোঁদে দিয়ে পাত পেড়ে ভোজ খাওয়ানো হয়।

কাঠামো: প্রতিমা বিসর্জনের পর মায়ের কাঠামো তুলে আনা হয় না। প্রতি বছর রথের দিন নতুন করে সেই কাঠামো প্রস্তুত করে মাটি দেওয়ার রীতি আজও বজায় আছে। প্রতিমার কাঠামো ও আদলের কোনও পরিবর্তন হয় না।

দেবালয় নির্মাণ:

শোনা যায়, অতীতে অটল মণ্ডল তাঁর সেই 'অভিশাপের' জমির ফসলের টাকায় একটি দ্বিতল দুর্গাদালান তৈরি করেন। তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কারের অভাবে তা ধংসস্তূপে পরিণত হয়। মণ্ডল পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম সেই জমির আয় থেকেই পরে গথিক স্থাপত্যে একটি একতলা দালান নির্মাণ করেন। সেখানে দুর্গাঘর, ভোগঘর, রান্নাঘর-সহ পুরোহিত ও ঢাকিদের থাকার জন্যও ঘর তৈরি করা হয়েছে। গত প্রায় ৫০ বছর ধরে এই নতুন দালানেই মায়ের আরাধনা হয়ে আসছে।

অভিশাপের জেরে শুরু হওয়া এই দুর্গাপুজো আজ মণ্ডল পরিবারের কাছে কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি তাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং পারিবারিক ঐক্যের প্রতীক।

(‘আনন্দ উৎসব ২০২৫’-এর সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন একাধিক সহযোগী। প্রেজ়েন্টিং পার্টনার ‘মারুতি সুজ়ুকি অ্যারেনা’। অন্যান্য সহযোগীরা হলেন ওয়েডিং পার্টনার ‘এবিপি ওয়ানস্টপ ওয়েডিং’, ফ্যাশন পার্টনার ‘কসমো বাজ়ার’, নলেজ পার্টনার ‘টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি’, ব্যাঙ্কিং পার্টনার ‘ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’, কমফোর্ট পার্টনার ‘কার্লন’)।

(এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ। )

Bonedi Barir Pujo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy