প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

চিল্কিগড় রাজবাড়ির পুজোয় দেবী কনক দুর্গা নিজেই নিজের জন্য মাংস ভোগ রান্না করেন!

রাজরানির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বন্ধ হয়েছিল নরবলি প্রথা!

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:২৩
সংগৃহীত চিত্র।

সংগৃহীত চিত্র।

ঝাড়গ্রামের চিল্কিগড় রাজবাড়ির কনক দুর্গার পুজো প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন এক ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। ডুলুং নদীর তীরে গভীর জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত মন্দিরে দেবী কনক দুর্গা পূজিতা হন। যিনি আদতে এই রাজপরিবারেরই কুলদেবী।

কনক দুর্গা পুজোর ইতিহাস

প্রতিষ্ঠা: জনশ্রুতি অনুযায়ী, প্রায় ৫০০ বছর আগে চিল্কিগড়ের সামন্ত রাজা গোপীনাথ সিংহ মত্তগজ স্বপ্নাদেশ পান। দেবীর নির্দেশ অনুসারে, রাজা তাঁর রানির হাতের সোনার কাঁকন (বা বালা) এবং অষ্টধাতু মিশিয়ে দেবী দুর্গার মূর্তিটি তৈরি করান। যেহেতু মূর্তিটি 'কনক' বা সোনা দিয়ে তৈরি হয়েছিল, তাই দেবীর নাম হয় 'কনক দুর্গা'।

দেবীর রূপ: এই মূর্তি অন্যান্য দুর্গা প্রতিমা থেকে ভিন্ন। দেবী এখানে চতুর্ভুজা এবং তাঁর বাহন সিংহ নয়, বরং তিনি অশ্ববাহিনী। দেবীর উপরের বাম হাতে পানপাত্র এবং নীচের বাম হাতে ঘোড়ার লাগাম থাকে। এ ছাড়া, ডান দিকের উপরের হাতে থাকে খড়্গ।

নরবলি প্রথা: এক সময় এই পুজোয় নরবলির প্রচলন ছিল বলে লোকমুখে প্রচলিত আছে। বিশেষত মহানবমীর রাতে এই বলি হতো। কথিত আছে, রাজরানি গোবিন্দমণি দেবীর স্তুতি গেয়ে এবং করজোড়ে আবেদন করে এই ভয়াবহ প্রথা বন্ধ করেছিলেন। বর্তমানে অবশ্য পাঁঠাবলি চালু আছে।

বিগ্রহের পরিবর্তন: ১৯৬০ সালে এক বার এবং পরে মাও আমলে ২০০৭-২০০৮ সালেও দেবীর অষ্টধাতুর মূল মূর্তি চুরি হয়ে যায়। প্রতি বারই নতুন করে অষ্টধাতুর মূর্তি তৈরি করে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

সংগৃহীত ছবি।

সংগৃহীত ছবি।

সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণ: এই মন্দির আর্য ও অনার্য সংস্কৃতির মিলনস্থল হিসাবে পরিচিত এবং এখানে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে লোক-ঐতিহ্যের মিশ্রণ দেখা যায়।

ভোগের বিশেষ প্রথা

চিল্কিগড়ের কনক দুর্গা মন্দিরে দুর্গাপুজোর সময় দেবীকে আমিষ বা নিরামিষের চিরায়ত ভেদাভেদ ভেঙে এক অত্যন্ত ব্যতিক্রমী ভোগ নিবেদন করা হয়। এটি স্থানীয়ভাবে 'বিরাম ভোগ' নামে পরিচিত।

কালো পাঁঠার মাংস:

পাঁঠাবলি: এখানে মহাষ্টমীর রাতে কালো পাঁঠা বলি দেওয়ার প্রথা রয়েছে। রাজ আমলের প্রথা মেনে এটি নিশা বলি হিসাবে গভীর রাতে পালন করা হয়।

বিরাম ভোগ: জনশ্রুতি আছে, অষ্টমীর দিন গভীর রাতে পুজোর পর জঙ্গলের ভিতরের একটি নিরিবিলি কক্ষে পুরোহিত মশাই নতুন মাটির হাঁড়িতে জল ও বলির পাঁঠার মাংস এবং অন্যান্য সামগ্রী ভরে শালপাতা দিয়ে হাঁড়ির মুখ বন্ধ করে আসেন। পরদিন নবমীর সকালে সেই কক্ষের দরজা খোলা হলে দেখা যায় যে, ভোগ রান্না হয়ে গিয়েছে! কারও মতে, মাংস, জল ও মশলা-সহ হাঁড়িটি আসলে নতুন তৈরি করা উনুনের আঁচে বসিয়ে রাখা হয়। তার পর ঘরের দরজা বন্ধ করা হয়।

লোকবিশ্বাস: যদিও স্থানীয়দের দৃঢ় বিশ্বাস, এই 'বিরাম ভোগ' বা নৈশ আহার স্বয়ং দেবী কনক দুর্গা নিজে রান্না করেন। দেবীর রান্না করা এই মাংসই পরে ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ হিসাবে বিতরণ করা হয়।

হাঁসের ডিম, মাছ পোড়া ও পান্তা ভাতের ভোগ:

ভোগ নিবেদন: দুর্গাপুজোর চার দিনই দেবীকে অন্যান্য ভোগের পাশাপাশি এই বিশেষ খাবারগুলি নিবেদন করা হয়। এগুলি হল - হাঁসের ডিম সেদ্ধ, মাছ পোড়া, শাক ভাজা এবং পান্তা ভাত।

তাৎপর্য: এই ধরনের ভোগ মূলত তন্ত্র মতে হওয়া পুজোর অঙ্গ। এর মধ্যে হাঁসের ডিমের ভোগ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এই ধরনের আমিষ ভোগ নিবেদনের প্রথাটি এই অঞ্চলের লোক-ঐতিহ্য এবং তন্ত্র-আচার মেনে বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে। যা এই পুজোকে অন্যান্য দুর্গাপুজো থেকে আলাদা করে তুলেছে।

মুখশুদ্ধি: প্রতি বার খাবার খাওয়ার শেষে দেবীকে পান দিয়ে মুখশুদ্ধি করানোও এখানকার একটি বিশেষ প্রথা।

বস্তুত, চিল্কিগড়ের এই পুজো কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়। এটি এই অঞ্চলের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং লোকবিশ্বাসের এক জীবন্ত দলিল।

আনন্দ উৎসব ২০২৫’-এর সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন একাধিক সহযোগী। প্রেজ়েন্টিং পার্টনার ‘মারুতি সুজ়ুকি অ্যারেনা’। অন্যান্য সহযোগীরা হলেন ওয়েডিং পার্টনার ‘এবিপি ওয়ানস্টপ ওয়েডিং’, ফ্যাশন পার্টনার ‘কসমো বাজ়ার’, নলেজ পার্টনার ‘টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি’, ব্যাঙ্কিং পার্টনার ‘ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’, কমফোর্ট পার্টনার ‘কার্লন’।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy