প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

কালীঘাট আসলে কোথায় ছিল? কী ভাবে আজকের কালীমন্দিরের প্রতিষ্ঠা?

এখন যা উত্তর ও মধ্য কলকাতা, অনেক অনেক বছর আগে সেটা ছিল একটি দ্বীপের মতো জায়গা— যার পশ্চিমে হুগলি নদী, উত্তরে চিৎপুর খাল, পূর্বে লবণাক্ত জলের হ্রদ, আর দক্ষিণে আদি গঙ্গা। এর মাঝের জায়গাটাই কালীক্ষেত্র।

ঋত্বিক দাস

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৪ ১২:২৮

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

কালীঘাট আর কলকাতা ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে। কলকাতা— নামটি যে কালীঘাট থেকে এসেছে, সেই তথ্য, বলা ভাল তত্ত্বও নতুন নয়। এখন যা উত্তর ও মধ্য কলকাতা, অনেক অনেক বছর আগে সেটা ছিল একটি দ্বীপের মতো জায়গা— যার পশ্চিমে হুগলি নদী, উত্তরে চিৎপুর খাল, পূর্বে লবণাক্ত জলের হ্রদ, আর দক্ষিণে আদি গঙ্গা। এর মাঝের জায়গাটাই কালীক্ষেত্র। এই কালীক্ষেত্র শব্দটিই ভাঙতে ভাঙতে লোকমুখে কালীখেত থেকে কালীকেটা ও পরে কলকাতা হয়েছে বলে অনেকে বলে করেন।

‘পীঠমালা’ তন্ত্রে সতীর ৫১ পীঠের বর্ণনায় পাওয়া যায় এই ‘কালীক্ষেত্র’ নামটি। সেখানে কালীক্ষেত্র নিয়ে মহাদেবের প্রশ্নের উত্তরে দেবী পার্বতী বলেন,

“দক্ষিণেশ্বর মারভ্য যাবচ্চবহুলা পুরী।

ধনুরাকার ক্ষেত্রঞ্চ যোজনদ্বয় সংখ্যকম্।।

তন্মধ্যে ত্রিকোণাকারঃ ক্রোশমাত্রং ব্যাবস্থিতঃ।

ত্রিকোণে ত্রিগুণাকার ব্রহ্মাবিষ্ণুশিবাত্ম্যকম্।

মধ্যে চ কালিকা দেবী মহাকালী প্রকীর্তিতা।।

নকুলেশঃ ভৈরবো যত্র, যত্র গঙ্গা বিরাজিতা।

তত্র ক্ষেত্রং মহাপুণ্যং দেবানামপি দুর্লভম্।।

কাশীক্ষেত্রং কালীক্ষেত্রং মভেদোপি মহেশ্বরঃ।”

এর বাংলা করলে হয়—

দক্ষিণেশ্বর থেকে বহুলা (বর্তমান বেহালা) পর্যন্ত ধনুকের মতো দুই যোজন (১৬ মাইল) যে ক্ষেত্র। তার মধ্যে এক ক্রোশ (দুই মাইল) বিস্তৃত যে ত্রিভুজাকৃতি জায়গা, তার তিন কোণে আছেন ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর। আর মধ্যস্থলে মহাকালীর অধিষ্ঠান। এই জায়গা রক্ষা করেন ভৈরব নকুলেশ, এখান দিয়েই বয়ে চলে গঙ্গা। এই জায়গা কাশীর মতোই মহাপুণ্যের জায়গা, এবং মহেশ্বরের পরমপ্রিয়।

প্রাচীন কলকাতা এবং কালীক্ষেত্রের আনুমানিক অবস্থান।

প্রাচীন কলকাতা এবং কালীক্ষেত্রের আনুমানিক অবস্থান। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

পিটি নায়ারের মতে

পিটি নায়ার কলকাতার ইতিহাস নিয়ে বিস্তর কাজ করে গেছেন। তাঁর মতে, প্রাচীন কালীক্ষেত্র ছিল সেখানে, এখন যেখানে ফোর্ট উইলিয়াম আছে, তারই আশেপাশে। পরে কালীক্ষেত্র এখনকার কালীঘাটে স্থানান্তরিত হয়েছিল।

পুরনো লেখাপত্রে

১২০০ থেকে ১৫০০ শতাব্দীর মধ্যে লেখা বিভিন্ন হিন্দু পুরাণে আছে ‘কলিকাতা’র কথা। সেখানে বলা হয়েছে যে কালীপুজোয় নরবলি হত বলেই নদীনালা, জলাজঙ্গলে ভর্তি এলাকায় দেবীমূর্তি প্রতিষ্ঠা হয়। দুই বর্গমাইল বিস্তৃত, ত্রিভুজাকৃতি সেই অঞ্চল সভ্যতার আলোর খানিক আড়ালে, হিংস্র পশু ও বিষাক্ত সাপে ভরা। জেলে, বাগ্‌দী, মৎস্যজীবী, শিকারী, ব্যাধ, এবং তান্ত্রিকেরাই এই দেবীর পুজো করতেন।

১৯০১ সালের একটি লেখা অনুযায়ী৷ স্ট্র্যান্ড রোডের কাছে পোস্তা বাজারের কাছে ছিল এই আদি কালীমন্দির। উত্তরে বাগবাজারের কাছে ছিল ব্রহ্মার মন্দির। দক্ষিণ-পশ্চিম গোবিন্দপুরে, হুগলি নদী ও আদি গঙ্গার সঙ্গম স্থলে ছিল গোবিন্দ বা বিষ্ণুর মন্দির, আর ছিল শিবের মন্দিরটি ছিল দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অধুনা ভবানীপুর অঞ্চলে। ১৫০০ শতকের ভূমিকম্পে এই কালীমন্দির মাটির নীচে বসে যায়। তখন সেই কালীমূর্তিকে ভবানীপুরের পাশে বর্তমান কালীঘাটে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়।

১৪৯৫ সালে লেখা মনসামঙ্গল কাব্যে কলিকাতা ও কালীঘাট, দুইয়েরই নাম আছে। ১৬০০ শতকের শেষ দিকে লেখা চণ্ডীমঙ্গলে আছে কালীঘাট মন্দিরের কথা। চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের সওদাগর এসেছিলেন কালীঘাটে, মহাকালীর চরণ স্পর্শ করতে।

ফেলুদার ফ্যান-ফিকশনে কালীঘাট

‘তোপসের নোটবুক’ অনুযায়ী একবার একটি কেস নিয়ে ফেলুদা সিধুজ্যাঠার সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে, তিনি তোপসে আর ফেলুদাকে কালীঘাটের কালীর আদি কাহিনি শোনান। সিধুজ্যাঠার মতে, চিত্রপুর বা চিৎপুরের চিত্তেশ্বরী কালীর কাছেই ছিল কালীঘাটের কালী। জঙ্গলে ঘেরা সেই মন্দিরের কোণে একটা পোস্তা বাঁধানো দেওয়াল ছিল। সেখানে এক সময় হাট বসতে শুরু করে। পরে এই হাট বহরে বাড়লেও সেই দেবী লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেলেন। কাপালিকদের দল যদিও সেই কালীমন্দিরের কথা ভোলেননি। তাঁরাই দেবীর মুখ্য প্রস্তর খুঁজে বের করে আরও দক্ষিণের জঙ্গলে নিয়ে চলে যান। পরে, বড়িশার সাবর্ণ চৌধুরীরা আবিষ্কার করলেন এই কালীকে। প্রতিষ্ঠা হল আজকের কালীঘাট।

আজকের কালীঘাট

কালীঘাটের কালীকে জঙ্গলের আড়াল থেকে সবার সামনে তুলে আনেন রায়গড় (আজকের সরশুনা)-এর রাজা বসন্ত রায়। তাঁর চেষ্টাতেই কালীঘাটের প্রথম মন্দির তৈরি হয়। এখনকার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের সন্তোষ রায়চৌধুরী। কালীঘাটের পুরনো ছোট মন্দির ভেঙে তিনি নতুন মন্দির গড়া শুরু করেন। সেটি ছিল ১৮০৬ খ্রীষ্টাব্দ। মন্দির পুরোপুরি গড়ে ওঠার আগেই তিনি মারা যান। তাঁর ছেলে রামনাথ এবং ভাইপো রাজীবলোচন রায়চৌধুরী সেই অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন। ১৮০৯ সালে নতুন মন্দির তৈরির কাজ শেষ হয়। খরচ হয়েছিল ৩০ হাজার টাকা।

তথ্যসূত্র - কলকাতার জন্মদিন নেই - পৃ ২৫

তথ্যসূত্র - কলকাতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস - পৃ ১৪

তথ্যসূত্র - কলকাতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস - পৃ ১৪

তথ্যসূত্র - কলকাতার জন্মদিন নেই - পৃ ৩১

তথ্যসূত্র - তোপসের নোটবুক - পৃ ৯২

তথ্যসূত্র - কলকাতার উপাসনালয় - পৃ ৮৩

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Kali Puja 2024 Ananda Utsav 2024 Kalighat History
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy