পুজোয় নির্ঝঞ্ঝাট সফর করুন আপনার সাধের ইভি-তে। জেনে নিন কিছু প্রয়োজনীয় কথা।
পুজোর দিনগুলিতে আপনার এবং আপনার প্রিয়জনদের ঘোরাঘুরির বাহন কি বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি)? এই গাড়ি পরিবেশবান্ধব এবং পেট্রোল বা ডিজেলের মতো দামি জীবাশ্ম জ্বালানি ছাড়াই পথ চলতে সক্ষম। তাই, এ কথা মানতেই হবে যে আপনার এই বাহন একেবারেই যুগোপযোগী। কিন্তু, তা সত্ত্বেও ইলেকট্রিক গাড়ি নিয়ে লম্বা সফরে বেরনোর আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। যাতে কোনও অপ্রত্যাশিত সমস্যায় পড়তে না হয়। রইল তারই সুলুকসন্ধান, যাতে আপনি ঘুরে আসতে পারেন নির্বিঘ্নে।
১. ব্যাটারির চার্জ এবং রেঞ্জ
ইলেকট্রিক গাড়ির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এর ব্যাটারির চার্জ এবং সেই সচল ব্যাটারির রেঞ্জ (এক বার চার্জে যত কিলোমিটার গাড়ি চলতে পারে, সেই হিসাব)। অবাঞ্ছিত ঝামেলা এড়াতে গাড়ির ব্যাটারি সম্পূর্ণ চার্জ করে তবেই সফরে বেরোন। সেই সঙ্গে আপনার গন্তব্যের দূরত্ব এবং গাড়ির রেঞ্জ ভাল করে হিসাব করে নিন। যদি আপনার গন্তব্যস্থল গাড়ির রেঞ্জের তুলনায় বেশি হয়, তা হলে পথে কোথায় চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, তা আগে থাকতেই ভাল করে জেনে, বুঝে নিন। আরও একটি বিষয় মনে রাখবেন, প্রচণ্ড ঠান্ডা আবহাওয়ায় এই ব্যাটারির কার্যকারিতা কিছুটা কমে যায়। সে ক্ষেত্রে রেঞ্জও কিছুটা কমে যেতে পারে। তাই আবহাওয়ার দিকেও খেয়াল রাখুন।
২. চার্জিং স্টেশন খুঁজে বের করা
ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল চার্জিং স্টেশন খুঁজে বার করা। এর জন্য আপনি কিছু মোবাইল অ্যাপ - যেমন - প্লাগশেয়ার, স্ট্যাটিক, শেল রিচার্জ প্রভৃতি ব্যবহার করে আপনার রুটে কোন কোন চার্জিং স্টেশন রয়েছে, তা আগে থেকেই দেখে নিন। অ্যাপে চার্জিং স্টেশনের ধরন, সেখানে চার্জ দেওয়ার জন্য কোন ধরনের পোর্ট আছে (যেমন - টাইপ২, সিসিএস ২), এবং চার্জিংয়ের দাম সম্পর্কেও জানতে পারবেন।
চার্জার বুকিং: কিছু চার্জিং স্টেশন আগে থেকে বুক করা যায়। বিশেষ করে উৎসবের মরশুমে কিংবা লম্বা ছুটিতে এটি খুবই কার্যকর হতে পারে।
হোটেলে চার্জিং: যদি অনেক রাত পর্যন্ত গাড়িতে থাকতে হয়, তা হলে এমন হোটেল বা রিসর্ট বেছে নিন, যেখানে ইলেকট্রিক গাড়ি চার্জ করার সুবিধা রয়েছে।
৩. গাড়ির চাকা এবং ওজন
যে কোনও গাড়ির কার্যকারিতারে উপর টায়ার (চাকা) এবং লোডেরও (গাড়িতে সওয়ার ওজনের পরিমাণ) প্রভাব পড়ে। গাড়ির টায়ারের সঠিক প্রেসার (চলতি কথায়, চাকার হাওয়া) আছে কি না, তা আগে থেকে নিশ্চিত করুন। কম হাওয়া থাকলে ব্যাটারি দ্রুত শেষ হতে পারে। এর পাশাপাশি, গাড়িতে অতিরিক্ত ওজন তোলা থেকে বিরত থাকুন বা তা এড়িয়ে চলুন। গাড়িতে অতিরিক্ত জিনিসপত্র ভরলে বা অপ্রয়োজনীয় ওজন বহন করলে ব্যাটারির উপর চাপ পড়ে এবং তাতে রেঞ্জ কমে যায়। তাই কেবলমাত্র প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রই সঙ্গে নিন।
৪. চালানোর পদ্ধতি
আপনি কী ভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন, তার উপরেও রেঞ্জ অনেকটা নির্ভর করে। গাড়ির গতি অতিরিক্ত বেশি হলে ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়। তাই মাঝারি গতিতে গাড়ি চালান। এ ছাড়া, গাড়ির ভিতরে এয়ার কন্ডিশনার (এসি) বেশি ব্যবহার করলেও ব্যাটারির চার্জ দ্রুত কমে। তাই, যখন একান্তই দরকার, কেবল তখনই এসি ব্যবহার করুন। এর পাশাপাশি, ইলেকট্রিক গাড়িতে রিজেনারেটিভ ব্রেকিং সিস্টেম থাকে। যা ব্রেক কষার সময়ে ব্যাটারি কিছুটা চার্জ করে। এটি ব্যবহার করলে কিছুটা অতিরিক্ত রেঞ্জ পেতে পারেন।
৫. জরুরি অবস্থার মোকাবিলা
সব ধরনের প্রস্তুতি থাকলেও মাঝপথে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটতেই পারে। তাই প্রস্তুত থাকুন।
পাওয়ার ব্যাঙ্ক: মোবাইলের জন্য একটি পাওয়ার ব্যাঙ্ক এবং গাড়ির জন্য একটি অতিরিক্ত চার্জার সঙ্গে রাখুন।
রোডসাইড অ্যাসিস্ট্যান্স: গাড়ির সার্ভিস সেন্টার থেকে রোডসাইড অ্যাসিস্ট্যান্সের সুবিধা আছে কি না, সেই বিষয়ে সবিস্তার জেনে নিন। এটি আপনাকে জরুরি অবস্থায় দ্রুত সাহায্য পেতে সহযোগিতা করবে।
চার্জার কেবল: আপনার গাড়ির সঙ্গে থাকা চার্জার কেবলটি ছাড়াও একটি অতিরিক্ত চার্জার রেখে দিন।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।