Cyberchondria Symptoms

সর্বদাই অসুখের ভয়, গুগ্‌লে রোগের সন্ধান করেই চলেছেন, এই খোঁজাও আসলে অসুখ, ভুগছেন কারা?

রোগ নিয়ে খুঁতখুঁতে? সব সময়েই ভাবেন আপনার জটিল অসুখ করেছে? সে নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন, ইন্টারনেটে সারা দিন খোঁজাখুঁজিও করেন। এই ভাবনাও কিন্তু আসলে অসুখ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২৫ ১৬:৫৫
Excessive online searching for health information exacerbates anxiety called Hypochondria

রোগ নিয়ে নিরন্তর ভাবনা ও গুগ্‌লে খোঁজাখুঁজিও আসলে একটি রোগ। ছবি: ফ্রিপিক।

মাথা ব্যথা হল কি হল না, হাত চলে যায় গুগ্‌ল সার্চে। মাথার কোন দিকে ব্যথা, সে রোগের নাম কী, তার ওষুধ কেমন— এই সব খোঁজাখুঁজি করতে গিয়েই ব্যথাটা আরও টনটনিয়ে ওঠে। আর যদি বা কোনও অসুখের জটিল নাম খুঁজে পান, তা হলে তো কথাই নেই। সে অসুখটি আপনারও হয়েছে ভেবে উদ্বেগের পারদ চড়তে শুরু করবে। নাওয়াখাওয়া ছেড়ে দুশ্চিন্তায় ভুগবেন। এই যে দিনভর অসুখ আর তার চিকিৎসা-পথ্য নিয়ে এত খোঁজাখুঁজিও কিন্তু আসলে অসুখই। মনোবিদেরা একে বলেন ‘হাইপোকন্ড্রিয়া’।

Advertisement

বিশ্ব জুড়েই এই রোগ-বাতিক আর তার সন্ধানে অন্তর্জাল হাতড়ানো এক হিড়িকের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। চিকিৎসকের কাছে যাও, নানাবিধ পরীক্ষা করাও, তার পর গাঁটের কড়ি খসিয়ে ওষুধ কেনো— এত সময় কোথায়! তার যে সবচেয়ে সহজ পন্থাই হল গুগ্‌ল সার্চ। আর সার্চ ইঞ্জিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স) পরিচালিত সার্চ টুল চলে আসার পর থেকে যেন বিশ্বকোষ চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। যত দুরারোগ্য ব্যাধিই হোক না কেন, তার নাম ও চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে খুঁটিনাটি বিবরণ দিয়ে দেবে গুগ্‌ল। তাই আর চিন্তা নেই। মাথা ব্যথা, পেটখারাপ, জ্বর, কাশি যা-ই হোক না কেন, কেবল উপসর্গ লিখে সার্চ করলেই হল। এই নেশাই সর্বনাশা হয়ে দাঁড়াচ্ছে অনেকের ক্ষেত্রেই। অসুখবিসুখ বা তার ওষুধ নিয়ে নিরন্তর খোঁজাখুঁজিকেও এক ধরনের মনোরোগই বলা হচ্ছে। অনেকেই আবার এই সমস্যাকে বলছেন ‘সাইবারকন্ড্রিয়া’। বিষয়টি নিয়ে ‘এমডিপিআই’, ‘বিএমসি পাবলিক হেল্‌থ’ এবং ‘পাবমেড’-এর মতো মাডিক্যাল জার্নালে একাধিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।

রোগ যখন মনে

অসুস্থতা যতটা না শরীরে, তার চেয়েও ঢের বেশি মনে, এমনটাই মত মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের। তাঁর মতে, ‘অসুখ হয়েছে’— এই ভয়টাই চেপে বসছে মনে। হাইপোকন্ড্রিয়া বা সাইবারকন্ড্রিয়ায় আক্রান্তরা সাধারণ ব্যথাবেদনাকেও জটিল অসুখ বলে ভয় পেতে শুরু করেন। সে নিয়ে অবসাদেও ভুগতে থাকেন। তার উপরে ইন্টারনেট খুঁজে নানা ভুল তথ্যে বিশ্বাসও করে ফেলেন। এমনও অনেককে দেখা গিয়েছে, চিকিৎসকের কথায় বিশ্বাস না করে কেবল গুগ্‌ল খুঁজে এমন রোগের ওষুধ খেয়ে ফেলে বিপদ বাঁধিয়েছেন, যে রোগটি আদতেও তাঁর হয়ইনি।

মনখারাপ হলেও লোকজন আজকাল গুগ্‌লে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করছেন। মানসিক চাপ থেকে বাঁচার উপায় খুঁজে তার প্রয়োগ নিজের উপরেই করার চেষ্টা করছেন। তাতে হিতে বিপরীত হলে আরও বেশি দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। সাইবারকন্ড্রিয়া এক আশ্চর্য ভীতির জন্ম দিচ্ছে, যা থেকে বার করে আনার জন্য কাউন্সেলিংয়ের পথেও যেতে হচ্ছে।

ভুগছেন কারা?

দুরারোগ্য কোনও ব্যধিতে আপনজনকে হারিয়ে ফেলেছেন অথবা কাছের কাউকে ভুগতে দেখছেন, এমন লোকজন হাইপোকনড্রিয়া বা সাইবারকনড্রিয়ার শিকার হচ্ছেন।

অল্পেই দুশ্চিন্তা করেন, যে কোনও বিষয় নিয়ে মনে ভীতি তৈরি হয়, এমন লোকজন ভুগছেন।

শৈশবে কোনও কঠিন ব্যামো হয়েছিল, তার পর থেকে অসুখবিসুখ নিয়ে ভয় বেড়ে গিয়েছে এমন লোকজনও আছেন।

হাইপোকনড্রিয়ার রোগীরা কাশি হলেও মনে করেন ফুসফুসে ক্যানসার হয়েছে, বুকে ব্যথা হলে ভাবেন হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। চিকিৎসকের কাছে বার বার গিয়ে নিজে থেকেই চিকিৎসাপদ্ধতি বোঝানোর চেষ্টা করেন। এমনকি, চিকিৎসকের কথায় বিশ্বাসও করেন না বেশির ভাগ সময়েই।

এমন রোগীকে সুস্থ করতে হলে অনেক বেশি সহনশীলতার প্রয়োজন আছে বলেই মনে করেন মনোবিদ। কারণ মানসিক ভাবে তাঁরা খুব দুর্বল হয়ে পড়েন। তাই নানা রকম সাইকোথেরাপি, ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। কাউন্সেলিংয়েরও প্রয়োজন হয় কিছু ক্ষেত্রে।

Advertisement
আরও পড়ুন