Advertisement
Back to
Lok Sabha Election 2024

কেশপুর-নন্দীগ্রাম আসলে গোলমাল-তুতো বোন, সব ভোটে শিরোনামে থাকার রেকর্ড বহাল রইল শনিতেও

২০০১ সালে কেশপুর আর ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামের পরিচিত হয়ে ওঠা শুরু। রাজনৈতিক লড়াইয়ের এই দুই ভূমি সব নির্বাচনেই খবরে থেকেছে। ব্যতিক্রম হল না দিল্লিবাড়ির লড়াইয়েও।

Nandigram and Keshpur is in news again as earlier elections

—নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৪ ১৯:৩৫
Share: Save:

কেশপুর। রাজ্য রাজনীতিতে নন্দীগ্রামের চেয়ে বয়সে বড়। ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে রাজ্যের নজর কেড়ে নিয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের এই গ্রামনির্ভর এলাকা। অনেক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ দেখেছে লাল রঙের কেশপুর। অবশেষে সিপিএমের ‘শেষপুর’ হয়েও গোলমালের খ্যাতি হারায়নি ঘাটাল লোকসভার এই বিধানসভা।

নন্দীগ্রাম। ২০০৭ সালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এই আসনের কথা জেনে যায় গোটা দেশ। এক সময়ে বামেদের এই ঘাঁটি প্রথমে উপনির্বাচনে দখল করে তৃণমূল। তবে তার আগে ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ কিংবা নভেম্বরে সিপিএমের ‘সূর্যোদয়’ দেখে ফেলেছে নন্দীগ্রাম। ২০০৯ সালে তৃণমূলের ফিরোজা বিবির জয় ঐতিহাসিক হয়ে উঠেছিল তৃণমূলের সাফল্য এবং ভোটের গোলমালেও।

দুই দশক ধরে লোকসভা, বিধানসভা কিংবা পঞ্চায়েত— যত নির্বাচন হয়েছে সবেতেই গোলমালের জন্য খবরে থেকেছে কেশপুর। এককালে সিপিএমের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলত, সেই ছাপ্পা, রিগিং-এ এখন অভিযুক্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলই।

আবার নন্দীগ্রামও কম যায় না। নন্দীগ্রামের এক আর দুই ব্লকের লড়াই তো গত বিধানসভা নির্বাচনেই দেখা গিয়েছিল। সেই ভোটে বাংলার ভিআইপি আসন হয়ে উঠেছিল নন্দীগ্রাম। কারণ, সদ্য বিজেপিতে যাওয়া নন্দীগ্রামের বিধায়কের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে সম্মুখসমরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। টান টান লড়াইয়ে শুভেন্দু জিতলেও নন্দীগ্রামের ভোট নিয়ে যুদ্ধটা এখনও থামেনি।

এ বার দিল্লিবাড়ির লড়াইয়েও সমানে পাল্লা দিল কেশপুর ও নন্দীগ্রামের গোলমাল। তবে ভোটের দিনে নয়, নন্দীগ্রামে উত্তেজনা আগের কয়েক দিনে হয়েছে। খুনও হয়েছে একটি। তা নিয়ে গোলমাল মাত্রাছাড়া পর্যায়ে চলে যায়। বুধবার রাতে নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ায় বিজেপির মহিলা কর্মী রথিবালা আড়িকে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় বৃহস্পতিবার গোটা দিন জুড়ে দফায় দফায় সেখানে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। পুলিশের বিরুদ্ধেও যোগসাজশের অভিযোগ তুলেছে পদ্মশিবির। বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামেরই বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, খুনের ঘটনার পর পুলিশের সঙ্গে মূল অভিযুক্তদের বৈঠকও হয়েছে!

এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে উত্তাপের মাঝেই ভোটের আগের দিন শুক্রবার বিজেপির মণ্ডল সভাপতি গ্রেফতার হয়েছেন। শুক্রবার সেখানে গ্রেফতার হন বিজেপির নন্দীগ্রাম-১ মণ্ডলের সভাপতি ধনঞ্জয় ঘড়া। তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মনোনয়নের দিন অশান্তির ঘটনায় তাঁর নাম জড়িয়েছিল। তমলুক থানায় দায়ের হওয়া সেই অভিযোগের ভিত্তিতে নন্দীগ্রাম থেকেই গ্রেফতার হন ধনঞ্জয়, ভোটের আগের দিন। অন্য দিকে, বিজেপির রথিবালাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে খুনের অভিযোগে ২৫ জনের নামে এফআইআর করেছেন তাঁর মেয়ে মঞ্জু আড়ি। তাতে নাম রয়েছে তৃণমূলের শেখ সুফিয়ান, নন্দীগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা তথা ব্লক তৃণমূলের সহ-সভাপতি শেখ আল্লারাজি থেকে একাধিক স্থানীয় তৃণমূল নেতার। সেই উত্তাপের মধ্যেই হল ভোটগ্রহণ।

ভোটের দিনে একেবারে কিছু যে হয়নি তা নয়। শনিবার সাতসকালে ভোট শুরুর আগে হঠাৎ সোনাচূড়ায় ২৭৪ এবং ২৭৫ নম্বর বুথে যাওয়ার রাস্তায় একটি কাঠের সেতু মাঝখান থেকে কাটতে শুরু করে এক দল দুষ্কৃতী। বুথে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করা হচ্ছে বুঝে গ্রামবাসীরা প্রতিবাদ জানান। তাতে দুষ্কৃতীরা তড়িঘড়ি কাঠের ব্রিজে আগুন লাগানোর চেষ্টাও করে। অবশেষে খবর পেয়ে পুলিশ এসে পড়ায় রণে ভঙ্গ দেয় তারা। কিন্তু তত ক্ষণে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছে কাঠের সেতুটি। সেটি পেরিয়ে ভোট দিতে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। পরে পুলিশ পরিস্থিতি ঠিক করে।

ভোটগ্রহণ পর্বে সকাল থেকে সন্ধ্যা নানা ঘটনায় উত্তাপ ছড়িয়েছে কেশপুরে। ভোটের আগের রাত থেকে কেশপুর, আনন্দপুরে বোমাবাজি হয়েছে। আর শনিবার বার বার তৃণমূলের বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়। কখনও কেন্দ্রীয় বাহিনী, কখনও পুলিশ, তো কখনও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। আর তৃণমূল প্রার্থী দেব কেশপুর উত্তপ্ত থাকার যাবতীয় দায় হিরণের উপরেই চাপিয়েছেন। তিনি এমনটাও দাবি করেন যে, হিরণ কেশপুরে ‘সন্ত্রাসের পরিবেশ’ জিইয়ে রাখতে চেয়েছেন। কেশপুরে ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবেই হয়েছে বলেও দাবি করেন দু’বারের সাংসদ দেব। বারংবার ‘গো ব্যাক’ স্লোগান শোনা হিরণ বলেন, ‘‘কেশপুরকে পাকিস্তান করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ আর দেব বলেন, ‘‘যেমন ব্যবহার করবেন, সেটাই ফেরত পাবেন। কাল থেকেই কেশপুর-কেশপুর করছেন। কেশপুরে যদি সন্ত্রাস হয়ে থাকে, তা হলে সেটা উনি কথাবার্তার মাধ্যমেই বাড়াচ্ছেন।’’

দিনের শেষে নন্দীগ্রাম এলাকা (তমলুক লোকসভা)-র বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায়কে ধর্নায় বসতেও দেখা গিয়েছে। তবে সেটা ময়না বিধানসভা এলাকায়। আর কেশপুর নিয়ে হিরণের বক্তব্য, ‘‘ভোট কোথায় হল! এখানে তো পাগলু ডান্স হয়েছে। আগুন জ্বালিয়ে লাঠি নিয়ে পাগলুরা ডান্স করেছে।’’

লোকসভা ভোটের শনিবার আবার বলে দিল, আসলে উত্তেজনা-তুতো বোন কেশপুর আর নন্দীগ্রাম। আরও একটা মিল রয়েছে এই দুই বিধানসভা আসনের। নন্দীগ্রামের ভূমিকন্যা শিউলি সাহা এখন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। আর নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দুর উপরেই কেশপুর তথা ঘাটালে বিজেপিকে উতরে দেওয়ার দায়িত্ব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE