শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
দুই পরিবার দুই ভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থক। দুই পরিবারই ভোট সন্ত্রাসের শিকার। লোকসভা নির্বাচনের ষষ্ঠ দফার ভোটগ্রহণের আগে দুই পরিবারই হারিয়েছে পরিজনকে। তবে এক পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে দল। আর এক পরিবার এখনও দলীয় নেতৃত্বের পথ চেয়ে বসে।
ঘটনাচক্রে, যে নিহতের পরিবার অপেক্ষা করছে দলীয় সাহায্যের, সেই দলের অন্যতম শীর্ষনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি নিহত বিজেপি সমর্থকের এলাকার বিধায়কও বটে। বরাবর তাঁকে ছুটে যেতে দেখা যায় দলীয় কর্মীদের সাহায্যে। কিন্তু নন্দীগ্রামের ভোট পূর্ববর্তী ওই হিংসায় রবিবার রাত পর্যন্ত নিহতের বাড়িতে শুভেন্দু বা বিজেপির অন্য কোনও জেলা নেতা না যাওয়ায় ক্ষুণ্ণ তাঁর পরিজন।
জমি আন্দোলনের আঁতুড় ঘর নন্দীগ্রাম বরাবরই স্পর্শকাতর হিসাবে পরিচিত। গত বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ার মনসা বাজার এলাকায় তৃণমূল এবং বিজেপির সংঘর্ষের সময় স্থানীয় জেলে পাড়ার বাসিন্দা রথিবালা আড়ির মৃত্যু হয়। গুরুতর জখম হন তাঁর ছেলে তথা বিজেপির কর্মী হিসাবে পরিচিত সঞ্জয় আড়ি। সঞ্জয় আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সেই ঘটনার পরে কেটেছে তিন দিন। মিটেছে ভোটগ্রহণ পর্ব। রথিবালার মেয়ে মঞ্জু আড়ির দাবি, এখনও দলের কোনও শীর্ষ বা জেলা নেতৃত্ব তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়াননি। এমনকি, সঞ্জয় কোন হাসপাতালে বর্তমানে কেমন রয়েছেন, তা-ও দলের তরফে জানানো হয়নি বলে দাবি মঞ্জুর।
মঞ্জু বলছেন, “মায়ের মৃত্যুর পরে পাড়ার বিজেপি কর্মীরা এসেছিলেন। কিন্তু দলীয় কোনও নেতা আসেননি। ভাইয়ের শরীরের সঠিক অবস্থাও জানি না। শুনেছি, ওঁর জ্ঞান ফিরেছে। কথা বলতে পারছে না। ভাই লোকের বাড়িতে দিনমজুরি করে সংসার চালাত। এখন কী করে সংসার চলবে?”
নন্দীগ্রামেরই বিধায়ক শুভেন্দু। তিনি বা অন্য কোনও জেলা নেতা যাননি কেন নিহতের বাড়িতে?
বিজেপির জেলা (তমলুক) সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলছেন, “নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকায় হয়তো বড় নেতারা পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারেননি। তবে আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকা ব্যক্তিকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। যার পুরো দায়িত্ব নিয়েছে দল।”
ভোটের ঠিক আগের দিন শুক্রবার মহিষাদলের বেতকুণ্ডু এলাকায় তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য শেখ মইবুলকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। ঘটনায় পাঁচ বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করেছে মহিষাদল থানার পুলিশ। শনিবার ভোট মিটতেই তাঁর বাড়িতে যান তৃণমূলের তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, তমলুকের দলীয় প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য। এ দিন যান যুব তৃণমূলের জেলা (তমলুক) সভাপতি আসগর আলি।
মইবুল গেঁওখালিতে জল শোধনাগারে ঠিকা কর্মী ছিলেন। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। সংসারের অন্যতম উপার্জনকারীর মৃত্যু হলেও নিহতের পরিবারের দাবি, দলীয় নেতৃত্ব তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। মৃতের ভাই মসিবুল এ দিন বলেন, “দাদাকে বিজেপি কর্মীরা পিটিয়ে খুন করেছে। দাদার পরিবার কী করে চলবে, সেটা নিয়ে আমরা সকলে চিন্তায় রয়েছি। তবে বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এসে পরিবারের পাশে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের চাকরির ব্যবস্থাও করবেন বলে আশ্বাস্য দিয়েছেন বিধায়ক।”
নিহত বিজেপি সমর্থকের বাড়িতে শীর্ষ নেতৃত্বের এখনও না যাওয়া নিয়ে কটাক্ষ করে মহিষাদলের তৃণমূলের বিধায়ক তিলক এ দিন বলেন, “যারা দেহ নিয়ে রাজনীতি করে, তারা ভোট ফুরালে মৃতের পরিবারকে ছুড়ে ফেলবে, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আমরা আমাদের মৃত কর্মীর পাশে সর্বদা ছিলাম। থাকবও।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy