শ্রীলঙ্কা আপাতত ব্যাকফুটে। ছবি: এপি।
কলম্বোতে রুপালি ফ্রেমে ধরে রাখার মতো একটি দিন কাটালো বাংলাদেশ। সব হিসেব পাল্টে দিয়েছেন সাকিব আল হাসান ও মোসাদ্দেক হোসেন। তাঁদের দৃঢ়তায় নিজেদের শততম টেস্টে শত রানের লিড নিয়েছে মুশফিকুর রহিমের দল। তৃতীয় সেশনে গুটিয়ে যাওয়ার আগে ৪৬৭ রান করেছে বাংলাদেশ। লিড ১২৯ রানের।
কিন্তু বোলিংয়ের শুরুতে নেই সেই আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন। সেটি হলে বাংলাদেশ দলের এই দিনের ফ্রেমটা হতে পারতো সোনায় মোড়ানো।
শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার নির্বিঘ্নেই কাটিয়ে দিয়েছেন তৃতীয় দিনের ১৩ টি ওভার। ১২৯ রানের লিড শ্রীলঙ্কা কমিয়ে এনেছে ৭৫ রানে। তাই ম্যাচে এখন দু’দলই সমান সমান।
এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম এবং কেরিয়ারের পঞ্চম শতক পেয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব। অভিষেকে চমৎকার এক ইনিংস খেলেছেন তরুণ মোসাদ্দেক। দুই জনে সপ্তম উইকেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গড়েছেন বাংলাদেশের রেকর্ড রান। দেশের বাইরে টেস্টে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ লিড। ২০১৩ সালে হারারেতে জিম্বাবোয়ের বিপক্ষে ১০৯ রান ছিল আগের সেরা।
আরও পড়ুন, রিকি পন্টিং চ্যাটার্জি… বাহ রে বাহ
পি সারা ওভালে খেলা আগের তিন টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। শুক্রবারের স্কোরই তাঁদের এই মাঠের সর্বোচ্চ। আগের সেরা ছিল ২৯৯ রান। ৫ উইকেটে ২১৪ রানে তৃতীয় দিন শুরু করে বাংলাদেশ। তখনও দলটি পিছিয়ে ১২৪ রানে। প্রথম ঘণ্টার সতর্কতা মেনেই সাবধানে ব্যাট করে সাকিব ও মুশফিক জুটি যোগ করেছেন ৬১ রান। বরাবরের মতো আস্থার সঙ্গে খেলেন মুশফিক। শুরুতে রানের দিকে বেশি মনযোগী ছিলেন অধিনায়কই। ৬৬ বলে ৬টি চারে আসে মুশফিকের হাফ সেঞ্চুরি। অধিনায়ক পঞ্চাশে যান সাকিবের আগে। কিছুক্ষণ পর ৬৯ বলে ৫টি চারে অর্ধশতকে যান বাঁহাতি অলরাউন্ডারও।
টেস্টে নিজেদের পঞ্চম শত জুটির পথে ছিলেন সাকিব-মুশফিক। তামিম ইকবাল-ইমরুল কায়েসকে পেছনে ফেলে টেস্টে জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড নিজেদের করে নেওয়ার কাছাকাছি ছিলেন তারা। তার আগেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হয় তাদের।
দ্বিতীয় নতুন বলে ভাঙে তাদের প্রতিরোধ, সুরঙ্গা লাকমলের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মুশফিক। অধিনায়ককে হারিয়ে প্রথম সেশনে ১০২ রান যোগ করে বাংলাদেশ।
ঘরোয়া ক্রিকেটে রান বন্যা বইয়ে দেওয়া মোসাদ্দেককে ভাবা হয় বড় দৈর্ঘ্যের উপযোগী ক্রিকেটার হিসেবে। তার আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় টি-টোয়েন্টি দিয়ে। পরে সুযোগ মেলে ওয়ানডেতে। সেই ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা ২১ বছর বয়সী এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডারের অপেক্ষার অবসান হয় কলম্বোয়।
শুরুতে পেস বলে খানিকটা অস্বস্তিতে ছিলেন মোসাদ্দেক। সে সময় সাকিব দারুণভাবে সহায়তা করেছেন এই তরুণকে। ভালো ডিফেন্স করলে প্রশংসা করেছেন। তবে স্পিনে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি মোসাদ্দেকের। শুরুতেই ইনসাইড আউটে হেরাথকে যে বিশাল ছক্কা মারলেন সেটাই বুঝিয়ে দিল স্পিনে কতটা সাবলীল তিনি। অন্য প্রান্তে সাকিব তখন খেলছেন আস্থার সঙ্গে। গড়ে উঠলো ১৩১ রানের জুটি।
আরও পড়ুন, ডাক্তারি আশঙ্কা রাতেই দূর হল
রান আউট হতে হতে ৪১ রানে কোনোমতে বেঁচে যান সাকিব। ৬৭ রানে হেরাথের বলে নিরোশান ডিকভেলা ছাড়েন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের ক্যাচ। জীবন পেয়ে আরও সতর্ক হয়ে যান সাকিব। দ্বিতীয় সেশনে অফ স্পিনার দিলরুয়ান পেরেরাকে সুইপ করে চার হাঁকিয়ে পৌঁছান শতকে।
চা-বিরতির মিনিট দশেক আগে লাকশান সান্দাকানের বলে উড়াতে গিয়ে মিড অনে দিনেশ চান্দিমালের চমৎকার ক্যাচে পরিণত হন সাকিব। ১৫৯ বলে খেলা তার ১১৬ রানের ইনিংসটি গড়া ১০টি চারে। তাকে হারিয়ে দ্বিতীয় সেশনে ১১২ রান সংগ্রহ করে অতিথিরা।
দুই তরুণ মোসাদ্দেক আর মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটে সাড়ে চারশ পার হয় বাংলাদেশের সংগ্রহ। অতিথিদের নজর তখন পাঁচশ রানে। জোড়া আঘাতে মিরাজ ও মুস্তাফিজুর রহমানে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে তত দূর যেতে দেননি হেরাথ। রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি মিরাজ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে হেরাথের হাজারতম শিকার মুস্তাফিজ রিভিউ নিতে দাঁড়াননি।
শুভাশীষ রায় চৌধুরী ঠেকিয়ে দেন হেরাথের হ্যাটট্রিক। ৬২ রানে রিভিউ নিয়ে বাঁচেন মোসাদ্দেক। এরপর বেশিদূর যেতে পারেননি। হেরাথকে এগিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হয়ে শেষ হয় ১৫৫ বলে ৭টি চার ও দুটি ছক্কায় গড়া তার ৭৫ রানের ইনিংসটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy