Advertisement
১১ মে ২০২৪
স্থায়ী কমিটির বৈঠক আজ

আবার চটের বস্তা কেনা কমাচ্ছে কেন্দ্র

ফের সমস্যার মুখে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্বাঞ্চলের চটকল শিল্প। খাদ্যশস্য ও চিনির মতো পণ্য ভরতে চটের বস্তা কেনা আরও কমাতে চলেছে কেন্দ্র।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৭ ০২:৪০
Share: Save:

ফের সমস্যার মুখে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্বাঞ্চলের চটকল শিল্প। খাদ্যশস্য ও চিনির মতো পণ্য ভরতে চটের বস্তা কেনা আরও কমাতে চলেছে কেন্দ্র।

চালের ক্ষেত্রে এখনই তা ৯০% থেকে কমিয়ে ৮০-৭৫% করার প্রস্তাব রয়েছে। চিনির জন্য বর্তমানে ২০% চটের বস্তা কেনা বাধ্যতামূলক। এই নিয়ম সম্পূর্ণ তুলে দিতে চাইছে কেন্দ্রীয় খাদ্য ও গণ-বণ্টন দফতর। আজ, বৃহস্পতিবার দিল্লিতে কেন্দ্রের স্থায়ী কমিটির (পরামর্শদাতা) বৈঠকে এই প্রস্তাবগুলি পেশ করা হবে।

গত তিন বছর ধরেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অর্থনীতি বিষয়ক কমিটি বাধ্যতামূলক ভাবে চটের বস্তা কেনা ধাপে ধাপে কমাতে চাইছে। ৯০% থেকে ৭০ শতাংশে নামিয়ে আনার সুপারিশ করেছে কমিটি। কেন্দ্রীয় অর্থ ও খাদ্য মন্ত্রকও একই পথে হাঁটতে চায়। কেন্দ্রীয় সচিব পর্যায়ের কমিটির প্রস্তাব, গমের ক্ষেত্রে আগামী দশ বছরে ধাপে ধাপে চটের বস্তা কেনার বাধ্যতামূলক নিয়মের পুরোটাই বাতিল করা হোক। এত দিন কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রক পূর্বাঞ্চলের পাটশিল্পের স্বার্থে চটের বস্তা কেনার নিয়মটি বহাল রাখতে পেরেছিল। তবে এ বার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নিয়ম শিথিল হতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। তবে চিনি ও গমের ক্ষেত্রে এখনই এই প্রস্তাব কার্যকর না-ও হতে পারে বলে বস্ত্র মন্ত্রকের এক কর্তা জানান।

তিনি জানিয়েছেন, ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গ-সহ অন্যান্য রাজ্যের চটকল মালিকরা ৩০% চটের বস্তা জোগান দিতে পারেনি। তখন বাধ্য হয়ে চটের বস্তার বদলে প্লাস্টিকের বস্তা কেনার অনুমতি দেওয়া হয়। যে-কারণে এ বারের বৈঠকে বস্ত্র মন্ত্রকের পক্ষে রাজ্যের হয়ে সওয়াল করা কঠিন হয়ে যাবে। যদিও রাজ্যের চটকল মালিকদের একাংশ এই অভিযোগ মানতে নারাজ।

আরও পড়ুন: পিজিতে বচসা, ঘরে ‘আটকে’ মা এবং শিশু

পাট নিয়ে রাজ্যের যে-মন্ত্রিগোষ্ঠী রয়েছে, সম্প্রতি নবান্নে তার বৈঠক ছিল। বৈঠকে কেন্দ্রের এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নবান্ন সূত্রের খবর, রাজ্যের চটকল মালিকদের পক্ষে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রাজ্যের কোনও প্রতিনিধিকে উপস্থিত থাকার ব্যাপারে অনুরোধ করা হয়েছিল, যাতে খাদ্য ও গণ বণ্টন দফতরের প্রস্তাবের বিরোধিতা করা যায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ সচিবরা জেলা সফরে চলে যাওয়ায় এখান থেকে কেউ যেতে পারছেন না। তবে দিল্লিতে রাজ্যের যে-সমস্ত আধিকারিক রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ বৈঠকে হাজির থাকতে পারেন বলে জানা গিয়েছে।

ঘনাচ্ছে সঙ্কট


চাল ভরায় ৯০% থেকে কমিয়ে ৮০-৭৫% করার প্রস্তাব


চিনিতে পুরোপুরি তুলে দেওয়ার ইঙ্গিত খাদ্য ও গণ-বণ্টন দফতরের। এখন তা ২০%


গমে ধাপে ধাপে নিয়ম তুলে দেওয়ার সুপারিশ


রাজ্য থেকে বৈঠকে যাচ্ছেন না কোনও প্রতিনিধি

উঁচুমানের পাট-বীজ বণ্টনে জোর: কেন্দ্রের চাহিদা মতো বস্তা জোগানোয় অন্যতম কারণ ভাল মানের পাটের জোগানে ঘাটতি। দীর্ঘ দিন ধরেই চটকল মালিকরা এই অভিযোগ করছেন। আর, তাই উন্নতমানের পাট-বীজ বণ্টনের উপর জোর দেওয়া শুরু করেছে কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রক।

শিল্পমহল সূত্রে খবর, জাতীয় বীজ নিগমকে এ বিষয়ে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাট চাষের জন্য বছরে প্রায় ৬০০০ টন বীজ লাগে। কিন্তু তার খুব সামান্য অংশই পরীক্ষিত এবং উন্নতমানের হয়। চাষিদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে বলে খারাপ বীজও বাজারে প্রচুর বিক্রি হয়। ফলে পাটের উৎপাদনও যেমন মার খায়, তার মানও খুবও একটা ভাল হয় না। কেন্দ্র এখন এই সমস্যার সমাধানেই বেশি জোর দিতে শুরু করেছে। পাট নিগম ও জাতীয় পাট পর্ষদকে বীজ বণ্টনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চাষিদের সচেতন করার পাশাপাশি পরীক্ষিত উন্নতমানের বীজ যাতে অল্প দামের মধ্যে তাঁদের জোগানো যায়, সে ব্যাপারে বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নিতে বলা হয়েছে।

তবে শিল্পমহলের অভিযোগ, ভাল বীজ বণ্টনের জন্য কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রক ‘আই-কেয়ার’ বলে একটি প্রকল্প চালু করেছিল। যার উদ্দেশ্যই ছিল পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, অসমের মতো পাট উৎপাদক রাজ্যগুলিতে কম দামে ভাল বীজ চাষিদের মধ্যে বিলি করা। কিন্তু আই-কেয়ার প্রকল্পের জন্য যে-পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন ছিল, তা করা হয়নি। ফলে প্রকল্পটি সফল হয়নি বলেই শিল্পমহলের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন। চটকল মালিকদের বক্তব্য, ভাল বীজের চাষ সর্বত্র চালু করা না-গেলে উঁচুমানের পাট পাওয়া যাবে না। আর পাটের মান ভাল না-হলে পাটজাত পণ্যের মানও বাড়ানো যাবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE