Advertisement
০৪ মে ২০২৪

পিজিতে বচসা, ঘরে ‘আটকে’ মা এবং শিশু

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পেতে গিয়ে ওয়ার্ড থেকে ওয়ার্ডে পাক খাওয়ার অভিযোগ আকছারই ওঠে। এ বার এ ভাবে পাক খেতে থাকা নাছোড় এক মাকে তাঁর অসুস্থ শিশু সন্তান-সহ আটকে রাখার অভিযোগ উঠল এসএসকেএম হাসপাতালের বিরুদ্ধে।

মায়ের সঙ্গে বেদাঙ্গি। নিজস্ব চিত্র

মায়ের সঙ্গে বেদাঙ্গি। নিজস্ব চিত্র

সোমা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৭ ০১:৩৮
Share: Save:

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পেতে গিয়ে ওয়ার্ড থেকে ওয়ার্ডে পাক খাওয়ার অভিযোগ আকছারই ওঠে। এ বার এ ভাবে পাক খেতে থাকা নাছোড় এক মাকে তাঁর অসুস্থ শিশু সন্তান-সহ আটকে রাখার অভিযোগ উঠল এসএসকেএম হাসপাতালের বিরুদ্ধে।

বারুইপুরের একটি হোমের বাসিন্দা আট মাসের বেদাঙ্গি সর্দার খাট থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়। বেশ কয়েক বার বমি হয় তার। হোম কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, তাঁরা সুচিকিৎসার জন্য শিশুটিকে এসএসকেএম পেডিয়াট্রিক ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যান। তার পরেই শুরু হয় পিংপং বলের মতো এ দিক-ও দিক দৌড়োদৌড়ি।

হোম-কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, যেহেতু খাট থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় চোট লেগেছে তাই পেডিয়াট্রিক ইমার্জেন্সির চিকিৎসকেরা পাঠিয়ে দেন নিউরো ইমার্জেন্সিতে। নিউরো ইমার্জেন্সি জানায়, শিশুটির জ্বর এসেছে, তাই পেডিয়াট্রিক মেডিসিনই যা করার করবে। হোমের তরফে অঙ্কিতা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা ফের পেডিয়াট্রিক মেডিসিনে যাই। কিন্তু ডাক্তারেরা বলেন, যতই জ্বর আসুক না কেন, মাথায় চোটের দায়িত্ব তাঁরা নিতে পারবেন না। ও দিকে, বাচ্চাটা এক টানা যন্ত্রণায় কেঁদে চলেছে। ওই অবস্থাতেই আবার নিউরোর ঘরে দৌড়োই আমরা। আবার তারা ফেরত পাঠায়। ছ’-সাত বার এমন চলার পরে নিউরো ইমার্জেন্সির ডাক্তারেরা আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেন।’’

তাঁর বক্তব্য, একটা অসুস্থ শিশুর চিকিৎসা শুরু না করেই এ ভাবে দুর্ব্যবহার করায় আমরা প্রতিবাদ জানাই। তাতেই গোলমাল বেধে যায় ইমার্জেন্সিতে। এই সময়ে হঠাৎই নিউরোলজির দুই চিকিৎসক ইমার্জেন্সিরই একটি ঘরে বেদাঙ্গি ও তার মাকে আটকে রেখে আমাদের বলেন, ‘‘যা পারেন, করে নিন।’’ অঙ্কিতাদেবী বলেন, ‘‘আমাদের চিৎকার শুনে অন্য রোগীদের বাড়ির লোকেরা ছুটে আসেন। ছুটে আসেন কয়েক জন ডাক্তারও। তাঁদের হস্তক্ষেপেই ওই শিশু ও তার মাকে ঘর থেকে বার করে দেন ওঁরা।

আরও পড়ুন: জলসঙ্কট, তবু জলেই যাচ্ছে জল

রাতেই বেদাঙ্গিকে নিয়ে হোমে ফিরে এসেছেন অঙ্কিতাদেবীরা। কর্তৃপক্ষ জানান, কোনও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা চালানোর সামর্থ্য তাঁদের নেই। এলাকার এক চিকিৎসকই তার দেখভাল করছেন। আরও বার কয়েক বমি হয়েছে শিশুটির।

ওই সময়ে হাসপাতালে হাজির অন্য রোগীর পরিজনেরাও বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। তাঁদেরই এক জন পিয়াসী অধিকারী বলেন, ‘‘ঘটনাচক্রে আমরাও রোগীকে নিয়ে এক বার নিউরোলজি আর এক বার জেনারেল মেডিসিন বিভাগের মধ্যে পাক খাচ্ছিলাম। সেটা তবু কোনওমতে মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু একটা শিশুর সঙ্গে যে অমানবিকতা হল, তা দেখে চুপ থাকতে পারিনি।’’

গোটা ঘটনায় বিস্মিত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, চিকিৎসার অব্যবস্থা, গাফিলতি, রোগী প্রত্যাখানের অভিযোগ আকছার ওঠে। কিন্তু রোগীকে আটকে রাখার এমন নজির সব অর্থেই অমানবিক। বারবার বলা সত্ত্বেও কেন এক বিভাগের সঙ্গে অন্য বিভাগের সমন্বয় তৈরি করা যাচ্ছে না, সেই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর অবশ্য পাওয়া যায়নি।

রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এটা কোনও ভাবেই কাম্য নয়। ঠিক কী ঘটেছিল বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE