প্রতীকী ছবি।
বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রী মুখে কুলুপ এঁটে থাকবেন, এটাই রীতি। তবে সরকারের অন্দলমহলে যে বিষয়টি স্পষ্ট, তা হল, কৃষির হাল ভাল নয়। খোদ প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী তা মানছেন। যা দেখে সংশ্লিষ্ট মহলের ইঙ্গিত, গ্রাম-গরিবের জন্য ঢালাও বরাদ্দ হতে পারে আসন্ন কেন্দ্রীয় বাজেটে। যদিও রাজকোষের যা হাল, তাতে ঘাটতিকে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রেখে সেটি কী ভাবে সম্ভব, সেই বিষয়টি পরিষ্কার নয়।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারির বাজেট যে কৃষক-দরদি হতে চলেছে, গুজরাত বিধানসভা ভোটের ফল বেরোনোর পর থেকেই তা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। ফসলের উচিত দাম না পাওয়ার ক্ষোভ ভোটের বাক্সে উগরে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যের চাষিরা। তার পরেই প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে অর্থ মন্ত্রকে নির্দেশ যায়, বাজেটে কৃষিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার।
২০১৯-এর লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে আপাতত শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে গ্রাম-গরিবের জন্য যে বিপুল অর্থ ঢালা হতে পারে বাজেটে, তা নিয়ে নরেন্দ্র মোদী বা অরুণ জেটলি, কেউই কার্যত রাখঢাক করছেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেই দিয়েছেন, ‘‘কৃষির দুরবস্থা নিয়ে সমালোচনা সঠিক। আর, তা কাটিয়ে ওঠার পথ বাতলানো আমাদের দায়িত্ব।’’ জেটলি আরও সোজাসাপ্টা। তাঁর মন্তব্য, ‘‘জনসংখ্যার সিংহভাগ কৃষির উপর নির্ভরশীল। সেখানে বৃদ্ধির সুফল না পৌঁছলে, তাতে আর লাভ কী?’’ জেটলি সম্প্রতি আরও মন্তব্য করেছেন, ‘‘অনেক জায়গাতেই দেখা যাচ্ছে, কৃষকরা ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। তাঁদের আয় কমছে।’’
আরও পড়ুন: রাস্তায় ছবি বেচছেন বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার
এক দিকে, প্রধানমন্ত্রী ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার কথা বলছেন। উল্টো দিকে, বাড়ছে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা। এই অবস্থায় গুজরাতের ভোট থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার চাষিরা যাতে ফসলের উচিত দাম পান, তার ব্যবস্থা হতে পারে বাজেটে। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যর থেকে বাজার দর পড়ে গেলে কৃষককে ভর্তুকি দেওয়ার ঘোষণা করতে পারেন জেটলি। প্রাক্-বাজেট বৈঠকে কৃষি-অর্থনীতিবিদ অশোক গুলাটি ঠিক এই দাবি তুলেছিলেন।
পাশাপাশি এ বার সেচ, হিমঘরের মতো কৃষি পরিকাঠামোতেও বিপুল অর্থ ঢালা হতে পারে বলে ইঙ্গিত। মোদীর স্পষ্ট নির্দেশ, সেচের জল জমিতে পৌঁছে দেওয়ার পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। বরাদ্দ বাড়তে পারে ফসল বিমা যোজনা, কৃষি পণ্য বিপণনের মতো প্রকল্পে। সার্বিক ভাবে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে, একশো দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনাতেও বরাদ্দ বাড়ার সম্ভাবনা। চলতি বছরে ১০ লক্ষ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বণ্টনের লক্ষ্য নিয়েছিলেন জেটলি। কৃষি মন্ত্রক সূত্রের খবর, আগামী বছরের জন্য তা ২০ শতাংশ বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে লক্ষ্য হবে ১২ লক্ষ কোটি টাকা।
কৃষি নিয়ে কেন্দ্রের টনক নড়িয়েছে সরকারি পূর্বাভাসই। তা হল, এ বছর কৃষি ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ২.১ শতাংশেই আটকে থাকবে, যা অর্থনীতির আটটি প্রধান ক্ষেত্রের মধ্যে সর্বনিম্ন। এমনিতেই মোদী জমানার তিন বছরে কৃষি ক্ষেত্রে গড় বৃদ্ধির হার মাত্র ১.৭%। ইউপিএ-সরকারের শেষ তিন বছরের ৩.৫% হারে বৃদ্ধির তুলনায় তা বেশ কম।
গোড়ার দিকে মোদী সরকারের নীতি ছিল, খাদ্যপণ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার লাগামে রাখতে ফসলের দামও কমিয়ে রাখা। কিন্তু দেশ জুড়েই ফসলের উচিত দাম, ঋণ মকুবের দাবিতে চাষিদের আন্দোলনের ঠেলায় সেই নীতি থেকেও সরেছে মোদী সরকার। ২০১৬-র নভেম্বরে নোট বাতিলের পরে ফসলের দাম পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ২০১৭-র নভেম্বরে দেখা যাচ্ছে, খরিফ ফসল বাজারে আসার পরেও ১০টি প্রধান ফসলের দাম আগের বছরের থেকেও কম। সরকার ঘোষিত দামও মিলছে না। বাধ্য হয়েই এ বার ভর্তুকির কথা ভাবতে হচ্ছে কেন্দ্রকে।
হয়তো যা...
• ফসলের দামে ভর্তুকি
• একশো দিনের কাজ, গ্রাম
সড়ক, আবাস যোজনা
খাতে বাড়তি বরাদ্দ
• সেচ, ফসল বিমা, কৃষি পরিকাঠামোয় বিপুল বরাদ্দ
• কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা এক ধাক্কায় অনেকটা বাড়ানো
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy