ক্যান-বন্দি রসগোল্লার পরে এ বার টিউবে নলেন গুড়। মিলছে শীত পেরিয়ে গরমেও।
শক্তিগড়ের ল্যাংচা থেকে বর্ধমানের সীতাভোগ— বিশ্ব-বাংলা বিপণিতে হস্তশিল্পের পাশাপাশি বাঙালির নানা ঐতিহ্যশালী খাবারের বৃহত্তর বাজার তৈরির চেষ্টায় ছিল ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতর। কিন্তু শীতকালে বাঙালির খাদ্য তালিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নলেন গুড় কী ধরনের মোড়কে দীর্ঘদিন সুরক্ষিত রেখে বিক্রি করা সম্ভব, সেই পদ্ধতি থেকে গিয়েছিল অজানাই। অবশেষে দাওয়াই দিয়েছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব প্যাকেজিং (আইআইপি)। তাদের পরামর্শেই টিউব-বন্দি নলেন গুড়ের ব্যবসার নতুন সূত্র তৈরি হতে পারে বলে দাবি ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতরের।
বিশ্ব-বাংলা ব্র্যান্ড মারফত বঙ্গের ঐতিহ্যকে তুলে ধরার পরিকল্পনা নিয়েছিল ওই দফতর। যেখানে বাংলার হস্তশিল্পের পসরার সঙ্গে ঠাঁই পেয়েছে নানা ধরনের খাবারও। কিন্তু রাখা যাচ্ছিল না নলেন গুড়। একেই এই গুড় শীতকাল ছাড়া মেলে না। উপরন্তু, তরল হওয়ায় মাত্র কয়েক দিনের বেশি তা পাত্রে ধরে রাখা যায় না। সে জন্যই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে গুড়ের মোড়ক কী রকম হবে, সেই বিষয়টি। ঠিক যে ভাবে রসগোল্লা মোড়কজাত করতে উদ্যোগী হয় মিষ্টি শিল্প। কারণ বাংলার বাইরে তুমুল জনপ্রিয়তা থাকলেও, তা পাঠাতে যথাযথ মোড়ক তৈরি জরুরি ছিল।
ছোট-মাঝারি শিল্প দফতরের সচিব রাজীব সিংহ জানান, এ জন্য আলাদা করে প্রিজার্ভেটিভ (সংরক্ষণের জন্য রাসায়নিক) মেশানোর বিরোধী ছিলেন তাঁরা। এমনকী গুড় প্রক্রিয়াকরণেও তাঁদের সায় ছিল না। তাঁর কথায়, ‘‘শীতকালে যে-গুড় তৈরি হয়, সেটিই ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলাম আমরা।’’ এই শর্তে কোন ধরনের মোড়ক বা প্যাকেট দীর্ঘ মেয়াদে গুড়ের মান ধরে রাখতে পারে, ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতর তা খুঁজে বার করার দায়িত্ব দেয় আইআইপি-কে। ২০১৪-র জানুয়ারিতে গুড়ের নমুনা পাঠানো হয় তাদের। উল্লেখ্য, প্যাকেজিং শিল্পের উন্নতি ও গবেষণার জন্য কেন্দ্রীয় বাণিজ্য দফতর ও প্যাকেজিং শিল্পের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল এই আইআইপি।
আইআইপি-র বেঁধে দেওয়া মাপকাঠি মেনে টিউব ও গুড় তৈরির জন্য সার্বিক কাজের দরপত্র চেয়েছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল খাদি অ্যান্ড ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রিজ বোর্ড। সেই প্রক্রিয়ায় কৃষ্ণনগরের একটি সংস্থা নির্বাচিত হয়। তাদের থেকেই পণ্য নিচ্ছে বোর্ড। পেটেন্ট নেওয়া এই টিউবে নলেন গুড় তৈরির পর থেকে অন্তত ৯০ দিন রাখা যাবে বলে দাবি দফতরের। পাঁচটি বিশ্ব-বাংলা বিপণন কেন্দ্রের মাধ্যমে শীতের মরসুম থেকে এখনও পর্যন্ত হাজার তিনেক টিউব বিক্রি করেছে তারা।
রাজ্যের ছোট ও মাঝারি শিল্পের বিভিন্ন পণ্যের ভাল ব্যবসায়িক সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন উপদেষ্টা সংস্থা কেপিএমজি-র অন্যতম কর্তা অম্বরীশ গুপ্ত। তবে ব্যবসার স্বার্থে সেগুলিকে ক্রেতাদের কাছে আকর্ষণীয় করার জন্য কী ধরনের উদ্ভাবনী পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, তা জরুরি বলে মত তাঁর। একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, নলেন গুড়ের মতো দ্রুত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা যে-সব পণ্যের, সেগুলি বেশি দিন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করাই মূল বিষয়।
ছোট-মাঝারি শিল্প দফতর অবশ্য জানিয়েছে, বিশ্ব-বাংলা বিপণন কেন্দ্রগুলিতেই শুধু মিলবে এই টিউব-বন্দি নলেন গুড়। তবে অম্বরীশবাবুর মতে, বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে যথাযথ বিপণন কৌশল নেওয়া জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy