Advertisement
০৭ মে ২০২৪

চা পাতায় কীটনাশক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক

চা গাছে কোন কীটনাশক কতটা ব্যবহার করা যাবে, তার মাপকাঠি (প্লান্ট প্রোটেকশন কোড বা পিপিসি) আগেই বেঁধে দিয়েছে টি বোর্ড। এ বার কীটনাশক প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম ঠেকাতে চা পাতা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করছে তারা। যা চালু হয়ে যাচ্ছে আগামী মাস থেকেই।

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:২৪
Share: Save:

চা গাছে কোন কীটনাশক কতটা ব্যবহার করা যাবে, তার মাপকাঠি (প্লান্ট প্রোটেকশন কোড বা পিপিসি) আগেই বেঁধে দিয়েছে টি বোর্ড। এ বার কীটনাশক প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম ঠেকাতে চা পাতা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করছে তারা। যা চালু হয়ে যাচ্ছে আগামী মাস থেকেই।

চা পাতা প্রক্রিয়া করার যে-সমস্ত কারখানা বাইরে থেকে পাতা কেনে, মূলত তাদের জন্যই আনা হচ্ছে নতুন এই বিধি। ফলে এর আওতায় বাধ্যতামূলক ভাবে পড়ছে বটলিফ কারখানা— যাদের নিজস্ব বাগান নেই, অন্য বাগান থেকে পাতা কিনে চা তৈরি করতে হয়। এবং বিভিন্ন এস্টেট কারখানা— যাদের নিজেদেরই বাগান আছে, তবে কিছু ক্ষেত্রে চা প্রক্রিয়ার জন্য বাইরে থেকেও পাতা আনায়।

বোর্ড সূত্রে খবর, বছরে আপাতত দু’বার পাতা পরীক্ষা হবে। সেই দায়িত্ব পেয়েছে টি রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন (টিআরএ) এবং এক্সপোর্ট ইনস্পেকশন এজেন্সি (ইআইএ)। তবে এই দুইয়ের মধ্যে কোন সংস্থাটিকে পরীক্ষার জন্য বাছা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবে সংশ্লিষ্ট চা কারখানাই।

বস্তুত, এখন প্রক্রিয়া করা চা পরীক্ষার চল আছে। কিন্তু পাতা পরীক্ষা হয় না। অথচ চা গাছে কীটনাশকের অপব্যবহার নিয়ে বারবারই অভিযোগ উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। কোন কীটনাশক কতটা ব্যবহারযোগ্য, তা সরকারি ভাবেই নির্দিষ্ট করে দেওয়া সত্ত্বেও সমস্যা পুরোপুরি মেটেনি।

নয়া বিধি

• পরীক্ষা হবে বাইরের বাগান থেকে কেনা পাতা

• বছরে আপাতত দু’বার যাচাই

• খরচ বইবে কারখানা

• প্রক্রিয়া শুরু মে থেকেই

• পরীক্ষার দায়িত্বে থাকবে টিআরএ এবং ইআইএ

• কাকে দিয়ে তা করানো হবে বাছতে পারবে চা কারখানাই

ভারতে ক্ষুদ্র চা চাষির সংখ্যা লক্ষাধিক। দেশের মোট চা উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসে তাঁদের বাগান থেকে। অভিযোগের তির মূলত সেই সব ছোট বাগানের দিকেই। বলা হচ্ছে, অনেক বাগানে চা গাছে কীটনাশক ব্যবহার নিয়ে অনিয়ম হচ্ছে। এর জেরে মান খারাপ হচ্ছে পাতার।

ক্ষুদ্র চা চাষিরা বিভিন্ন বটলিফ কারখানার পাশাপাশি বড় বাগানেও তাঁদের চা পাতা পাঠান। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এই কারণে আপাতত কারখানায় অন্য বাগান থেকে আসা চা পাতার নমুনাই যাচাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টি বোর্ড। চা শিল্পমহল অবশ্য এই সব অভিযোগ মানতে নারাজ।

চা পাতা পরীক্ষার এই পরিকল্পনা গত অগস্টেই বোর্ডের পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে গৃহীত হয়। বোর্ড সূত্রের খবর, এ বার মে মাস থেকে পরীক্ষা করে দেখা হবে, পাতায় ৭টি নিষিদ্ধ কীটনাশক আছে কি না এবং অনুমোদিত ১০টির ব্যবহার নির্দিষ্ট সীমা মেনে হয়েছে কি না। চা শিল্পের একাংশের দাবি, এর জন্য বাগান থেকে পাতা তোলার ৮-১০ ঘণ্টার মধ্যে তা পরীক্ষাগারে পাঠানো দরকার।

ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল অরিজিৎ রাহার বক্তব্য, এখন সংস্থাগুলি স্বেচ্ছায় প্রক্রিয়া করা চা পরীক্ষা করায়। কারণ নিলামে সেগুলি পাঠানোর আগে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রক ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ (এফএসএসএআই)-র নিয়ম মেনে সব হয়েছে কি না, তা জানাতে হয়। অরিজিৎবাবুর দাবি, ‘‘চা পাতার পরীক্ষা চালু হলে ভালই হবে।
কারণ সহজে তা যাচাইয়ের কোনও ব্যবস্থা ছিল না।’’

প্রসঙ্গত, বাগানে গিয়ে চা পাতা পরীক্ষার জন্য টি বোর্ডের সহায়তায় কেন্দ্রীয় সংস্থা সি-ড্যাক, গোয়ার বিটস ও টিআরএ যৌথ ভাবে একটি যন্ত্র তৈরি করেছিল। টিআরএ-র সেক্রেটারি জয়দীপ ফুকন জানান, এ বার সেই যন্ত্র কাজে লাগাতে গেলে আরও বেশি সংখ্যায় তা তৈরি করতে হবে। লাগবে বিপুল অর্থ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pesticide Tea leaves
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE