Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Power Consumption

সুইচেও সঞ্চয়

বিদ্যুতের বিল দেখে মাথায় হাত? হবে না কেন? ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরেও ঘুরছে পাখা। বিরাম নেই এসি-র। এলইডি থাকতেও ভরসা বাল্‌বে! অভ্যেস বদলান। লিখছেন পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুতের খরচ যে শুধু পরিবারের সদস্য সংখ্যা কিংবা যন্ত্রপাতির উপরে নির্ভর করে এমন নয়। অনেকটাই নির্ভর করে জীবনযাপনের উপরে।

— প্রতীকী ছবি

— প্রতীকী ছবি

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৯ ০৫:০৬
Share: Save:

আজকাল বিদ্যুতের বিল দেখে কেমন যেন হিসেব মেলাতে পারেন না বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী। ৭০০ বর্গ ফুটের ফ্ল্যাট। তিন জনের পরিবার। বিদ্যুৎচালিত সামগ্রী বলতে এইচডি টেলিভিশন, ডাবল ডোর ফ্রিজ, দেড় টনের একটি এসি, গিজার এবং মেয়ের ল্যাপটপ। তিনটি মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়া হয়। অথচ বছরখানেক আগেও যা বিল আসত, এখন তার তুলনায় সারা বছরে বিল বেশি আসছে তার তুলনায় ৫-৬ হাজার টাকা বেশি।

এই সমস্যা প্রায় ঘরে-ঘরে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুতের খরচ যে শুধু পরিবারের সদস্য সংখ্যা কিংবা যন্ত্রপাতির উপরে নির্ভর করে এমন নয়। অনেকটাই নির্ভর করে জীবনযাপনের উপরে। বিদ্যুতের মাসুলও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চেষ্টা থাকলে এবং সচেতন হলে এই খরচ খানিকটা হলেও বাঁচানো সম্ভব।

কী ভাবে চড়ে বিল

প্রযুক্তির যুগ। রোজই নাগালের মধ্যে আসছে নতুন যন্ত্র। বিদ্যুৎ বাঁচাতে গিয়ে তো সেগুলির ব্যবহার বন্ধ করা যায় না! উচিতও নয়। আসল সমস্যাটা হয় সেগুলির অতিরিক্ত ব্যবহারে। আর অবশ্যই সরাসরি বিদ্যুতের অপচয়ে। এর মধ্যে রয়েছে—

পরিবারের সদস্য সংখ্যার তুলনায় বিদ্যুৎচালিত পণ্যের অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার। ফাঁকা ঘরে আলো-পাখা চলতে থাকা অনেকেরই পুরনো বদভ্যাস। যান্ত্রিক ত্রুটিযুক্ত এবং বহু পুরনো এসি, ফ্রিজ-সহ বিভিন্ন যন্ত্রের ব্যবহার। এই ব্যাপারগুলি দেখতে-শুনতে ছোটখাটো। কিন্তু একটি পরিবারে এমন সমস্ত অপচয় যখন একসঙ্গে চলতে থাকে, তখনই হয় মুশকিল। অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যুতের ইউনিটের সংখ্যা মাসুলের নিচু তলা পার করে ফেলে। বিলের অঙ্ক যায় বেড়ে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ব্যবহারের পরেও বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রের সুইচ অন করা রয়েছে। যেমন, জল গরম হয়ে যাওয়ার পরেও চালানো থাকে গিজার। রিমোটে টিভি কিংবা এসি বন্ধ করা হলেও মূল সুইচ অনই থাকে।

পথের খোঁজ

কোনও কোনও সময়ে আমরা দেখতে পাই, দিনের বেলায় রাস্তার আলো জ্বলছে। সমালোচনা করি পুরসভার। বলি, সাধারণ মানুষের টাকার এ কী অপচয়! তা হলে নিজের বাড়ির ক্ষেত্রে গড়িমসি কেন?

সাধারণ বালবের বদলে এলইডি বাল্‌ব ব্যবহারের চেষ্টা করুন। ডিমার সুইচের ব্যবহার বাড়ান। তাতে ঘরের আলো বাড়ানো কমানো যায়। কমে বিদ্যুতের খরচ। মশারি ব্যবহার করার সময়ে মশা তাড়ানোর যন্ত্রগুলি বন্ধ করে দিন। সারারাত সেগুলি জ্বালানো সব সময় শরীরের পক্ষেও কিন্তু ভাল নয়। সপ্তাহে এক দিন ওয়াশিং মেশিনের ব্যবহার বন্ধ রাখার চেষ্টা করুন। একটু আগেই যা বলছিলাম। টিভি না দেখলে, মোবাইল বা ল্যাপটপে চার্জ দেওয়া হয়ে গেলে সুইচ বন্ধ করার কথা সব সময়ে মাথায় রাখতে হবে। আলো-পাখা, রান্নাঘরের এক্সহস্ট ফ্যানের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার।

আর একটি বিষয়

এসি যাঁরা ব্যবহার করেন, গরমে তাঁদের বিদ্যুতের বিল গুনতে হয় বেশি। কয়েকটি ব্যাপারে নজর দিলে কিন্তু এই খাতেও কিছুটা খরচ বাঁচে—

চেষ্টা করুন ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এসি চালাতে। সারা দিন সরাসরি রোদ পড়ে, এমন জায়গায় এসি না বসানোই ভাল। রাতে ৫-৬ ঘণ্টা এসি চালান। ঘর ঠান্ডা হয়ে যাবে। তার পরে কিন্তু ফ্যানই যথেষ্ট। নিয়মিত এসির সার্ভিসিং করান। পরিষ্কার করান এয়ার ফিল্টারও। দিনের বেলা এসি চললে রোদের তাপ যাতে ঘরে না ঢোকে। তার জন্য জানলার পর্দা টেনে রাখতে হবে।

শাঁখের করাত

আরও কয়েকটি কারণে বিদ্যুতের বিল চড়তে পারে। কিন্তু সেগুলি আটকানোর প্রাথমিক খরচও কম নয়। তাই চাইলেই সব সময়ে তা সম্ভব না-ও হতে পারে। তবে এর একটি তালিকা মাথায় থাকা ভাল। হাতে টাকা থাকলে চেষ্টা করতে পারেন। যেমন—

যান্ত্রিক ত্রুটিযুক্ত ও পুরনো যন্ত্রপাতি বদলানো। ‘স্টার’ চিহ্ন দেখে ভোগ্যপণ্য কেনা। সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানো। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের সাধারণ নিয়মগুলি মানলে কতটা বাঁচানো যায় খরচ? বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ধরা যাক একটি বাড়িতে প্রতি দিন ৬০ ওয়াটের ১০টি সাধারণ বাল্‌ব ছ’ঘণ্টা জ্বলে। তাতে মাসে মোটামুটি ১০৮ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হয়। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৭ টাকা ধরলে খরচ হবে কমপক্ষে ৭৫৬ টাকা। সেখানে ৬০ ওয়াটের বদলে ১০ ওয়াটের এলইডি বাল্‌ব লাগালে কাজ একই হবে। কিন্তু খরচ কমে দাঁড়াবে ১২৬ টাকা মতো। আবার সাধারণ মানের একটি দেড় টনের এসি প্রতি দিন এক ঘণ্টা করে কম চালালে গড়পরতা ২ ইউনিট করে বিদ্যুৎ বাঁচে। অর্থাৎ মাসে ৬০ ইউনিট। এ ক্ষেত্রেও ৭ টাকা ইউনিট হিসেবে ৪২০ টাকা বাঁচানো সম্ভব।

অস্ত্র সৌর বিদ্যুৎ

সারা বিশ্বে বিভিন্ন দেশ চাইছে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে। ভারতও এর বাইরে নয়। সৌর বিদ্যুৎকে গ্রিডে দেওয়ার প্রকল্প এনেছে কেন্দ্র। চাইছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ুক। এই ব্যবস্থা প্রাথমিক ভাবে কিছুটা খরচসাপেক্ষ হলেও, ভবিষ্যতের হিসেব কষলে দেখা যায় সাশ্রয়ের অঙ্ক কম নয়। তাই সংক্ষেপে দু’চার কথা।

সূর্যালোকের শক্তিকে দু’ভাবে কাজে লাগানো যায়। এক, সৌর বিদ্যুৎশক্তি বা ফোটোভোলটাইক সিস্টেম। দুই, সৌর তাপশক্তি বা সোলার থার্মাল এনার্জি। সৌর বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, প্রথম ক্ষেত্রে সূর্যের আলোকে বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তরিত করে কাজে লাগানো যায়। এর সাহায্যে আলো জ্বলে, জল তোলার পাম্প চালানো যায়। আবার সৌর তাপশক্তিকে সরাসরি ব্যবহার করে চালানো যায় সোলার ওয়াটার হিটার, সোলার কুকার।

খরচের খতিয়ান

বাড়িতে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য প্রাথমিক ভাবে যা প্রয়োজন তা হল সোলার প্যানেল ও ব্যাটারি। সূর্যের আলোয় সেটিকে চার্জ দিতে হবে। আর রাতে সেই ব্যাটারি প্রয়োজন মতো পরিষেবা দেবে। ১২ ওয়াটের তিন-চারটি এলইডি বাল্‌ব, দু’টি পাখা চালানোর ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারি ও সোলার সেলের প্যানেলের খরচ পড়বে আনুমানিক ২০,০০০-২২,০০০ টাকা। এই ব্যবস্থায় দিনে ৪-৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পরিষেবা পাওয়া সম্ভব। কিছু নিয়ম মেনে চললে বিদ্যুৎ খরচ বাঁচিয়ে ওই টাকা পাঁচ-ছ’বছরে তোলা কঠিন নয়। প্রয়োজনে জল তোলার জন্য কম ক্ষমতা সম্পন্ন সোলার পাম্পও এই ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করা যায়। সে ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে খরচ হতে পারে আনুমানিক ৩০,০০০ টাকা। ওই পাম্পে ১০ ফুট গভীরতা থেকে ৫০ ফুট উপর পর্যন্ত দিনে ২,০০০-২,৫০০ লিটার জল তোলা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Power Consumption Electric bill Electric expense
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE