অবশেষে বানতলা বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের (সেজ) জন্যও আলাদা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ (বানতলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ অথরিটি) গড়ছে রাজ্য। অনেকটা নবদিগন্ত-র ধাঁচে। সরকারি সূত্রে খবর, দীর্ঘ দিন ঝুলে থাকার পর এই পরিকল্পনা এ বার সিলমোহর পেতে চলেছে রাজ্য সরকারের।
সোমবার নবান্নে এ নিয়ে আলোচনায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান, মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, শিল্পসচিব চঞ্চলমল বাচাওয়াত, বানতলা চর্মনগরী ও তথ্যপ্রযুক্তি পার্কের নির্মাণ সংস্থার কর্ণধার জগমোহন ডালমিয়া, ট্যানারি আসোসিয়েশনের প্রতিনিধি ও তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের পদস্থ কর্তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, বৈঠকে বানতলার পরিকাঠামো ও দূষণ সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই কথা হয়েছে বানতলা ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ অথরিটি গড়ার।
দূষণ সমস্যা সামাল দিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বর্জ্য ব্যবস্থা ঢেলে সাজারও। সে ক্ষেত্রে পরিকল্পনা, নতুন দু’টি বর্জ্য শোধনাগার তৈরি করা হবে। যার ৮০% টাকা রাজ্য জোগাবে। আর বাকি ২০% চর্ম ব্যবসায়ীরা।
সেই ২০০৯ সাল থেকেই বানতলা চর্মনগরী ও তার লাগোয়া তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের সেজের জন্য এই ‘অথরিটি’ গড়ার বিষয়ে ভাবনাচিন্তার শুরু। মূল উদ্দেশ্য, ওই অঞ্চলের বিভিন্ন কাজে সমন্বয় আনতে একটি প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ তৈরি করা। নবদিগন্ত-র ধাঁচে।
রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের প্রাণ কেন্দ্র সল্টলেক সেক্টর ফাইভের ৪৩০ একর এলাকা দেখাশোনার জন্য তৈরি হয়েছে নবদিগন্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল অথরিটি। ওই অঞ্চলের রাস্তাঘাট, আলো, জল থেকে শুরু করে কর্মীদের নিরাপত্তা সব বিষয়েই সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কাজ করে যারা। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পমহলের মতে, যে কোনও সমস্যা জানানো যায় এই ধরনের মঞ্চে। সব কিছুর চটজলদি সমাধান হাতের মুঠোয় না এলেও, অন্তত সম্ভব হয় আলোচনার মাধ্যমে পথ খোঁজা। এই একই সুবিধা বানতলায় বিনিয়োগকারী সংস্থাগুলির হাতে তুলে দিতেই অথরিটি গড়ার পরিকল্পনা করে রাজ্য। কিন্তু তখন লোকসভা নির্বাচন ‘এসে যাওয়ায়’ ধামাচাপা পড়ে যায় বিষয়টি।
২০১১ সালে তৃণমূল-সরকার এ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করলে, তা ফের আটকে যায় সরকারেরই অন্দরমহলের মতানৈক্যে। এক দিকে, পুর দফতরের দাবি ছিল, এ বিষয়ে রাজ্য উদ্যোগী হলে, তার ঘাড়ে চাপবে বাড়তি আর্থিক বোঝা। পার পেয়ে যাবে পরিকাঠামো গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কম দামে জমি পাওয়া নির্মাণ সংস্থাও। আবার উল্টো দিকে শিল্প দফতরের যুক্তি ছিল, এই অথরিটি গড়লে উপকৃত হবে সেখানকার শিল্পমহল। তাই তা তৈরি করা জরুরি। ফলে এ রকম নানা টানাপড়েনে আলাদা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ বানতলার ভাগ্যে এখনও জোটেনি।
গত ডিসেম্বরে সচিব স্তরের বৈঠকে অথরিটি গড়ার সমাধান সূত্রকে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই বৈঠকে ছিলেন শিল্পসচিব, পুরসচিব বি পি গোপালিকা, তথ্যপ্রযুক্তি সচিব সতীশ তিওয়ারি ও শিল্প অধিকর্তা রূপেন চৌধুরী। ছিলেন ডালমিয়াও। কিন্তু বানতলায় লগ্নি করা তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের ক্ষোভ, এর পরেও অথরিটি তৈরি হয়নি। নিরাপত্তা, পরিকাঠামো ইত্যাদি তো দূরস্থান, তাড়া করে চলেছে দূষণের ভূতও। যার জেরে প্রকল্প শেষ করেও তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। যেমন, ধনসেরি ও ফোরাম প্রজেক্টসের দু’টি বাড়ি তৈরি হলেও, তা ভাড়া নিতে এগিয়ে আসছে না কোনও তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। তাদের ক্ষোভ, বাজার দরে জমি কিনেও সেক্টর ফাইভ বা রাজারহাটের তুলনায় এখনও যেন ‘দুয়োরানি’ হয়েই থেকে গিয়েছে বানতলা।
প্রায় ছ’বছর ধরে ফাইলবন্দি অথরিটি গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেই ছবি সত্যিই পাল্টায় কি না, সকলের চোখ এখন সে দিকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy