চন্দ্রশেখর ঘোষ।—ফাইল চিত্র।
শুরুতেই প্রায় সাতশো শাখা খুলে ব্যাঙ্কিং ব্যবসায় পথ চলা শুরুর পরিকল্পনা করছে বন্ধন ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস।
শুক্রবার সংস্থার চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর চন্দ্রশেখর ঘোষ বলেন, “ব্যাঙ্কিং ব্যবসায় শুরুতেই প্রায় ৭০০টি শাখা খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। যার অধিকাংশই হবে আনকোরা। তবে আমাদের ক্ষুদ্রঋণের (মাইক্রোফিনান্স) ব্যবসার জন্য ইতিমধ্যেই যে ২,০১৬টি শাখা রয়েছে, তার কয়েকটিকেও ব্যাঙ্কের শাখায় রূপান্তরিত করার পরিকল্পনা আছে।” নতুন ব্যাঙ্কের অধিকাংশ শাখা গ্রামাঞ্চলে হবে বলেও জানান তিনি।
সম্প্রতি অম্বানী-বিড়লা-বজাজদের ‘টপকে’ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘর থেকে ব্যাঙ্ক খোলার ছাড়পত্র (লাইসেন্স) ছিনিয়ে এনেছে বন্ধন। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, নিয়ম মেনে সব ঠিকঠাক এগোলে, বছর দেড়েকের মধ্যেই ব্যাঙ্ক হতে চলেছে চন্দ্রশেখরবাবুর হাতে গড়া ওই ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা। শীর্ষ ব্যাঙ্কের ঘোষণা অনুযায়ী, ২৫ সংস্থার মধ্যে কড়া প্রতিযোগিতায় লাইসেন্স জুটেছিল মাত্র দু’টির কপালে। তারই একটি বন্ধন। যার সদর দফতরও হতে চলেছে কলকাতায়। এই উপলক্ষে এ দিন চন্দ্রশেখরবাবুকে সংবর্ধনা জানাতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বণিকসভা ভারত চেম্বার অব কমার্স। তারই শেষে নিজেদের ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু প্রসঙ্গে ওই কথা জানিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে যে লাইসেন্স বন্ধন পেয়েছে, তার অন্যতম শর্তই হল, ছাড়পত্র পাওয়ার দেড় বছরের মধ্যে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু করতে হবে তাদের।
বর্তমানে দেশের বৃহত্তম ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা বন্ধন। চন্দ্রশেখরবাবুর দাবি, দেশে ক্ষুদ্রঋণের বাজারের ২৫ শতাংশই তাঁদের দখলে। তাই ওই ব্যবসার তিল তিল করে গড়ে তোলা পরিকাঠামোকে ব্যাঙ্কিং পরিষেবাতেও কাজে লাগাতে চান তিনি। সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ক্ষুদ্রঋণ ব্যবসায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা ৫৫ লক্ষ। তাই চন্দ্রশেখরবাবুও বলছেন, “ওই গ্রাহকদের পরিষেবা দেওয়া বন্ধ করতে পারব না। তাই অন্তত সাতশোর মতো শাখা খোলা জরুরি। ব্যাঙ্ক চালু হলে, ওই গ্রাহকদের আরও উন্নত পরিষেবা দিতে পারব আমরা।”
শিল্পপতি ও বিত্তবানদের ঋণ দেওয়াকে পাখির চোখ করে যে তাঁরা ব্যাঙ্কিং ব্যবসায় আসছেন না, এ দিন তা ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন চন্দ্রশেখরবাবু। তাঁর বক্তব্য, “যাঁরা এখনও ব্যাঙ্কিং পরিষেবার আওতার বাইরে, তাঁদের সেখানে আনাই প্রথম লক্ষ্য। তবে ব্যবসার যে মডেল তৈরি করব, তা ব্যবসায়িক ভাবেও লাভজনক হবে।” মূলত যে অঙ্কে ভরসা রেখে তিনি এই নতুন ব্যবসায় সাফল্যের ইঁট গাঁথতে চান, তা হল, ব্যবসার বহর বাড়িয়ে পরিচালন খরচ কমানো। এই কাজটুকু ঠিকঠাক করতে পারলেই তাঁদের ব্যাঙ্কিং ব্যবসা লাভজনক হবে বলে বিশ্বাস তাঁর।
তেরো বছর গ্রামে-গ্রামে ক্ষুদ্রঋণ পরিষেবা দিয়েছে বন্ধন। এ ক্ষেত্রে তাদের ব্যবসা ছড়িয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ২২টি রাজ্যে। যে ব্যবসার ৫০ শতাংশই এ রাজ্যে। তাই গ্রামকে হাতের তালুর মতো চেনার দাবি করে চন্দ্রশেখরবাবু বলেন, “গ্রামে মানুষের আয় বাড়ছে। ছোট-ছোট প্রকল্পে ঋণের চাহিদা সেখানে প্রচুর। এখন আমরা যে ক্ষুদ্রঋণ বণ্টন করি, তার গড় অঙ্ক প্রায় ১৯ হাজার টাকা। তাই এই ছোট-ছোট প্রকল্পে ধার জুগিয়েই প্রথমে গ্রামে ব্যাঙ্কিং ব্যবসা বাড়াতে চাই।” গ্রামের মানুষের পাশাপাশি অতি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি সংস্থাকে ঋণ দেওয়াকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি। আর আমানত সংগ্রহের বিষয়ে তাঁর প্রধান ভরসা গ্রামের মানুষেরা।
কিন্তু গ্রামের গরীব মানুষ ব্যাঙ্ক থেকে ধার নেওয়ার পর তা শুধতে পারবেন তো? চন্দ্রশেখরবাবুর দাবি, “হয়তো এই আশঙ্কার কারণেই গ্রামে সে ভাবে ঋণ দিতে চায় না ব্যাঙ্কগুলি। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা অন্য। বন্ধনের ক্ষুদ্রঋণ ব্যবসায় ৯৯.৫% টাকাই ফেরত পাই। ব্যাঙ্ক চালু হলে, আরও কম সুদে ধার দেওয়া যাবে। তাতে টাকা ফেরত পাওয়ার রেকর্ড আরও ভাল হবে বলেই আমার বিশ্বাস।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy